প্রবাস

অবিলম্বে বিয়ানীবাজার ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট ইউকে’র কার্যক্রম বন্ধের নির্দেশ

যুক্তরাজ্য প্রবাসী বিয়ানীবাজারবাসির উদ্যোগে ১৯৯৯ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় বিয়ানীবাজার ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট ইউকে। ট্রাস্টিদের কোনো অনুমোদন ছাড়াই ২০১৬ সংগঠনটির নাম পরিবর্তন করে লিমিটেড কোম্পানি করে ফেলা হয়। প্রকৃত কোনো নির্বাচন ছাড়াই গঠন করা হয় কমিটি। এখন এই কমিটিকে অবৈধ ঘোষণার পাশাপাশি বিয়ানীবাজার ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট ইউকে লিমিটেডকে অবৈধ বলে ঘোষণা করেছে সংগঠনের ট্রাস্টিবৃন্দ।
গত ৫ নভেম্বর মঙ্গলবার পূর্ব লন্ডনের ৮৫ বিগল্যান্ড স্ট্রিটের কেয়ার হাউজ কমিউনিটি সেন্টারে অনুষ্ঠিত এক বিশেষ সাধারণ সভায় সর্বসম্মতিক্রমে এসব সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সভায় শতাধিক ট্রাস্টি উপস্থিত ছিলেন।
সাধারণ সভায় বলা হয়, ট্রাস্টিদের অনুমোদন না নিয়ে সম্পূর্ণ অবৈধভাবে ট্রাস্টের নাম পরিবর্তন করে লিমিটেড কোম্পানি করা হয়েছে। কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে কোনো সাংবিধানিক বিধিবিধান মানা হয়নি। বর্তমান অবৈধ কমিটি ২০১৬ সাল থেকে সংগঠনের প্রকৃত কোনো সাধারণ সভা কিংবা আর্থিক হিসাব উপস্থাপন করেনি। বিয়ানীবাজারে গরিবদের জন্য গৃহনির্মান প্রকল্পে স্বজনপ্রীতি, দুর্ণীতি এবং আর্থিক অনিয়মের প্রমাণ পেয়েছেন ট্রাস্টিরা। সভায় গৃহনির্মান প্রকল্পের দুর্নীতি নিয়ে একটি প্রমাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়। এছাড়া, বিয়ানীবাজারের একজন অহসায় রোগী আলমগীর হোসেনের জন্য যুক্তরাজ্য থেকে তহবিল সংগ্রহ করা হলেও সেই টাকা ওই রোগীকে দেয়া হয়নি। কিন্তু চেকের বড় একটি পোস্টার নিয়ে তারা ঠিকই ছবি তুলে প্রচার করে।
সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী- বর্তমান কমিটি বিয়ানীবাজার ওয়েলফেয়ার ট্রাস্টের নাম ও লগো ব্যবহার করতে পারবে না। এই কমিটিকে সংগঠনের নামে সকল প্রকার কার‌্যক্রম পরিচালনা থেকে বিরত থাকতে হবে। সংগঠনের তহবিল ব্যবহার করতে পারবে না। সংগঠনের সকল-প্রকার তহবিল ও কার‌্যক্রমের দায়-দায়িত্ব সিনিয়র ট্রাস্টিবৃন্দের কাছে বুঝিয়ে দিতে হবে। সভায় বিয়ানী বাজার ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট ইউকের কার‌্যক্রম পুনরুদ্ধারের জন্য অবিলম্বে ৭ সদস্যের একটি এডহক কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত অনুমোদন দেয়া হয়।
বিশেষ সাধারণ সভায় সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সিনিয়র ট্রাস্টি আলহাজ শামস উদ্দিন খান। সভা পরিচালনা করেন আরেক সিনিয়র ট্রাস্টি মাতাব চৌধুরী। তিনি সাধারণ সভায় সিদ্ধান্তগুলো উপস্থাপন করেন। এসব সিদ্ধান্ত উপস্থিত শতাধিক ট্রাস্টির সর্বসম্মক্রমে পাশ হয়।
সভায় লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ২০১৬ সালে বিয়ানীবাজার ওয়েলফেয়ার ট্রাষ্ট ইউকে’র নির্বাচনকে কেন্দ্র করে কিছু সাংবিধানিক সমস্যা দেখা দেয়। কারণ ওই বছরের ৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনকে সামনে রেখে সংগঠনের তৎকালীন নেতৃবৃন্দ নির্বাচন কমিশনের কাছে একটি ভিন্ন সংবিধান উপস্থাপন করেন, যার সঙ্গে ট্রাস্টের প্রকৃত সংবিধানের অনেক কিছুর মিল নেই। এই জটিলতার কারণে নির্বাচনের জন্য গঠিত নির্বাচন কমিশন ওই নির্বাচন পরিচালনা করতে অপারগতা জানায়। এরপর ওই বছরের ১৪ ফেব্রুয়ারি পূর্ব লন্ডনের ব্রাডি আর্ট সেন্টারে অনুষ্ঠিত এজিএম-এ সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত হয় যে, সিনিয়র ট্রাস্টি আলহাজ্ব শাসছ উদ্দিন খানের