আজকের সিলেট

কাজের আশায় সৌদিতে গিয়ে নির্যাতনের শিকার জৈন্তাপুরের তরুণী : পাচারকারী স্বামী-স্ত্রীর বিরুদ্ধে মামলা

আজকের সিলেট প্রতিবেদক: সৌদি আরবে নির্যাতনের শিকার হয়ে দেশে ফিরেছেন সিলেটের জৈন্তাপুরের এক তরুণী।

কাজ দেয়ার কথা বলে ওই তরুণীকে সৌদি আরবে পাঠানো হয়। কিন্তু সেখানে তার ওপর চালানো হয় অমানবিক নির্যাতন। দেশে ফেরার পর ওই তরুণী মানবপাচারকারী চক্রের সদস্য স্বামী-স্ত্রীসহ একটি রিক্রুটিং এজেন্সির মালিকের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন।

পরে পুলিশ মানবপাচারকারী চক্রের সদস্য স্বামী জসিম উদ্দিন ও তার স্ত্রী দিলারা বেগমকে গ্রেফতার করে। বর্তমানে তারা রিমান্ডে রয়েছে। পলাতক রয়েছেন সিলেটের মারুফ রিক্রুটিং এজেন্সির মালিক ওয়াহিদুজ্জামান।

গত বুধবার জৈন্তাপুর থানায় দায়ের করা মামলার এজাহারে নির্যাতনের শিকার ওই তরুণী উল্লেখ করেন- সৌদি আরবে অবস্থানকালে ৭ মাসে তিনটি বাসা বদল করেন। কু-প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় দফায় দফায় তাকে নির্যাতন করা হয়। নির্যাতনে কাহিল হয়ে পড়েছিলন তিনি। কিন্তু হঠাৎ একদিন পালান বন্দিদশা থেকে। এরপর সেফ হাউসে ছিলেন এক মাসের উপরে। সেখান থেকে গত ১২ সেপ্টেম্বর দেশে আসার সুযোগ পান তিনি। চলে আসেন নিজ বাড়ি জৈন্তাপুরে। দেশে ফিরেই তিনি মানবপাচারকারী দালালদের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ করেন।

জৈন্তাপুর মডেল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শ্যামল বণিক জানান, গ্রেফতারের পর দিলারা ও জসিমকে আদালতের মাধ্যমে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তিনদিনের রিমান্ডে নেয়া হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদে তারা অপরাধ স্বীকার করে অনেক তথ্যই দিয়েছেন। সেগুলো পুলিশ যাচাই-বাছাই করছে। আগামীকাল রোববার বিকেলে তাদের রিমান্ড শেষে আদালতে পাঠানো হবে।

মামলা সূত্রে জানা যায়, ওই তরুণীর বাড়ি জৈন্তাপুর উপজেলার ডৌডিক গ্রামে। অভাব-অনটনের সংসার তাদের। ৯ ভাই-বোনের সংসারে অসুস্থ বাবা। অনাহারে- অর্ধাহারে চলে তাদের সংসার। চলতি বছরের শুরুতে সিলেট নগরের টিলাগড়ের এক আত্মীয়ের বাসায় আসেন ওই তরুণী। সেখান থেকে টিলাগড় পয়েন্টে আসার পথে তার সঙ্গে দেখা হয় অপরিচিত দিলারা বেগমের। কথায় কথায় তাদের পরিচয় হয়। এ সময় দিলারা বেগম ১৯ বছরের ওই তরুণীকে সৌদি আরবে যাওয়ার প্রস্তাব দেন। তার প্রস্তাবের বিষয়টি নিয়ে ওই তরুণী আলোচনা করেন পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে। পরবর্তীতে দিলারা বেগমও তাদের বাড়ি যান। গিয়ে বলেন টাকা লাগবে না, শুধু পাসপোর্ট করতে হবে। এজন্য সে ৫ হাজার টাকা নেন। দিলারার স্বামী জসিম উদ্দিনও এই প্রক্রিয়ায় অংশ নেন। তিনিও স্ত্রীর সঙ্গে ওই তরুণীর বিদেশ যাওয়ার প্রসেসিং করেন।

মামলার এজাহারে ওই তরুণী উল্লেখ করেছেন- সিলেটের মারূফ রিক্রুটিং এজেন্সির মালিক ওয়াহিদুজ্জামানের মাধ্যমে তাকে বিদেশ পাঠানোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। ওই এজেন্সির লোকজন সব কাজ চূড়ান্ত করে তাকে চলতি বছরের ২৬ জানুয়ারি বাড়ি থেকে নিয়ে যান। কয়েক দিন ঢাকায় অবস্থান করার পর ২ ফেব্রুয়ারি ওই তরুণীকে সৌদি আরবে পাঠানো হয়।

বিদেশ যাওয়ার পর বিমানবন্দর থেকে এজেন্সির লোকজন তাকে একটি বাসায় নিয়ে যায়। ওই বাসার মালিকসহ তার ছেলে ওই তরুণীর সঙ্গে খারাপ আচরণ শুরু করে। তারা শারীরিক নির্যাতন শুরু করে। একপর্যায় তারা বলে- টাকা দিয়ে আমাকে কিনে এনেছে, তারা যা খুশি তাই করতে পারব।

এদিকে তাদের নির্যাতনে অতীষ্ঠ হয়ে ওঠেন ওই তরুণী। একপর্যায়ে তিনি অনুনয় শুরু করেন। পরে তাকে ওই বাসার মালিক অন্য বাসায় দিয়ে আসেন। সেখানেও একই অবস্থায় তার ওপর নির্যাতন চলে। কয়েক মাস সেখানে রাখার পর আরও একটি বাসায় পাঠানো হয়। ওই বাসাতে তাকে মারধর করা হয়। এতে কাহিল হয়ে পড়েন তিনি। নির্যাতনে প্রায় অসুস্থ হয়ে পড়েন। কিন্তু কারও কাছে বলার সুযোগ নেই। সব নীরবে সয়ে যান। ওই বাসাতে থাকার সময় গত জুলাই মাসে সুযোগ বুঝে একদিন পালান তিনি। রাস্তায় পুলিশ তাকে আটক করে নিয়ে যায় দূতাবাসে। সেখান থেকে ওই তরুণীকে পাঠানো হয় সৌদি সরকারের সেফ হাউসে।

ওই তরুণী জানান, সেফ হাউসে যাওয়ার পর তিনি তার মতো শত শত নারীকে দেখতে পান। তাদের সঙ্গে একই আচরণ করা হয়েছে। তারাও পালিয়ে ধরা পড়ে এই সেফ হাউসে চলে এসেছে। কিন্তু কবে দেশে পাঠানো হবে সেটি তারা জানেন না। এ কারণে প্রায় সময় সেফ হাউসে থাকা নারীরা ক্ষোভ প্রকাশ করতেন। দ্রুত দেশে পাঠানোর দাবি তুলেন তারা। অবশেষে ১২ সেপ্টেম্বর দেশে ফিরেন তিনি।

আরও সংবাদ

Close