আন্তর্জাতিকশীর্ষ খবরস্বাস্থ্য
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত প্রায় ১০ হাজার : বিশ্বজুড়ে জরুরি অবস্থা
প্রায় ১০ হাজারে লোক আক্রান্ত হয়েছেন চীনের প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী মারা গেছেন ২১৩ জন। ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়েছে মহামারি আকারে। ভাইরাস মোকাবিলায় বৈশ্বিক জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)।
সর্বশেষ তথ্য জানতে ক্লিক করুন>>>
বৃহস্পতিবার (৩০ জানুয়ারি) জেনেভায় স্থানীয় সময় রাতে এক সংবাদ সম্মেলনে এই ঘোষণা দিয়েছেন জাতিসংঘের বিশেষায়িত সংস্থাটির প্রধান টেড্রোস অ্যাডানোম গ্রেবিয়াসিস। তিনি বলেন, ‘এই ঘোষণার মাধ্যমে দুর্বল স্বাস্থ্য সেবার দেশগুলোকে সুরক্ষা দেওয়া এবং তাদের জন্য প্রস্তুতি নেওয়া হবে।’
চীনে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার পর শুরুর দিকে (এক সপ্তাহ আগে) বিশ্বজুড়ে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করতে অস্বীকৃতি জানায় ডব্লিউএইচও। তবে সংস্থাটির কর্মকর্তারা এখন বলছেন, চীনে হাজার হাজার মানুষ নতুন করে আক্রান্ত হয়েছে এবং যুক্তরাষ্ট্রসহ বেশ কয়েকটি দেশে মানুষের শরীর থেকে অন্যের আক্রান্ত হওয়ার স্পষ্ট নজির দেখা গেছে। এছাড়াও সংস্থাটির অনুসন্ধানে দেখা গেছে, এই ভাইরাস সংশ্লিষ্ট কারণে মারা যাওয়া প্রতি আট জনের মধ্যে এক জনের মৃত্যু হয়েছে ভাইরাসটির উৎপত্তিস্থল হুবেই প্রদেশের বাইরে। ফলে আগের সিদ্ধান্তটি পর্যালোচনার সিদ্ধান্ত নেয় সংস্থাটির বিশেষজ্ঞ কমিটি।
বৃহস্পতিবার গ্লোবাল হেলথ ইমার্জেন্সি ঘোষণার কারণ হিসেবে ডব্লিউএইচও প্রধান অ্যাডানোম গ্রেবিয়াসিস বলেন, মূলত চীনে যা ঘটছে সে কারণে নয় বরং অন্য দেশে যা ঘটছে সেই কারণেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
গত ৩১ ডিসেম্বর চীনের মধ্যাঞ্চলীয় হুবেই প্রদেশের উহান শহরে প্রথম করোনাভাইরাসের উপস্থিতি নিশ্চিত হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত ২০টির মতো দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। গোটা বিশ্বে ৯৭৭৬ জন আক্রান্ত হয়েছেন। যারমধ্যে এখন পর্যন্ত ২১৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। এই ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা শুধু চীনেই ৯৬৫৮ জন। গত বছরের জুলাইয়ে আফ্রিকার ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অব কঙ্গোতে প্রাণঘাতী ইবোলা ছড়িয়ে পড়ায় তখন বিশ্বব্যাপী জরুরি অবস্থা ঘোষণা করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।
এ পর্যন্ত চীন, থাইল্যান্ড, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, ভিয়েতনাম, হংকং, সিঙ্গাপুর, ভারত, মালয়েশিয়া, নেপাল, ফ্রান্স, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, জার্মানি, কম্বোডিয়া, শ্রীলঙ্কা, সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং তাইওয়ানে এই ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এছাড়া ইসরায়েলেও এক রোগীর শরীরে করোনাভাইরাস পাওয়া গেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের প্রাণকেন্দ্র চীনের মধ্যাঞ্চলের উহান শহর থেকে শত শত বিদেশি নাগরিককে সরিয়ে নেয়ার কাজ শুরু করেছে বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশ। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত এবং নিহতের সংখ্যা ক্রমান্বয়ে বাড়তে থাকায় যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, অস্ট্রেলিয়া এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি দেশ তাদের নাগরিকদের উহান থেকে সরিয়ে নিচ্ছে।
তবে বিস্তার ঠেকাতে উত্তর আমেরিকা, ইউরোপ এবং এশিয়ার বেশ কয়েকটি দেশ চীনগামী বিমানের ফ্লাইট বাতিল করছে। এর মধ্যে ব্রিটিশ এয়ারওয়েজ, ইউনাইটেড এয়ারলাইন্স, এয়ার এশিয়া, ক্যাথে প্যাসিফিক, এয়ার ইন্ডিয়া ও ফিনএয়ার ইতোমধ্যে চীনগামী বিমানের সংখ্যা কমিয়ে আনার ঘোষণা দিয়েছে।
গ্লোবাল হেলথ ইমার্জেন্সি ঘোষণা করলেও ভাইরাস মোকাবিলায় চীনের গৃহীত পদক্ষেপ নিয়ে বৃহস্পতিবার প্রশংসা করেছেন ডব্লিউএইচও প্রধান টেড্রোস অ্যাডানোম গ্রেবিয়াসিস।