আলোচিত খবরখেলাভিন্ন খবর
সবচেয়ে দীর্ঘ জাতীয় সঙ্গীত বাংলাদেশের!
শুরুতেই বলে নেওয়া ভালো, এখানে শুধুই ক্রিকেট খেলুড়ে ১০টি দেশের জাতীয় সঙ্গীত নিয়ে আলোচনা করা হবে। আর ম্যাচ শুরুর আগে জাতীয় সঙ্গীতের যে অংশটুকু বাজানো হয় শুধু তার ভিত্তিতেই তুলনা করা হবে, পুরোটা নয়। তো চলুন, খুঁজে বের করি সত্যিই বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত সবচেয়ে দীর্ঘ কি না?
১০) ইংল্যান্ড
ক্রিকেট খেলাটির জনক বলা হয় ব্রিটিশদের। কিন্তু সবচেয়ে কম দৈর্ঘ্যের জাতীয় সঙ্গীতের রেকর্ড তাদেরই দখলে। ক্রিকেট খেলুড়ে দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে পুরনো (১৭৪৫ সালে) এই জাতীয় সঙ্গীত ৪০ সেকেন্ড বাজানো হয়। তবে ক্রিকেট মাঠে যুক্তরাজ্যের জাতীয় সঙ্গীত ‘গড সেভ দ্য কুইন’ গাওয়া হলেও জাতি হিসেবে ইংলিশদের জাতীয় সঙ্গীত আবার আলাদা।
৯) ভারত
মাত্র ৫২ সেকেন্ড সময় নিয়ে সবচেয়ে কম দৈর্ঘ্যের জাতীয় সঙ্গীতের তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে আছে ভারত। দেশটির সবচেয়ে বেশি প্রচলিত ভাষা হিন্দি হলেও জাতীয় সঙ্গীত কিন্তু বাংলায় কম্পোজ করা। রবীন্দ্রনাথের লেখা ‘জনগণমন-অধিনায়ক জয় হে’ গানটি ছাড়াও বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় রচিত বন্দেমাতরম গানটিও সমমর্যাদায় জাতীয় সঙ্গীতের স্বীকৃতি লাভ করে। তবে মাঠে রবীন্দ্রনাথের লেখা গানটিই গাওয়া হয়।
৮) অস্ট্রেলিয়া
অস্ট্রেলিয়ার জাতীয় সঙ্গীত ‘অ্যাডভান্স অস্ট্রেলিয়া ফেয়ার’ মোট ৫৫ সেকেন্ড সময় বাজানো হয়। তাদের জাতীয় সঙ্গীত অনেক উৎসাহব্যঞ্জক শব্দে সাজানো। অনেকে মনে করেন, পাঁচবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের শিরোপা জয়ে তাদের জাতীয় সঙ্গীতেরও ভূমিকা আছে।
৭) নিউজিল্যান্ড
অন্যান্য ব্রিটিশ কলোনির মতোই কিউইরাও ক্রিকেট মাঠে ‘গড সেইভ দ্য কুইন’ গানটি জাতীয় সঙ্গীত হিসেবে গাইতো। কিন্তু ১৯৭৬ সাল থেকে এই গানের স্থলাভিষিক্ত হয় ‘গড ডিফেন্ড নিউজিল্যান্ড’ গানটি। এটি তাদের দ্বিতীয় জাতীয় সঙ্গীত।
দ্বিতীয় জাতীয় সঙ্গীতই এখন ক্রিকেট ম্যাচের পূর্বে বাজানো হয়, যার দৈর্ঘ্য এক মিনিটের চেয়ে সামান্য বেশি। এই সঙ্গীতের লিরিকে আবার ইংরেজির পাশাপাশি দেশটির আদিবাসীদের ভাষা মাওরি’র অনেক শব্দও ব্যবহার করা হয়েছে।
৬) জিম্বাবুয়ে
নিউজিল্যান্ডের জাতীয় সঙ্গীতের প্রায় কাছাকাছি দৈর্ঘ্য নিয়ে ষষ্ঠ স্থানে আছে জিম্বাবুয়ের জাতীয় সঙ্গীত “লিফট হাই জিম্বাবুয়ে’স ব্যানার”। যদিও এই দৈর্ঘ্য নির্ভর করে গানটির ভার্সনের উপর। বিভিন্ন উপলক্ষে শোনা, এনডেবেলা এবং ইংরেজি এই তিন ভাষায় গাওয়া হয় জিম্বাবুয়ের জাতীয় সঙ্গীত।