নেতৃত্বে গঠিত কমিটি সৃষ্ট সমস্যার সমাধান করবে এবং এ জন্য সংগঠনের সকল কাগজ-পত্র শামস উদ্দিন খানকে বুঝিয়ে দেবে ট্রাস্টের তৎকালিন কমিটি। কিন্তু শাসছ উদ্দিন খানের হাতে কোনো কিছুই বুঝিয়ে দেয়নি তাঁরা। বরং দীর্ঘ ২২ মাস পর ২০১৮ সালের ২৯ এপ্রিল লন্ডন মুসলিম সেন্টারে নিজের পছন্দের লোকদের নিয়ে একটি সভা ডাকেন তৎকালিন সাধারন সম্পাদক দেলওয়ার হোসেন। বিতর্কিত ঐ সভায় সংগঠনের পুরো রূপ বদলে দেয়া হয়। যারা ৫০০ পাউন্ড দিয়ে বিয়ানীবাজার ওয়েলফেয়ার ট্রাষ্ট ইউকে’র ট্রাস্টি হয়েছেন, তাদেরকে ট্রাস্টি থেকে মেম্বারে রূপান্তর করা হয়। ট্রাস্টের মালিক হিসাবে মাত্র ৩ জনকে রাখা হয়। বাকী সকল ট্রাস্টিদের মেম্বার ঘোষণা করা হয়। ওই সভাতেই নিজেদের পছন্দমত ঘোষণা করা হয় নতুন কমিটি। ওই কমিটির প্রেসিডেন্ট হন দেলোয়ার হোসেন নিজেই।
মাতাব চৌধুরী বলেন, ব্যক্তিগত জীবনে আমরা নানা কাজে ব্যস্ত থাকি বলে অনেকেই এসব নিয়ে মাথা ঘামাইনি। কিন্তু পরবর্তিতে এই অবৈধ কমিটির নানা অনিয়মের খবর সামনে আসতে থাকে। যার মধ্যে গুরুতর আর্থিক অনিয়মের অভিযোগও আছে। বর্তমান কমিটির কিছু লোক সংগঠনের স্বার্থে এসব অনিয়মের বিষয়ে সরব হন। এসবের প্রতিবাদে সংগঠনে আরেকটি পক্ষ সরব হয়। উভয়পক্ষের মুখোমুখি অবস্থানে বিষয়টি আইনী প্রক্রিয়ায় গড়ায়। যেখানে বর্তমান অবৈধ কমিটির পক্ষের আইনজীবী স্বীকার করেন যে, বিয়ানীবাজার ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট ইউকের ট্রাস্টিদের অনুমতি না নিয়ে সংগঠনের নাম বদল করা হয়েছে এবং কোম্পানি হিসেবে নিবন্ধন করা হয়েছে- যা অবৈধ। বিষয়টি ট্রাস্টিদের সঙ্গে সমঝোতার মাধ্যমে সমাধানে তাদের আইনজীবী পরামর্শ দেয়।
এ অবস্থায় সংগঠনের সুনাম এবং তহবিল সুরক্ষার জন্য বেশ কয়েকজন সিনিয়র ট্রাস্টি নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনার পর সমস্যা সমাধানে উদ্যোগী হন। প্রায় ২০ জন ট্রাষ্টি সাবেক সভাপতি মুহিবুর রহমান মুহিবের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তিনি সহ বর্তমান কমিটির বেশ কয়েকজন ট্রাস্টের স্বার্থে সমস্যা সমাধানে সহযোগিতা করতে এগিয়ে আসেন।
সভায় সংগঠনের বেশ কয়েকজন সিনিয়র ট্রাস্টি জানান, তাঁরা নানাভাবে বর্তমান অবৈধ কমিটির সঙ্গে আপসে বিষয়টি মিটমাটের চেষ্টা করেছেন। কিন্তু দেলোয়ার হোসেনের নেতৃত্বে গুটিকয়েক ব্যক্তি নিজেদের দোষ স্বীকার করতে নারাজ। তাঁরা জোর করে সংগঠনের তহবিল এবং কার‌্যক্রম কুক্ষিগত করে রাখতে চায়। যে কারণে সংগঠনের সুনাম এবং তহবিল রক্ষায় বাধ্য হয়ে এই বিশেষ সাধারণ সভার আয়োজন করতে হয়েছে। কেননা ট্রাস্টিরা হচ্ছেন এই সংগঠনের প্রকৃত মালিক। সামান্য কয়েকজন লোক অবৈধভাবে জোর খাটিয়ে ট্রাস্টকে নিয়ন্ত্রণ করবে -এটা অগ্রহণযোগ্য। এই সংগঠনের সুনাম রক্ষা এবং এই সংগঠনের সুরক্ষার দায়িত্ব ট্রাস্টিবৃন্দের।
সিনিয়র ট্রাস্টি ডাঃ আলাউদ্দিন বলেন, আমি এবং আমার স্ত্রী দুজনেই এই সংগঠনের ট্রাস্টি। ভাল কাজ এবং মানুষের উপকারের জন্য এই ট্রাস্টের সঙ্গে আমরা আছি। কিন্তু ট্রাস্টের নামে যেসব দুর্নীতি এবং অনিয়ম হচ্ছে- তা কোনোভাবেই মানা যায় না।
সভায় উপস্থিত ট্রাস্টিবৃন্দ সংগঠনের সুনাম ও অবৈধ কার‌্যক্রমের জন্য দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা গ্রহণে জোর দাবি জানান।
সভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন সাবেক এমপি সেলিম উদ্দিন, দিলাল আহমদ, মারুফ চৌধুরী, আফাজ উদ্দিন, নঈম উদ্দিন রিয়াজ, শাহাব উদ্দিন চঞ্চল, ব্যরিস্টার কালাম, সলিসিটর নাসির উদ্দিন, ইসলাম উদ্দিন, সরওয়ার আহমেদ, আব্দুল করিম নাজিম, লুৎফুর রহমান সায়াদ, সাদেক খান, শাহেদ আহমদ, ইফতেখার আহমেদ শিপন ও ইকবাল হোসেন বুলবুল প্রমুখ।

আরও সংবাদ

Close