শীর্ষ খবর
সরকারের ৭২৭৫০ কোটি টাকার প্রণোদনা ঘোষনা
করোনাভাইরাসের কারণে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে জনসাধারণের আর্থ-সামাজিক অবস্থা যেন থেমে না যায় সে লক্ষ্যে ৭২ হাজার ৭৫০ কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেইসাথে সম্ভাব্য বিরূপ প্রভাব উত্তরণে তাৎক্ষণিক, স্বল্প এবং দীর্ঘ-মেয়াদী এ তিন পর্যায়ে ৪টি কার্যক্রম নিয়ে কর্মপরিকল্পনা ঘোষণা করেছেন তিনি।
গণভবন থেকে করোনাভাইরাস সংকটে দেশের সম্ভাব্য অর্থনৈতিক প্রভাব ও উত্তরণের কর্মপরিকল্পনা ঘোষণা কালে প্রধানমন্ত্রী এসব কর্মপরিকল্পনা ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী। আজ ৫ এপ্রিল, রবিবার সকাল ১০টায় ভার্চুয়াল এ সংবাদ সম্মেলন শুরু হয়।
এসময় শেখ হাসিনা বলেন, ‘দেশের স্বাধীনতা অর্জনের পর থেকে দেশের সার্বিক উন্নয়নে আওয়ামী লীগ কাজ করে যাচ্ছে। আওয়ামী লীগের লক্ষ্য দেশের আর্থ সামাজিক উন্নয়ন। বর্তমানে বৈশ্বিক মহামারীতে পুরো পৃথিবী আক্রান্ত। চীনে করোনাভাইরাস দেখা দেয়া পর পরই বাংলাদেশ বিষয়টিকে গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করেছে। এ বিষয়ে যথাযথ পদক্ষেপ নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে আইইডিসিআর।
করোনারোধে সরকার তিন স্তরের কার্যক্রম বাস্তবায়ন শুরু করেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সামাজিক সুরক্ষা নিশ্চিতে নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য বিনামূল্যে খাদ্য বিতরণসহ ১০ টাকা কেজি দর চাল বিতরণ, নগদ অর্থ প্রদানসহ বয়স্ক ও বিধবা ভাতার ব্যবস্থা করা হবে।’
এসময় তিনি জানান, তাৎক্ষণিক, স্বল্প এবং দীর্ঘ-মেয়াদী এ তিন পর্যায়ে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ৪টি কার্যক্রম নিয়ে কর্মপরিকল্পনা গ্রহ করেছে সরকার।
প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত ৪টি কার্যক্রম হলো-
সরকারি ব্যয় বৃদ্ধি করা : সরকরি ব্যয়ের ক্ষেত্রে কর্মসৃজনকে মূলত প্রাধান্য দেওয়া হবে। বিদেশ ভ্রমণ এবং বিলাসী ব্যয় নিরুৎসাহিত করা হবে। আমাদের ঋণের স্থিতি-জিডিপি’র অনুপাত অত্যন্ত কম (৩৪ শতাংশ) বিধায় অধিকতর সরকারি ব্যয় সামষ্টিক অর্থনীতির ওপর কোনো চাপ সৃষ্টি করবে না।
আর্থিক সহায়তার প্যাকেজ : ব্যাংকিং ব্যবস্থার মাধ্যমে স্বল্প সুদে ঋণ সুবিধা প্রবর্তন করা হবে। অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড পুনরুজ্জীবিত করা, শ্রমিক-কর্মচারীদের কাজে বহাল রাখা এবং উদ্যোক্তাদের প্রতিযোগিতার সক্ষমতা অক্ষুন্ন রাখাই হলো আর্থিক সহায়তা প্যাকেজের মূল উদ্দেশ্য।
সামাজিক সুরক্ষা কার্যক্রমের আওতা বৃদ্ধি : দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাসকারী জনগণ, দিনমজুর এবং অপ্রাতিষ্ঠানিক কাজে নিয়োজিত জনসাধারণের মৌলিক চাহিদা পূরণে বিদ্যমান সামাজিক সুরক্ষা কার্যক্রমের আওতা বাড়ানো।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কার্যক্রমগুলো হলো- বিনামূল্যে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ, ১০ টাকা কেজি দরে চাউল বিক্রয়, লক্ষ্যভিত্তিক জনগোষ্ঠির মাঝে নগদ অর্থ বিতরণ, ‘বয়স্ক ভাতা’এবং ‘বিধবা ও স্বামী নিগৃহীতা মহিলাদের জন্য ভাতা- কর্মসূচির আওতায় সর্বাধিক দারিদ্র্যপ্রবণ ১০০টি উপজেলায় শতভাগে উন্নীত করা এবং জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে গৃহীত অন্যতম কার্যক্রম গৃহহীন মানুষদের জন্য গৃহ নির্মাণ কর্মসূচি দ্রুত বাস্তবায়ন করা ইত্যাদি।
মুদ্রা সরবরাহ বৃদ্ধি করা : অর্থনীতির বিরূপ প্রভাব উত্তরণে মুদ্রা সরবরাহ বৃদ্ধি করা অত্যন্ত জরুরি। বাংলাদেশ ব্যাংক ইতোমধ্যে সিআরআর এবং রেপোর হার কমিয়ে মুদ্রা সরবরাহ বৃদ্ধির ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে, যা আগামীতেও প্রয়োজন অনুযায়ী অব্যাহত থাকবে। তবে এ ক্ষেত্রে আমাদের লক্ষ্য থাকবে যেন মুদ্রা সরবরাহজনিত কারণে মুদ্রাস্ফীতি না ঘটে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দেশের অর্থনীতিতে করোনার প্রভাব মোকাবিলায় ৭২ হাজার ৭৫০ কোটি টাকা প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করছি। এটা বাস্তবায়ন হলে দেশের মানুষের আর্থ সামাজিক গতিশীলতা অব্যাহত থাকবে। অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াবে।’
তিনি বলেন, ‘আশা করছি, এই প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণার মাধ্যমে সবাই আশ্বস্ত হবেন। সবাই এ প্রণোদনা থেকে উপকৃত হবেন। কাউকে চাকরি থেকে বিতাড়িত করা হবে না।’
ঘোষিত এ প্রণোদনায় ক্ষতিগ্রস্ত শিল্প প্রতিষ্ঠানকে ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল হিসেবে ৯ শতাংশ সুদে ৩০ হাজার কোটি টাকার ঋণ সুবিধা দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে শিল্প প্রতিষ্ঠান মালিক ৪.৫ শতাংশ ভর্তুকি এবং সরকার ৪.৫ শতাংশ ভতুর্কি দেয়া হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোকে তাদের নিজস্ব তহবিল থেকে ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল বাবদ ঋণ দেবে। এই ঋণ সুবিধায় সুদের হার হবে ৯ শতাংশ। এর অর্ধেক অর্থাৎ ৪.৫ শতাংশ ভর্তুকি হিসেবে সরকার ব্যাংকে প্রদান করবে। ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প সহ মাঝারি শিল্প প্রতিষ্ঠানে ২০ হাজার কোটি টাকার ঋণ সুবিধা প্রণয়ন করা হবে। এখানেও ঋণের হার ৯ শতাংশ। প্রদত্ত ঋণের ৫ শতাংশ সুদ সরকার ব্যাংকে দেবে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি ইতিপূর্বে রপ্তানিমুখী শিল্প প্রতিষ্ঠানের শ্রমিক কর্মচারীদের বেতন ভাতা পরিশোধ করার জন্য ৫ হাজার কোটি টাকার একটি আপদকালীন প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছিলাম। এই প্রণোদনাসহ মোট আর্থিক সহায়তা প্যাকেজের পরিমাণ হবে ৭২ হাজার ৭৫০ কোটি টাকা। যা জিডিপির ২.৫২ শতাংশ।’
সংবাদ সম্মেলনটি বাংলাদেশ টেলিভিশন, বাংলাদেশ বেতারের পাশাপাশি সরাসরি সম্প্রচার করছে বেসরকারি টিভি চ্যানেল ও রেডিও চ্যানেলগুলো।