আজকের সিলেট
এমপি মানিক ও কলিম উদ্দিন মিলনের সম্পদের খোঁজে দুদক
সুনামগঞ্জ-৫ আসনের (ছাতক-দোয়ারা) সরকারদলীয় এমপি মুহিবুর রহমান মানিক ও একই আসনের বিএনপিদলীয় সাবেক এমপি কলিম উদ্দিন আহমদ মিলন এবং তাদের স্ত্রী-সন্তানের সম্পদের অনুসন্ধান করছে দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদক। জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদের অনুসন্ধান কাজ বেশ কিছুদিন ধরেই চলছে। এ ছাড়া তাদের সঙ্গে এক কাউন্সিলরসহ আরও সাতজনের সম্পদেরও তদন্ত চলছে। সম্প্রতি সুনামগঞ্জ-১ আসনের এমপি মোয়াজ্জেম হোসেন রতনেরও অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগের তদন্ত শুরু করে দুদক। সিলেট বিভাগে অভিযুক্তদের মধ্যে সুনামগঞ্জের এমপিসহ অন্য জনপ্রতিনিধিদের সংখ্যাই বেশি বলে জানা গেছে। অবৈধ সম্পদ অনুসন্ধান প্রক্রিয়া শেষের দিকে বলে দুদক সূত্রে জানা গেছে।
গত বছরের শেষের দিকে দুদক প্রধান কার্যালয়ে আওয়ামী লীগের একাধিকবারের এমপি মানিক ও একাধিকবারের বিএনপির সাবেক এমপি মিলনসহ নয়জনের বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদসহ বিভিন্ন দুর্নীতির অভিযোগ করেন ছাতকের কয়েক ব্যক্তি। অভিযোগ আমলে নিয়ে সম্পদ অনুসন্ধানের জন্য চিঠি ইস্যু করে প্রধান কার্যালয়। দুদক সিলেট জেলা সমন্বিত কার্যালয় থেকে বিষয়টি অনুসন্ধানের জন্য গত বছরের সেপ্টেম্বরে সুনামগঞ্জ জেলা সাব-রেজিস্ট্রারকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়। চিঠির পর গত কয়েক মাসে অভিযুক্তদের কয়েকজনের কিছু সম্পদের তালিকা পাঠান জেলা সাব-রেজিস্ট্রার। তবে এখনও অনুসন্ধান শেষ হয়নি। জেলা রেজিস্ট্রার বিভিন্ন উপজেলা সদর সাব-রেজিস্ট্রারের মাধ্যমে ওইসব ব্যক্তির সম্পদ অনুসন্ধান করছেন বলে একটি সূত্র জানিয়েছে। এদিকে নতুন বছরের প্রথম দিকেই তদন্তও শেষ করতে চায় দুদক। আর সেজন্য অনুসন্ধান কাজও এগিয়ে চলছে। তবে তদন্তকারী কর্মকর্তা দুদক সিলেট জেলা সমন্বিত কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক ইসমাইল হোসেন তদন্ত শেষ না করে কিছু বলতে রাজি হননি। তিনি শুধু তদন্তের বিষয়টি স্বীকার করেছেন।
নয় অভিযুক্তের মধ্যে মুহিবুর রহমান মানিক ছাড়াও রয়েছেন তার স্ত্রী ছাতক শহরের মণ্ডলীভোগ উদয়াচল-২০০ নম্বর বাসার বাসিন্দা শামীমা ফেরদৌস লুনা ও মেয়ে নিশাত সিয়ারা অরিন। এ ছাড়া বাগবাড়ির বাসিন্দা সাবেক এমপি মিলন ছাড়াও রয়েছেন ছাতক পৌরসভার কাউন্সিলর মণ্ডলীভোগের বাসিন্দা তাপস চৌধুরী, তার স্ত্রী জ্যোতিকা চৌধুরী, ছেলে তিতাস চৌধুরী, বাগবাড়ির ঠিকাদার ও ব্যবসায়ী শাহীন চৌধুরী ও তার স্ত্রী লায়লা সুমীন। তদন্ত হওয়া এসব ব্যক্তির মধ্যে সম্পদ বেশি বর্তমান এমপি মানিকের। একাধিকবার নির্বাচিত এই সাংসদের সম্পদ বেড়েছে কয়েকগুণ। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে হলফনামায় মানিক ৩০ কোটি ৪৪ লাখ ছয় হাজার ২৬১ টাকার স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ রয়েছে বলে উল্লেখ করেন। অন্যদিকে, সাবেক এমপি মিলন তার হলফনামায় মাত্র ৯৭ লাখ ১৭ হাজার টাকার স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ রয়েছে বলে উল্লেখ করেছেন। যদিও দু’জনের সম্পদ আরও কয়েকগুণ বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে।
অভিযুক্তদের মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত এমপি মানিক। তিনি দেশে আলোচনায় আসেন ১৯৯৯ সালে। ওই বছরের ১৫ মার্চ তার ছাতকের বাসায় বোমা বিস্ম্ফোরণে আরিফ হায়দার ও বাবুল নামে দুই যুবক মারা যান। আহত হন তার মামাতো ভাই আবুল লেইছ। এরপর থেকে বিভিন্ন সময়ে আলোচনা ও সমালোচনার জন্ম দেন মানিক ও তার পরিবার। বড় ভাই মুজিবুর রহমান দুদকের মামলায় নয় বছর ধরে ‘পলাতক’ আছেন। সম্পদ গোপন করে মিথ্যা সম্পদের বিবরণী ও অসদুপায়ে অর্জিত এক কোটি ৭৪ হাজার ২৪৬ টাকা গোপন করার অপরাধে দুদক ২০০৯ সালের ১৬ এপ্রিল সিলেটের কোতোয়ালি থানায় তার বিরুদ্ধে ওই মামলা করে। ২০১০ সালের ২২ মার্চ থেকেই তিনি পলাতক রয়েছেন।
অভিযোগ প্রসঙ্গে এমপি মুহিবুর রহমান মানিকের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তার বক্তব্য মেলেনি। তবে অপর অভিযুক্ত সাবেক এমপি কলিম উদ্দিন মিলন বলেন, আমার সম্পদ যা আছে তা পরিস্কার। জ্ঞাত আয়বহির্ভূত কোনো সম্পদ আমার নেই। একাধিকবার আমার সম্পদের তদন্ত করা হয়েছে।
এদিকে কাউন্সিলর তাপস চৌধুরী ও ব্যবসায়ী শাহীন চৌধুরীর সঙ্গে একাধিক যোগাযোগ চেষ্টা করেও তাদের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
সূত্র- সমকাল