আজকের সিলেট
হরিজন সম্প্রদায়ের বলে শিশুকে স্কুলে পড়তে বাঁধা
“হরিজন সম্প্রদায় বলে আমার ছেলেটিকে স্কুলে যেতে বাঁধা দেয়া হচ্ছে। আমরাতো পরিশ্রম করে আয় করি। তবু আমাদের সাথে কেনো এমন বৈষম্য।”- এভাবেই নিজের দুঃখ প্রকাশ করলেন মৌলভীবাজারের কুলাউড়া পৌর শহরের হরিজন সম্প্রদায়ের মনা বাসপর।
মা-বাবার ইচ্ছে ছিলো- ছেলে পড়াশোনা করে সমাজে প্রতিষ্ঠিত হবে, যাতে নিজেদের মতো সমাজে তিরস্কার আর অবহেলায় দিন কাটাতে না হয়। সেই লক্ষ্যে নিজেদের পরিশ্রমের অর্থ দিয়ে ছেলেকে একটি বেসরকারি কিন্ডারগার্টেনের প্রথম শ্রেণিতে ভর্তি করেছিলেন। বিদ্যালয়ের শর্তানুযায়ী ড্রেস, বই ও ব্যাগসহ আনুসাঙ্গিক সবকিছু জোগাড় করেছিলেন দরিদ্র এই দম্পতি।
কিন্তু ওই বিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থীর অভিভাবকরা আপত্তি জানিয়েছেন। তাদের আপত্তি, ওই শিশু ’অচ্ছুত’ হরিজন সম্প্রদায়ের। হরিজন পরিবারের শিশুর সাথে তাদের সন্তানকে পড়াতে আপত্তি এই অভিভাবকদের।
ঘটনাটি ঘটেছে কুলাউড়া শিবির এলাকার অগ্রদূত চাইল্ড কেয়ার হোমস্ নামে একটি বিদ্যালয়ে।
পরে স্থানীয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাকে স্কুলে পাঠদানের উদ্যোগ নেন।
জানা যায়, হরিজন সম্প্রদায়ের মনা বাসপর ও পুতুল বাসপর দম্পতির বড় ছেলে বিরাট। গত ১৩ জানুয়ারি অগ্রদূত চাইল্ড কেয়ার হোমস্ নামে একটি বিদ্যালয়ে যথাযথ নিয়ম মেনে ছেলে বিরাটকে ভর্তি করেন মনা বাসপর। ভর্তির পরদিন বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বিরাটের পিতা মনা বাসপরকে মোবাইলে জানিয়ে দেন বিরাটকে স্কুলে না যেতে। এই ঘটনায় প্রতিকার চেয়ে শিশুটির বাবা মনা বাসপর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর একটি লিখিত আবেদন করেন।
বিরাটের মা পুতুল বাসপর আক্ষেপের সুরে বলেন, স্বাধীন দেশে আমরা এখনো সমাজের কাছে অবহেলিত। আমরাতো খেটে খাই। অন্যায় করি না তবুও মানুষ আমাদের দেখলে আড়চোখে তাকায়।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এ টি এম ফরহাদ চৌধুরী বলেন, শিক্ষা সবার মৌলিক অধিকার, বিরাট যেই সম্প্রদায়ের হোক শিক্ষা অর্জনের অধিকার থেকে কেউ তাকে বঞ্চিত করতে পারবে না।
তিনি বলেন, লিখিত অভিযোগ পাওয়ার পর স্কুল কর্তৃপক্ষকে আমার কার্যালয়ে ডেকে এনে ওই স্কুলছাত্রকে ক্লাসে ফিরিয়ে নিতে কঠোর নির্দেশনা দিয়েছি। এই বৈষম্য রোধে শীঘ্রই স্কুল কর্তৃপক্ষ ও অভিভাবকদের নিয়ে একটি সচেতনতামূলক সভার উদ্যোগ নিয়েছি।
এদিকে অচ্ছুত আচরণের কারণে বিদ্যালয়ে সহজ পাঠদান করতে পারবে কিনা এই চিন্তায় বিরাট ও তার মা বাবা শঙ্কায় রয়েছেন।
বিরাটের বাবা বলেন, বিদ্যালয়ে গিয়েও আমার সন্তান আজ বৈষম্যের শিকার। ছেলে স্কুলে ফিরলেও স্বাভাবিকভাবে পড়াশোনা করতে পারবে কি না এটাই এখন দুঃশ্চিন্তা।