চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছরে এখন পর্যন্ত দেশে প্রবাসীদের পাঠানো বৈদেশিক মুদ্রা বা রেমিট্যান্স ১৬শ’ কোটি ডলার ছাড়িয়েছে। যা বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স আহরণ। বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রানীতি বিভাগের হালনাগাদ প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিগত কয়েক বছরে ব্যাংকিং চ্যানেল বহির্ভূত অবৈধভাবে মোবাইল ব্যাংকিং হুন্ডির মাধ্যমে রেমিট্যান্স পাঠানোর প্রবণতা বেড়ে যায়। ফলে নেতিবাচক প্রভাব পরে প্রবাসী আয়ে। তাই মোবাইলে হুন্ডি বন্ধ ও ব্যাংকিং চ্যানেল রেমিট্যান্স পাঠাতে উৎসাহিত করতে নানা উদ্যোগ নেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। যার ফলে রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়ছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ২১ জুন পর্যন্ত ব্যাংকিং চ্যানেলে প্রবাসীরা ১ হাজার ৬০৩ কোটি ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন। প্রবাসী আয়ের এ পরিমাণ অতীতের যেকোনো বছরের চেয়ে বেশি। চলতি অর্থবছর শেষ হতে আরও কয়েকদিন বাকি রয়েছে। রেমিট্যান্স আহরণের প্রবাহ ধারাবহিক থাকলে ২০১৮-১৯ অর্থবছর শেষে রেমিট্যান্স সাড়ে ১৬শ’ কোটি ডলারে দাঁড়াবে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য থেকে আরও জানা যায়, ২০১৮ সালে ব্যাংকিং চ্যানেলে এক হাজার ৫৫৭ কোটি ডলার দেশে পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। যা আগের অর্থবছরের তুলনায় ২০৪ কোটি ডলার বা প্রায় ১৫ শতাংশ বেশি। ২০১৭ সালে এসেছিল এক হাজার ৩৫৩ কোটি ডলার। এর আগের বছর ২০১৬ সালে ছিল এক হাজার ৩৬১ কোটি ডলার। ২০১৫ সালে এসেছে এক হাজার ৫৩১ কোটি ডলার। আর ২০১৪ সালে রেমিটেন্সের পরিমাণ ছিল এক হাজার ৪৯২ কোটি ডলার।
এদিকে ঈদকে সামনে রেখে গত মে মাসে রেকর্ড পরিমাণ রেমিট্যান্স পাঠান প্রবাসীরা। গত মে মাসে ব্যাংকিং চ্যানেলে ১৭৫ কোটি ৫৭ লাখ ডলারের সমপরিমাণ অর্থ দেশে পঠিয়েছিলেন। যা একক মাস হিসেবে এ যাবৎকালে সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স আহরণ।
রেমিটেন্সের তথ্য পর্যালোচনায় দেখা গেছে, গত চার বছরের মধ্যে দেশে ২০১৪-১৫ অর্থবছরে সর্বোচ্চ রেমিটেন্স এসেছে। এ সময় রেমিটেন্স এসেছিল এক হাজার ৫৩১ কোটি ৬৯ লাখ মার্কিন ডলার। গত ২০১৬-১৭ অর্থবছরে প্রবাসীদের রেমিটেন্স পাঠানোর পরিমাণ ছিল এক হাজার ২৭৬ কোটি ৯৪ লাখ মার্কিন ডলার। এছাড়া সর্বশেষ ২০১৭-১৮ অর্থবছরের এক হাজার ৪৯৮ কোটি ডলার রেমিটেন্স পাঠিয়েছিল প্রবাসীরা। যা তার আগের অর্থবছরের চেয়ে ১৭ দশমিক ৩ শতাংশ বেশি।
আসন্ন ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাবে রেমিট্যান্স পাঠানোর ওপর প্রবাসী বাংলাদেশিদের ২ শতাংশ হারে প্রণোদনা দেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ এক হাজার টাকা রেমিট্যান্স পাঠালে প্রবাসীরা প্রণোদনা হিসেবে ২০ টাকা পাবেন।
প্রস্তাবিত বাজেট বক্তৃতায় বলা হয়, রেমিট্যান্স প্রেরণে বর্ধিত ব্যয় লাঘব এবং বৈধ পথে অর্থ প্রেরণে উৎসাহিত করার জন্য প্রবাসী বাংলাদেশিদের প্রণোদনা হিসেবে চলতি অর্থবছর ৩ হাজার ৬০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে।