আজকের সিলেট

মাদ্রাসার ফুলবাগানে চিরনিদ্রায় শায়িত আল্লামা তাফাজ্জুল হক হবিগঞ্জী

প্রখ্যাত আলেম আল্লামা তাফাজ্জুল হক হবিগঞ্জীর শেষ ইচ্ছে অনুযায়ী উমেদনগর টাইটেল মাদরাসা প্রাঙ্গণে মসজিদের পাশে ফুলবাগানে চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন। ভোর থেকেই দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা মুসল্লীদের উপস্থিতিতে গোটা শহর যানজটে পরিণত হয়। ফলে কয়েক কিলোমিটার হেটে মুসল্লীরা জানাজা স্থলে পৌঁছান। লোকে লোকারণ্য হয়ে পড়ে মাদরাসার ময়দান। মাদরাসার বাইরে প্রায় দেড় কিলোমিটার রাস্তায় মুসল্লীগন জানাজায় অংশ নেন।

সোমবার (৬ জানুয়ারি) সকাল ১০টা ১৭ মিনিটে জানাযা শেষে দাফন করা হয় দেশ বরণ্যে এ আলেমকে। জানাযায় ইমামতি করেন হুজুরের বড় ছেলে মাওলানা মাসরুরুল হক। লাখো ধর্মপ্রাণ মুসল্লী জানাযায় অংশ গ্রহণ করেন।

প্রখ্যাত আলেমেদ্বীন হবিগঞ্জ জামেয়া ইসলামিয়া আরাবিয়া টাইটেল মাদরাসা, হবিগঞ্জ তেতৈয়া মাদানীনগর মহিলা টাইটেল মাদরাসা, নুরুল হেরা জামে মসজিদসহ বহু ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা আল্লামা তাফাজ্জুল হকের মৃত্যুতে হবিগঞ্জে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।

তার মৃত্যুর খবর শুনে সিলেটসহ বিভিন্ন স্থান থেকে প্রশাসনসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার লোকজন তাকে দেখতে হবিগঞ্জ ছুটে আসেন। এছাড়াও হাজার হাজার মাদরাসা ছাত্র-ছাত্রীর উস্তাদের মৃত্যুর খবর শুনে শহরের চৌধুরী বাজার বাসভবন এলাকায় জড় হন।

বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও ভারতে অধ্যায়ন ও শিক্ষকতা পেশায় জড়িত ছিলেন তিনি। আল্লামা আহমেদ শফীর পরেই আল্লামা তাফাজ্জুল হককে দেশের পূর্বাঞ্চলের বয়োজেষ্ট আলেম হিসাবে গণ্য করা হয়। তার আমন্ত্রণে হবিগঞ্জের জামেয়া মাদ্রাসায় সৌদী আরবের দুই পবিত্র মসজিদের ইমাম, বায়তুল মোকাদ্দসের ইমামসহ দেশ ও বিদেশের বহু আলেম এসেছেন। কিছুদিন আগে অসুস্থ থাকাকালে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী তাকে দেখতে যান।

হবিগঞ্জের সর্বজন শ্রদ্ধেয় আলেমে দ্বীন শায়খুল হাদীস আল্লামা তাফাজ্জুল হক ১৯৪৪ সালে হবিগঞ্জ সদর উপজেলার কাটাখালি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা মাওলানা আব্দুন নুর ছিলেন বড় মাপের আলেম। ৫ ভাইয়ের মধ্যে তিনিই বড়। লেখাপড়ার শুরুটা বাবার হাত ধরেই। তারপর রায়ধর মাদরাসা। ইসলামের মৌলিক শিক্ষা তিনি গ্রহণ করেন চট্টগ্রামের হাটহাজারী মাদরাসায়। বাংলাদেশের প্রখ্যাত পীর ও আলেমে দ্বীন চট্টগ্রাম হাটহাজারী মাদরাসার পরিচালক শায়খুল হাদীস আল্লামা আহমদ শফি আল্লামা তাফাজ্জুল হকের শিক্ষক। চট্টগ্রাম থেকে আল্লামা তাফাজ্জুল হক চলে যান পাকিস্তানে। পাকিস্তানের লাহোর জামেয়া আশরাফিয়া মাদ্রাসায় তিনি লেখাপড়া করেন। সেখানকার তার উস্তাদ শায়খুল হাদিস আল্লামা রসুল খান ছিলেন পাকিস্তানের সবচেয়ে বড় আলেমে দ্বীন।

তিনি জীবনে ৩৮ বার পবিত্র হজ্জব্রত পালন করেন। তার উল্লেখযোগ্য ছাত্রদের মধ্যে জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি নুর হোসাইন কাসেমী, খেলাফত মজলিসের নায়েবে আমির মাওলানা আব্দুর রব ইউসুফী, মাওলানা নেজাম উদ্দিনসহ বেশ কয়েকজন আলেম এখন দেশের রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন। নুরুল হেরা জামে মসজিদ প্রতিষ্ঠাসহ একাধিক ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন তিনি। গরিব দুঃখীদের সাহায্যার্থে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন খুদ্দামুদ্দিন সমিতি। এই সমিতি থেকে বিভিন্ন প্রকাশনাও বের করা হয়। তার ওয়াজ শুনার জন্য হাজার হাজার মানুষ এখনও নির্ঘুম রাত কাটান। জুমার খুৎবা শুনতে নুরুল হেরা মসজিদে প্রতি জুমাবারই প্রচুর মুসল্লীর সমাগম ঘটে। দেশে বিদেশে লক্ষাধিক ভক্তের এক বিশাল পরিবার নিয়ে তার সংসার। সপেদ লুঙ্গি আর পাঞ্জাবি, টুপি-ই তার প্রিয় পোষাক। সাধারণ মানুষের মতো চলতে ভালবাসেন আল্লামা তাফাজ্জুল হক।

উল্লেখ্য, রোববার (০৫ জানুয়ারি) বিকাল পৌনে ৫টার দিকে হবিগঞ্জ থেকে সিলেটে হাসপাতালে নিয়ে আসার পথে মৃত্যুবরণ করেন মাওলানা তাফাজ্জুল হক। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮৫ বছর। তিনি ৫ ছেলে ও ৪ মেয়েসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। তাফাজ্জুল হক দীর্ঘদিন ধরে শ্বাসকষ্টজনিত রোগে ভুগছিলেন।

আরও সংবাদ

Close