শীর্ষ খবর
মশার জন্য কার্যালয়ে যেতে ভয় পাচ্ছেন অর্থমন্ত্রী
চিকুনগুনিয়া ও ডেঙ্গু জ্বরে ভোগার পর রীতিমত মশা নিয়ে আতঙ্কে আছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এ জন্য পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে তার কার্যালয়ে যেতেও ভয় পাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন তিনি। বৃহস্পতিবার (১৮ জুলাই) সচিবালয়ে তার নিজ দফতরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এসব কথা বলেন অর্থমন্ত্রী।
এখন থেকে সচিবালয়ে অফিস করবেন কিনা জানতে চাইলে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘অফিস দুই জায়গায় করবো (পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে অর্থমন্ত্রীর কার্যালয়ে ও অর্থ মন্ত্রণালয়ে)। কিন্তু ওখানে (পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে অর্থমন্ত্রীর কার্যালয়) বেশি মশা। এ পর্যন্ত দুবার কামড় দিয়েছে একবার চিকুনগুনিয়া ও আবার ডেঙ্গু…এটা কী কথা হলো নাকি! আমি এ জন্য ভয়ে ওখানে যাচ্ছি না। আজকে সচিবালয়ে আসতে এক ঘণ্টা দুই মিনিট লেগেছে।’
জানা গেছে, অর্থমন্ত্রী হিসেবে বাজেট পেশের আগে মারাত্মক ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হন তিনি। ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট পেশের ঠিক দুদিন আগে গত ১১ জুন তাকে রাজধানীর অ্যাপোলো হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে ১৩ জুন তিনি বাজেট পেশ শুরু করলেও তা শেষ করতে পারেননি। পরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হাল ধরেন। এ জন্য প্রধানমন্ত্রী সরকারি দলের বাহবা পেলেও বিএনপির এমপিরা সমালোচনা করেন।
এরপর ভয়াবহ অসুস্থতার কথা গত ২৯ জুন সংসদে বর্ণনা করেন অর্থমন্ত্রী। নিজের সুস্থ হওয়ার গতি অনেক শ্লথ জানিয়ে মুস্তফা কামাল বলেন, ‘সেদিন (১৩ জুন) সংসদ শুরুর আগে যখন সংসদে প্রবেশ করি তখন থেকে পরবর্তী ৭-৮ মিনিট আমি সম্পূর্ণভাবে ব্ল্যাঙ্ক ছিলাম। আমার কোনো কিছুই মনে পড়ে না।’
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘গত ১৩ জুন প্রস্তাবিত বাজেট উত্থাপন করি। কিন্তু সেদিনটি ছিল আমার জীবনের চরম কষ্টের দিন। কারণ এর তিনদিন আগে অর্থাৎ ১০ জুন ডেঙ্গু জ্বরে ভয়ানকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ি এবং হাসপাতালে ভর্তি হই। এ অসুস্থতা নিয়েই আমি গত ১৩ জুন সংসদে আসি। আমার বিশ্বাস ছিল, আমি প্রস্তাবিত বাজেটটি উত্থাপন করতে পারব। কিন্তু আমি যা ভেবেছিলাম বাস্তবতা ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন। অধিবেশন শুরুর আগে যখন সংসদে প্রবেশ করি তখন থেকে পরবর্তী ৭-৮ মিনিট আমি সম্পূর্ণভাবে ব্ল্যাঙ্ক ছিলাম।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমার কোনো কিছুই মনে পড়ে না। আমি কোনো রকমে গিয়ে আমার আসনে বসলাম। তখন আমার কেবল মনে হচ্ছিল প্রবল এক ভূমিকম্প পৃথিবীতে আঘাত হেনেছে। সেই ভূমিকম্পের কারণেই যেন ক্ষণে ক্ষণে আমার কম্পন হচ্ছিল। আমার মনে হচ্ছিল আমি সিট থেকে পড়ে যাচ্ছি। আমি তখন মনে মনে দোয়া পড়তে শুরু করলাম। মানুষ মানুষের জন্য, মানুষ সৃষ্টির জন্য। আমি ভাবতে শুরু করলাম আমার আশপাশের বন্ধুবান্ধব কেউ না কেউ ধরবেন, যেন আমি ছিটকে পড়ে আহত না হই। অতি অল্প সময়ের মধ্যেই আমার বন্ধুবান্ধব সব ছুটে আসলেন।’
তিনি বলেন, ‘কিছুক্ষণ পর ধীরে ধীরে আমি স্বাভাবিক হই। মনে হলো আমার আর সমস্যা হবে না। আমি তখনই ২৫-৩০ মিনিটের মতো প্রস্তাবিত বাজেটের কিছু অংশ পড়লাম। তখন আরেকটি নতুন সমস্যা দেখা দিল। সেই সমস্যাটি হলো আমার হাতে কোনো শক্তি ছিল না। আঙুলে কোনো শক্তি ছিল না। বাজেটের পাতাগুলো উল্টাতে পারছিলাম না। তখন সংসদ সদস্য মতিয়া চৌধুরী এগিয়ে এলেন। তিনি আমার বাজেটের প্রতিটি পাতা উল্টে দিলেন। কিন্তু বেশিক্ষণ সেটাও রইল না। একটু পরই আমি চোখে কিছু দেখছিলাম না। তখন আর সময় না নিয়ে আমি স্পিকারের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীকে আন্তরিকভাবে অনুরোধ করি। প্রধানমন্ত্রী নিজেও অসুস্থ ছিলেন। তারপরও আন্তরিকভাবে ও সুন্দরভাবে বাজেটটি পড়লেন।’
উল্লেখ্য, সাধারণত অর্থমন্ত্রী অধিকাংশ সময়ই সচিবালয়ে অফিস করেন। কিন্তু আ হ ম মুস্তফা কামাল অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব নেয়ার পর অধিকাংশ সময়ই আগারগাঁওয়ের পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে অর্থমন্ত্রীর কার্যালয়ে অফিস করেন। এ জন্যই মূলত তিনি কোথায় অফিস করবেন তা জানতে চান সাংবাদিকরা।