আজকের সিলেটহবিগঞ্জ
হবিগঞ্জে অপহরণ থেকে বাঁচতে গিয়ে প্রাণ যায় স্কুলছাত্রী জেরিনের
হবিগঞ্জে প্রেমের প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় জীবন দিতে হয়েছে মেধাবী ছাত্রী মদিনাতুল কোবরা জেরিনকে।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয়ে প্রেস ব্রিফিংয়ে বিষয়টি জানিয়েছেন পুলিশ সুপার মোহাম্মদ উল্ল্যা।
নিহত জেরিন হবিগঞ্জ সদর উপজেলার ধল গ্রামের আব্দুল হাইয়ের মেয়ে ও রিচি উচ্চ বিদ্যালয়ের এসএসসি পরিক্ষার্থী ছিল। পিএসসি ও জেএসসিতে এ প্লাস পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছিল জেরিন।
এ ঘটনায় নিহত ছাত্রীর বাবা বাদী হয়ে হবিগঞ্জ সদর মডেল থানায় ৩ জনকে আসামী করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন।
আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে হবিগঞ্জ সদর উপজেলার ধল গ্রামের দিদার হোসেনের ছেলে অপহরণকারী জাকির হোসেন (২০)। বাকী দুই আসামী একই উপজেলার পাটুলী গ্রামের আব্দুল হাইয়ের ছেলে অটোরিক্সা চালক নূর আলম (২০) ও জাকিরের সহযোগী পাটুলী গ্রামের আব্দুর রাজ্জাকের ছেলে হৃদয় মিয়া (২০) পুলিশের নজরন্দী অবস্থায় রয়েছে বলেও জানিয়েছেন এসপি।
এসপি জানান, সদর উপজেলার ধল গ্রামের আব্দুল হাইয়ের মেয়ে এবং রিচি উচ্চ বিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্রী জেরিন। আসন্ন এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেয়ার কথা ছিল তার। প্রায়ই জেরিনকে প্রেমের প্রস্তাব দিয়ে উত্যক্ত করতেন জাকির। ১ মাস পূর্বে বিষয়টি জাকিরের পরিবারকে জানালে তার বাবা-মা জাকিরকে শাসিয়ে দেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে মেয়েটিকে অপহরণের চেষ্টা করেন জাকির।
শনিবার (১৮ জানুয়ারী) সকাল ৮টায় নূর আলমের অটোরিক্সার উঠে বিদ্যালয়ে যাচ্ছিল জেরিন। আগে থেকেই গাড়িতে ছিলেন হৃদয়। পথিমধ্যে অটোরিক্সায় তুলে নেয়া হয় জাকিরকে। সিএনজি অটোরিক্সাটি জেরিনের স্কুল পেরিয়ে গেলেও তাকে নামিয়ে দেয়া হচ্ছিল না। এ সময় নামার চেষ্টা করলে জেরিনের সাথে ধ্বস্তাধস্তি শুরু হয় অপহরণকারীদের। এক পর্যায়ে সে অটোরিক্সা থেকে লাফ দিলে মাথাসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত পায়।
পরবর্তীতে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে হবিগঞ্জ আধুনিক জেলা সদর হাসপাতালে নিয়ে আসলে কর্তব্যরত চিকিৎসক আশঙ্কাজনক অবস্থায় সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করেন। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রবিবার (১৯ জানুয়ারী) সকালে মারা যায় মেয়েটি।
দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে বলে প্রচার হলে অটোরিক্সা চালকের শাস্তি দাবিতে আন্দোলনে নামে এলাকাবাসী ও জেরিনের সহপাঠারীর। ওইদিন রাতেই থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন মেয়েটির বাবা। এক পর্যায়ে মঙ্গলবার (২১ জানুয়ারী) জাকিরকে গ্রেফতার করলে তিনি ঘটনার দায় স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি প্রদান করেন।
হবিগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রবিউল ইসলাম বলেন, জাকির গ্র্যাজুয়েশন সমাপ্ত করে বেকার অবস্থায় ছিলেন। একতরফা প্রেমে সাড়া না দেওয়ায় জেরিনকে অপহরণের পরিকল্পনা করেন তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে হবিগঞ্জ সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মাসুক আলীসহ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।