আজকের সিলেটআলোচিত খবর

জেলা থেকে মহানগরে আসার রহস্য জানালেন মাসুক : কামরানের আবেগঘন স্ট্যাটাস

মুক্তিযোদ্ধা মাসুক উদ্দিন আহমদ ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রার্থী। প্রচারণাও চালিয়েছেন এ পদের জন্য। জেলা আওয়ামী লীগের সদ্য সাবেক জ্যেষ্ঠ সহ সভাপতি ছিলেন তিনি। আর মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রার্থী ছিলেন তারই ছোট ভাই নগর শাখার সদ্য সাবেক সাধারণ সম্পাদক আসাদ উদ্দিন আহমদ।

সবাইকে অবাক করে দিয়ে ৫ ডিসেম্বর সম্মেলনে সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি করা হয় মাসুক উদ্দিন আহমদকে। কীভাবে জেলার প্রার্থী থেকে তিনি মহানগরের সভাপতি হয়ে গেলেন তা নিয়ে নেতাকর্মীদের মধ্যে চলছে নানা জল্পনা কল্পনা।

মহানগরের সভাপতির পদ পেয়ে মাসুক উদ্দিন আহমদও অনেকটা বিস্মিত। জেলার প্রার্থী থেকে মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি হওয়ার রহস্য জানালেন।

মাসুক উদ্দিন আহমদ বলেন, আমি জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রার্থী ছিলাম। সারাজীবনই জেলার রাজনীতি করেছি। জকিগঞ্জ-কানাইঘাট সংসদীয় এলাকায় রাজনীতি করেছি। তাই এবার জেলার সভাপতি হতে চেয়েছিলাম। কিন্তু সম্মেলন উপলক্ষে বৃহস্পতিবার কেন্দ্রীয় নেতারা সিলেটে এসে হঠাৎ করেই আমাকে মহানগরের সভাপতি পদে মনোনয়ন দাখিল করতে বলেন। দলীয় সভানেত্রীই এমন নির্দেশ দিয়েছেন বলে তারা জানান।

জকিগঞ্জ উপজেলা পরিষদের সাবেক এই চেয়ারম্যান বলেন, এমন প্রস্তাব পেয়ে আমি প্রথমে বিস্মিত হই। আরও কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতার সঙ্গে এ ব্যাপারে কথা বলি। তারা সকলেই জানান- নেত্রীই এমন নির্দেশ দিয়েছেন। এরপর আমার ছোট ভাই মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদ উদ্দিন আহমদের সঙ্গে পরামর্শ করি। সেও নেত্রীর নির্দেশ মেনে মহানগরের সভাপতি পদে মনোনয়ন জমা দেয়ার পরামর্শ দেয়। সকলের সঙ্গে পরামর্শ করে, একেবারে শেষ মুহূর্তে, সবাই মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার প্রায় আধঘণ্টা পর মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি পদে মনোনয়নপত্র জমা দেই। এরপর তো সভাপতি পদে আমার নাম ঘোষণা করেন দলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক জননেতা ওবায়দুল কাদের।

নতুন দায়িত্ব প্রসঙ্গে মাসুক উদ্দিন আহমদ বলেন, মহানগরের রাজনীতিতে নতুন হলেও এখানকার সকল নেতাকর্মীরাই আমাকে আন্তরিকভাবে গ্রহণ করে নিয়েছেন। গতকাল শুক্রবার ও আজ শনিবার সারাদিন কয়েক হাজার নেতাকর্মী বাসায় এসে আমাকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। যারা আসছেন তাদের অনেককেই আমি চিনি না। ফলে সবাইকেই প্রথমে জিজ্ঞেস করে নিচ্ছি- ‘আপনারা কেউ মামলার আসামি-টাসামি নেই তো?’

তিনি আরও বলেন, সবাইকে বলেছি- আমার সঙ্গে সেলফি তুলবেন না। তাতে আমাকে আরও বিপদে ফেলবেন। সেলফিবাজির রাজনীতি আমি পছন্দ করি না।

এদিকে, টানা প্রায় ১৭ বছর সিলেটে শহর ও মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব পালনকারী বদর উদ্দিন আহমদ কামরান যেন সিলেটের রাজনীতিরই মহীরুহ হয়ে ওঠেছিলেন।

