শীর্ষ খবরসুনামগঞ্জ

সুনামগঞ্জের ৬ উপজেলায় বন্যা : বন্ধ বিদ্যালয়ের পাঠদান

আজকের সিলেট প্রতিবেদক: গত কয়েকদিনের প্রবল বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে প্লাবিত হয়েছে সুনামগঞ্জের ৬ উপজেলার নিম্নাঞ্চল। বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে সবকটি নদ-নদীর পানি।

এসকল উপজেলার রাস্তাঘাট, প্রাথমিক বিদ্যালয়, হাট-বাজার তলিয়ে গেছে পানির নিচে। সুনামগঞ্জ-সাচনাবাজার, সুনামগঞ্জ-বিশ্বম্ভরপুর ও সুনামগঞ্জ-তাহি্রপুর সড়কের উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। এতে চরম ভোগাস্তিতে পড়েছেন সাধারণ মানুষ।

এর মধ্যে সুনামগঞ্জ সদর উপজেলা, বিশ্বম্ভরপুর, তাহিরপুর, ধর্মপাশা ও দোয়ারাবাজার- এ পাঁচ উপজেলায় বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে বন্যা পরিস্থিতির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। উল্লিখিত উপজেলাসমূহে হাজারও মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছে।

জেলা পাউবোসূত্রে জানা গেছে, গত তিন দিনের টানা ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে সুনামগঞ্জের প্রধান নদী সুরমা, কুশিয়ারাসহ সবকটি নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। জেলার প্রধান নদী সুরমা নদীর পানি বিপদসীমার ৫১ সেন্টিমিটারের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। গত তিন দিনের টানা ভারী বৃষ্টিপাত ও পাহাড়ি ঢলে জেলার অধিকাংশ উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে।

সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড অফিস সূত্রে জানা গেছে, গত ৩/৪ দিনের টানা বৃষ্টিপাত ও পাহাড়ি ঢলে সুনামগঞ্জের প্রধান নদী সুরমা, কুশিয়ারা, যাদুকাটা, বৌলাই, কংসসহ সবকটি নদীর পানি অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকাল ৩ টায় সুনামগঞ্জের ষোলঘর পয়েন্টে সুরমা নদীর পানি বিপদসীমার ৯৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। গত ২৪ ঘণ্টায় জেলায় ১৮৬ মি.মি. বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। তবে বৃষ্টিপাত ও ঢল অব্যাহত থাকলে বন্যা পরিস্থিতি অবনতি হতে পারে বলে জানিয়েছেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ আবু বকর সিদ্দিক ভূইয়া।

তিনি বলেন, বুধবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত সুনামগঞ্জের সুরমা নদীর পানি ৫১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। গত ২৪ ঘণ্টায় জেলায় ভারী বৃষ্টিপাত হয়েছে। এভাবে বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকলে জেলায় বন্যা হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

স্থানীয়দের দাবি, জেলার ৬ উপজেলায় অন্তত লক্ষাধিক পরিবার বন্যা কবলিত হয়েছেন। তবে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) জানিয়েছেন, জেলার ৫টি উপজেলায় ১৩ হাজার ১০০ পরিবার পানি কবলিত হয়েছে। বন্যা কবলিত হয়েছে, সদর উপজেলায় ২৯৫০ টি পরিবার, তাহিরপুরে ৪১০০ টি, জামালগঞ্জে ১৮০০ টি, বিশ্বম্ভরপুরে ১৪০০ টি ও দোয়ারাবাজারে ২৮৫০টি পরিবার। এসব পরিবারের জন্য ৩০০ মে.টন চাল, ২৫০০ প্যাকেট শুকনো খাবার ও প্রত্যেক উপজেলায় ৫০ হাজার করে টাকা দেয়া হয়েছে। পানি কবলিত প্রতি পরিবারকে ১৫ কেজি করে চাল দেয়া হচ্ছে।

এদিকে জেলার ৬টি উপজেলায় অন্তত কয়েক শতাধিক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্লাবিত হয়েছে। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা জানিয়েছেন বৃহস্পতিবার বিকাল পর্যন্ত ১৮৮ টি বিদ্যালয় প্লাবিত হয়েছে। প্লাবিত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর পাঠদান স্থগিত করা হয়েছে।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. জিল্লুর রহমান জানিয়েছেন, পাহাড়ি ঢল ও বৃষ্টিপাতের কারণে ধর্মপাশায় ৫৯টি, তাহিরপুরে ১৯টি, বিশ্বম্ভরপুরে ২৭টি, জামালগঞ্জে ৩০টি, সদরে ২২টি, দোয়ারাবাজারে ১৮ টি ও দক্ষিণ সুনামগঞ্জের ৩ টি বিদ্যালয়ে পানি প্রবেশ করেছে। এসব বিদ্যালয়ের পাঠদান স্থগিত ঘোষণা করা হয়েছে।

অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোহাম্মদ শরিফুল ইসলাম বলেন, ‘টানা বৃষ্টিপাত ও পাহাড়ি ঢলের কারণে বন্যা পরিস্থিতির দেখা দিয়েছে। অবস্থা পর্যবেক্ষণের জন্য প্রতি উপজেলায় নিয়ন্ত্রন কক্ষ খোলা হয়েছে। পরিস্থিতি মোকাবেলায় ৬টি উপজেলার জন্য ৫০ হাজার টাকা করে ৩ লক্ষ টাকা, ৩০০ মে. টন চাল এবং ২৫০০ প্যাকেট শুকনো খাবার দেয়া হয়েছে।’

আরও সংবাদ

Close