৫) পাকিস্তান
ক্রিকেট ম্যাচের আগে পাকিস্তানের জাতীয় সঙ্গীত ‘কওমী তারানা’ প্রায় দেড় মিনিট বাজানো হয়। ভারত ও পাকিস্তানের মুখোমুখি হওয়ার দিনে দু’দেশের জাতীয় সঙ্গীত একপ্রকার উৎসবের জন্ম দেয়।
৪) ওয়েস্ট ইন্ডিজ
অন্য যেকোনো দেশের চেয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজের জাতীয় (!) সঙ্গীত একেবারেই আলাদা। কারণ, ওয়েস্ট ইন্ডিজ কোনো দেশ নয়। ক্রিকেটের স্বার্থে কয়েকটি দেশের জোট মাত্র। ফলে আদতে ক্রিকেট মাঠে তারা কোনো জাতীয় সঙ্গীত গায় না। বরং এর বদলে উইন্ডিজ ক্রিকেট কর্তারা বার্বাডোজ, গায়ানা, জ্যামাইকা, ত্রিনিদাদ অ্যান্ড টোব্যাকো, লিওয়ার্ড দ্বীপপুঞ্জ এবং উইন্ডওয়ার্ড দ্বিপপুঞ্জের জন্য ১ মিনিট ৪৫ সেকেন্ড দৈর্ঘ্যের একটি গান কম্পোজ করেছে। ‘র্যালি রাউন্ড দ্য ওয়েস্ট ইন্ডিজ’ শিরোনামের গানটি শুধুই ক্রিকেটীয় একতার জন্য, ভাবা যায়!
৩) দক্ষিণ আফ্রিকা
এই দেশটির জাতীয় সঙ্গীত সবচেয়ে বিচিত্র। দেশটির ভিন্ন ভিন্ন অংশের প্রতিনিধিত্ব করার জন্য জাতীয় সঙ্গীত পাঁচটি ভাষায় কম্পোজ করা হয়েছে। তাদের জাতীয় সঙ্গীত ‘গড ব্লেস আফ্রিকা’ এমনকি মহাদেশের অন্য দেশগুলোর জন্য অনুপ্রেরণামূলক। প্রোটিয়াদের জাতীয় সঙ্গীতের দৈর্ঘ্য প্রায় ২ মিনিট। দুটি ভিন্ন জাতীয় সঙ্গীত এক করে কম্পোজ করা এই সঙ্গীতের মাঝখান থেকে মেলোডিও আলাদা, শেষও হয় ভিন্নভাবে।
২) শ্রীলঙ্কা
জাতীয় সঙ্গীতের দৈর্ঘ্যের বিচারে দ্বিতীয় স্থানে আছে এশিয়ান লায়ন্সরা। অবাক করা বিষয় হলো, লঙ্কানদের জাতীয় সঙ্গীত ‘শ্রীলঙ্কা মাথা’র রচয়িতা আনান্দা সামারাকুন শান্তি নিকেতনে কবি গুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ছাত্র ছিলেন। অনেকেই মনে করেন, শ্রীলঙ্কার জাতীয় সঙ্গীত লেখায় রবীন্দ্রনাথের ভূমিকা ছিল।
প্রায় আড়াই মিনিট দৈর্ঘ্যের জাতীয় সঙ্গীতের লিরিক ও সুর অনেকটাই রবীন্দ্র ধারার। এমনকি তাদের জাতীয় সঙ্গীতের ‘উচ্চালা জালাধি তারাঙ্গা’ অংশটুকু ভারতের জাতীয় সঙ্গীতের অংশ! মজার বিষয় হলো, এই জাতীয় সঙ্গীতের অফিসিয়াল ভাষা ২টি- সিংহলি ও তামিল। এই তামিল আবার ভারতের দক্ষিণের একটি প্রচলিত ভাষা।
১) বাংলাদেশ
অবশেষে আমরা আসল জায়গায় এসে হাজির হলাম। হ্যাঁ, বাংলা টাইগাররাই সবার শীর্ষে। খেলার মাঠে নামার আগে প্রায় ২ মিনিট ৪৫ সেকেন্ড সময় বাজানো হয় বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত ‘আমার সোনার বাংলা’। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা এই সঙ্গীত টাইগারদের আত্মবিশ্বাসে বলিয়ান হওয়ার শক্তি জোগায়।