কিন্তু নতুন কমিটি সকল হিসেব পাল্টে দিয়েছে। দীর্ঘদিন পর নতুন কমিটি থেকে বাদ পড়াদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আলোচনায় বদর উদ্দিন আহমদ কামরানের নাম। সবমিলিয়ে তিনি প্রায় ৩ দশক সিলেট আওয়ামী লীগকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। সিলেট আওয়ামী লীগের রাজনীতির অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে ওঠা কামরান টানা প্রায় ১৭ বছর সিলেটে শহর ও মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। তিন দফায় ছিলেন শহর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। নানা বিতর্ক সত্ত্বেও সিলেট রাজনীতির মহীরুহ হয়ে উঠেছিলেন কামরান। টানা দু’বার সিলেট সিটি নির্বাচনে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে পরাজিত হন কামরান। এরপরই সম্মেলনের মধ্যদিয়ে বাদ পড়লেন কমিটি থেকেই। বর্তমানে কেন্দ্রের সদস্য পদই কামরানের একমাত্র রাজনৈতিক পরিচয়।

সম্মেলনে মহানগর আওয়ামী লীগের কমিটিতে কামরানের স্থলাভিষিক্ত হয়েছেন মুক্তিযোদ্ধা মাসুক উদ্দিন আহমদ।

নবগঠিত জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের কমিটি অভিনন্দন ও কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বৃহস্পতিবার শনিবার (৭ ডিসেম্বর) বেলা ১টার দিকে ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টে বদর উদ্দিন আহমদ কামরান লিখেন-

”অভিনন্দন ও কৃতজ্ঞতা!!!

সিলেট জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলন সফল ও সার্থকভাবে সম্পন্ন হওয়ায় আমি গভীর কৃতজ্ঞতা জানাই আমাদের অভিভাবক, সফল রাষ্ট্র নায়ক, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভানেত্রী, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন জননেত্রী শেখ হাসিনা, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সংগ্রামী সাধারণ সম্পাদক, মাননীয় সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী জননেতা ওবায়দুল কাদের এমপি সহ পরম শ্রদ্ধেয় জাতীয় নেতৃবৃন্দ, সিলেট জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ, ওয়ার্ড, উপজেলা, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ, অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মী, শুভাকাঙ্ক্ষী, শুভানুধ্যায়ী, কর্মী, সমর্থক সহ সর্বস্তরের সম্মানিত সিলেটবাসীকে। আপনাদের আন্তরিক সহযোগিতা ও ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় একটি আড়ম্বরপূর্ণ সফল সম্মেলন আমরা সম্পন্ন করতে পেরেছি। এই সম্মেলনের মাধ্যমে সিলেট জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের নতুন সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকদের জানাই প্রাণঢালা অভিনন্দন। আমি আশা করি আপনাদের নেতৃত্বে জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের কার্যক্রম আরও বেশি বেগবান হবে। আপনারা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন জননেত্রী শেখ হাসিনার উন্নয়ন ও অগ্রগতির রাজনীতির সুফল পুণ্যভূমি সিলেটে বাস্তবায়নে কাজ করবেন, আওয়ামী লীগের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখবেন। দলের প্রয়োজনে যখনই আমাকে ডাকবেন আমি আমার পূর্ণ শক্তি নিয়ে আপনাদের পাশে থাকব।

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শের এক সৈনিক হয়ে দেশরত্ন জননেত্রী শেখ হাসিনার সুখী, সমৃদ্ধ, সুখ ও শান্তির ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তুলতে আওয়ামী লীগের কর্মী হয়ে আমৃত্যু কাজ করে যেতে চাই। আওয়ামী লীগ আমার আবেগ, আমার অস্তিত্ব। আমার সব ভালবাসা আর উচ্ছ্বাস আওয়ামী লীগ কে ঘিরে। দল ও দলের সকল স্তরের নেতা কর্মীদের প্রতি আমার হৃদয়জ শুভেচ্ছা রইল। মহান আল্লাহ পাক যেন আমার প্রাণপ্রিয় নেত্রী, বিশ্ব শান্তির অগ্রদূত, বাংলার মানুষের আশা ভরসাস্থল, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন জননেত্রী শেখ হাসিনা কে দীর্ঘায়ু দান করুন, সুস্থ রাখুন এবং উন্নত ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে ও জাতির ভাগ্যোন্নয়নে কাজ করার আরও বেশি শক্তি দান করুন। দল ও দলের নেতা কর্মীদের সাথে আমার আত্মার সম্পর্ক, আমার হৃদয়ের ভালবাসা আমার প্রিয় দলকে আর প্রিয় সিলেটকে ঘিরে। দলের সাথে সবসময় ছিলাম, এখনও আছি এবং ইন শা আল্লাহ ভবিষ্যতেও দলের প্রয়োজনে নিজের সবটুকু দিয়ে কাজ করে যেতে চাই। সকলের দীর্ঘায়ু ও সর্বাঙ্গীণ মঙ্গল কামনা করি।”

আরও সংবাদ

Close