আজকের সিলেটসুনামগঞ্জ
সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়কে জিম্মি যাত্রীরা : বিআরটিসির বাস চালু রাখার দাবি
সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়কে বাস মালিক-শ্রমিকদের নৈরাজ্যে ও বিআরটিসি বাস চলাচল বন্ধের দাবিতে তাদের ডাকা ধর্মঘটের প্রতিবাদে ফুঁসে উঠেছেন সচেতন মহলসহ যাত্রী সাধারণ।
প্রতিদিনই পালিত হচ্ছে কর্মসূচি। সিলেট বিভাগের বিভিন্ন স্থানে পালিত এসব কর্মসূচি থেকে বিআরটিসির বাস বন্ধের দাবির প্রতিবাদ ও ২৪ জুন থেকে আহূত অনির্দিষ্টকালের পরিবহন ধর্মঘট প্রত্যাহারের দাবি জানানো হচ্ছে।
সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়কে পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান বিআরটিসি বাস সার্ভিসের উদ্বোধন করেন। এরপর থেকে পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা আন্দোলন নামে এবং অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘটের হুমকি দেয়।
তাদের দাবি, বিআরটিসি বাস চালু করায় ওই সড়ক দিয়ে চলাচলকারী তাদের বাস যাত্রীহীন অবস্থার মুখে পড়েছে। পরে সিলেট বিভাগের চার জেলা ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া সড়কে চলাচল করা পরিবহন মালিক ও শ্রমিকরা যৌথ সভা করে ২৪ জুন ধর্মঘটের ডাক দেয়।
পরিবহন শ্রমিক ও মালিক সংগঠনের এমন ঘোষণায় সিলেট ও সুনামগঞ্জজুড়ে তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়।
সচেতন মহলসহ যাত্রীসাধারণ ও পেশাজীবী সংগঠন ধর্মঘটকে অযৌক্তিক আখ্যা দিয়ে প্রতিবাদী কর্মসূচি অব্যাহত রেখেছেন।
এরই ধারাবাহিকতায় শুক্রবার সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে যাত্রীদের জিম্মি করে রাখার প্রতিবাদে ‘জিম্মি মুক্তি সমাবেশ’ অনুষ্ঠিত।
পরিবেশ ও হাওর উন্নয়ন সংস্থার সমাবেশে পরিবহন নৈরাজ্যের প্রতিবাদে মুখে কালো কাপড় বেঁধে এ সমাবেশ করা হয়।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, সিলেট-সুনামগঞ্জ রুটের বাস মালিক ও শ্রমিকরা যাত্রী সাধারণকে জিম্মি করে রেখেছেন। পরিবেশ ও হাওর উন্নয়ন সংস্থার সভাপতি কাসমির রেজার সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক পীযূষ পুরকায়স্থ টিটুর সঞ্চালনায় সভায় বক্তব্য রাখেন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ব্যারিস্টার মো. আরশ আলী, সিলেট সরকারি মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক হায়াতুল ইসলাম আখঞ্জি, জগন্নাথপুর সমিতির সভাপতি অধ্যক্ষ সৈয়দ মুহাদ্দিস আহমদ, সাংবাদিক আল আজাদ, সিলেটের এডিশনাল পিপি অ্যাডভোকেট শামসুল ইসলাম, সিলেট জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট হুসেন আহমদ, বৃহত্তর ময়মনসিংহ সমিতি-সিলেটের সভাপতি ডা. ছফির উদ্দিন ও সাধারণ সম্পাদক তৌফিকুল আলম বাবলু, সম্মিলিত নাট্য পরিষদ সিলেটের সভাপতি মিশফাক আহমদ মিশু, তাহিরপুর সমিতি সিলেটের সভাপতি অ্যাডভোকেট আলী হায়দার, মধ্যনগর সমিতি-সিলেটের সভাপতি আমিনুল ইসলাম প্রমুখ।
মঙ্গলবার দুপুরে সিলেট-সুনামগঞ্জ মহাসড়ক যাত্রী কল্যাণ পরিষদের উদ্যোগে গণপদযাত্রা শেষে সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরী ও ডিআইজি কামরুল আহসান পিপিএমের কাছে স্মারকলিপি দেয়া হয়।
গোবিন্দগঞ্জ পয়েন্টে সিলেট-সুনামগঞ্জ নিরাপদ সড়ক স্বার্থ সংরক্ষণ কমিটি প্রতিবাদ সমাবেশ করে। সিলেট নগরীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে সিলেটে অবস্থানরত সুনামগঞ্জবাসীর উদ্যোগে ‘গণ অনাস্থা প্রাচীর’ কর্মসূচি পালন করা হয়।
এ কর্মসূচিতে একাÍ হন সিলেট নগরীর বাসিন্দাসহ ১৫টি পেশাজীবী ও নাগরিক সংগঠন। বাস মালিক ও শ্রমিকদের নৈরাজ্যের প্রতিবাদে সুনামগঞ্জে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে মুক্তিযোদ্ধা জগৎজ্যোতি পাঠাগারে।
সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সিলেট বিভাগীয় সাধারণ সম্পাদক সজীব আলী ধর্মঘটের কর্মসূচিকে যৌক্তিক দাবি করে বলেন, ২০০৪ সালের দিকে পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সঙ্গে আঞ্চলিক পরিবহন কমিটি (আরটিসি) এক বৈঠকে বলা হয়েছিল যে বিআরটিসির বাস সার্ভিস চালু করলে এক ডিপো থেকে আরেক ডিপোতে চলাচল করবে। সুনামগঞ্জে কোনো ডিপো না থাকার পরও তড়িঘড়ি করে চালু করায় তারা প্রতিবাদ করছেন। বিআরটিসি সিলেট ডিপোর ব্যবস্থাপক জুলফিকার আলী বলেন, ধর্মঘট জনচাহিদার বিপক্ষে
সুনামগঞ্জ জেলা বাস শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক নুরুল হক জানান, যাত্রীদের সুবিধার জন্য আমরা গেটলক সার্ভিস চালু করেছি। একটি চক্রের সিদ্ধান্তে হঠাৎ আমাদের ক্ষতিগ্রস্ত করতে বিআরটিসি বাস নামানো হয়েছে।
আজ (শুক্রবার) রাতে সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসকের সঙ্গে বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। আশা করি বৈঠকে একটি সুন্দর সমাধান আসবে। সুনামগঞ্জ যাত্রীসংহতির সমন্বয়ক শামস শামীম বলেন, সুনামগঞ্জে পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের অন্যায্য ও আইনবিরোধী কর্মকাণ্ড রাষ্ট্র-সরকার-জনতাকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে প্রতিরোধ করতে হবে।
সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক আবদুল আহাদ বলেন, জনগণের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়কে বাস সার্ভিস চালু করা হয়েছে। আশা করি পরিবহন মালিক-শ্রমিকরাও জনগণের দাবির প্রতি সম্মান দেখাবেন।
সূত্র-যুগান্তর