আজকের সিলেট

বীর মুক্তিযোদ্ধা নিজাম উদ্দিনের প্রতি সিলেটবাসীর শ্রদ্ধা

সিলেটের প্রবীণ নাট্য সংগঠক বীর মুক্তিযোদ্ধা নিজাম উদ্দিন লস্কর ময়নাকে ফুলেল শ্রদ্ধা জানিয়েছেন দীর্ঘদিনের সহকর্মী, সাংস্কৃতিক কর্মী, রাজনৈতিক ও সামাজিক নেতৃবৃন্দ।

সোমবার (১৮ জানুয়ারি) সিলেট কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে সর্বস্তরের মানুষ শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।

এর আগে দুপুর ১১ টা ৪০ মিনিটে শ্রদ্ধা নিবেদন করার জন্য তাঁর মরদেহ শহিদ মিনারে নিয়ে আসা হয়।

এরপর প্রথমে সিলেট জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। পরে বীর মুক্তিযোদ্ধা নিজাম উদ্দিন লস্কর ময়নাকে রাষ্ট্রীয় সম্মাননা প্রদান করা হয়।

পরে একে একে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট সিলেট, নাট্যায়ন সিলেট, বাসস, উদীচী, কথাকলি,শ্যামলী মা লিমিডেটসহ বিভিন্ন সংগঠন শ্রদ্ধা নিবেদন করে। সবশেষ শ্রদ্ধা নিবেদন করে সম্মিলিত নাট্য পরিষদ, সিলেট।

এরপরই বেলা সাড়ে ১২ টায় তার মরদেহ হযরত শাহ জালাল (রহ.) এর মাজারে নেয়া হয়। সেখানে জানাযার নামাজ শেষে দরগাহ গোরস্থানে সমাহিত করা হবে।

এর আগে রোববার রাত ৯টা ২০ মিনিটে রাগীব রাবেয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তিনি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন।

বেশ কিছুদিন থেকে কিডনিজনিত জটিলতায় ভোগছিলেন সিলেটের সংস্কৃতি অঙ্গনের অভিভাবক নাট্যজন নিজাম উদ্দিন লস্কর ময়না। কিছুদিন আগে ব্রেইন স্ট্রোক করে মাউন্ট এডোরা হাসপাতালের আইসিইউতেও ভর্তি ছিলেন তিনি। পরে পরিবারের সদস্যরা তাকে বাসায় নিয়ে আসেন। এরপর ফের তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাকে রাগীব-রাবেয়া হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।

এদিকে, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও বীর মুক্তিযোদ্ধা নিজাম উদ্দিন লস্কর ময়নার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন সিলেট জেলা বাসদ’র সমন্বয়ক আবু জাফর।

আজ সোমবার (১৮ জানুয়ারি) এ বিবৃতিতে আবু জাফর বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধে নিজাম উদ্দিন লস্কর ময়না অনন্য অবদান রাখেন। স্বাধীনতার পর থেকে আমৃত্যু সাংস্কৃতিক আন্দোলনে নিজেকে সম্পৃক্ত রেখে সুস্থধারার সংস্কৃতিকে বিকশিত করার সংগ্রাম করে গেছেন। তার মৃত্যুতে আমরা একজন অসাম্প্রদায়িক, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ সম্পন্ন, বহু গুণে গুণান্বিত প্রতিভাবান মানুষকে হারালাম। নিজাম উদ্দিন লস্কর ময়নার মৃত্যু সিলেটসহ পুরো দেশবাসীর জন্য এক অপূরণীয় ক্ষতি।

একজন নিজাম উদ্দিন লস্কর:

১৯৫২ ইংরেজি সালের ৯ এপ্রিল সিলেট নগরীর লামাবাজার এলাকার বিলপাড়ে নিজাম উদ্দিন লস্কর ময়নার জন্ম হয়। তাঁর পিতার নাম- ফকর উদ্দিন লস্কর, মাতার নাম- সাহার বানু লস্কর। ৫ ভাই ও ২ বোনের মধ্যে নিজাম উদ্দিন লস্কর সবার বড়।

তিনি দুর্গাকুমার পাঠশালা থেকে প্রাথমিকের পাঠ শেষ করে মাধ্যমিকে পড়ালেখা করেন সিলেট সরকারি পাইলট হাইস্কুলে। আর ১৯৬৯ ইংরেজি সালে সিলেট সরকারী কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন। পরে ১৯৭২ ইংরেজি সালে এমসি কলেজ থেকে স্নাতক পাস করেন।

জীবনের ৫ বছর কাটে তাঁর পশ্চিম জার্মানে। ১৯৬২ ইংরেজি সালে প্রসাদ বিশ্বাস রচিত ‘পরাজয়’ নাটক নিয়ে নিজাম উদ্দিন লস্কর ময়নার মঞ্চ অভিনয় শুরু হয়। এর পর একে একে টিভি নাটক, রেডিও নাটক, চলচ্চিত্র এ তিন মাধ্যমেই অভিনয় করেছেন তিনি।

রেডিও, টিভি নাটক ও মঞ্চনাটক মিলে প্রায় শতাধিক নাটকের নাট্যকার নিজাম উদ্দিন লস্কর ময়না এক টানা ১০ বছর সিলেট জেলা শিল্পকলা একাডেমির নাটকের প্রশিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। নির্দেশনাও দিয়েছেন শ’খানেক মঞ্চনাটকে। তাঁর রচনা করা নাটকগুলোর মধ্যে ‘রক্তপলাশ, গ্রাস, পাগলাগারদ, ঝুঁকি, যুগবদলের হাওয়া’ ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। তিনি বেশ কয়েকটি বইয়ের রচনাও করেছেন। এযাবৎ বেশ কয়েকটি ইংরেজি সাহিত্যের অনুবাদও করেছেন তিনি।

সর্বজন শ্রদ্ধেয় নিজাম উদ্দিন লস্কর অভিনীত উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্র ‘বন্ধন, পাপি শত্রু, খুনের বদলা’।

তিনি সম্মিলিত নাট্য পরিষদ সিলেট’র ৩ বার প্রধান পরিচালকের দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি সিলেট ফটোগ্রাফিক সোসাইটির প্রতিষ্ঠাকালীন সময় থেকে টানা ৩ বার সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন।

বীর মুক্তিযোদ্ধা নিজাম উদ্দিন লস্কর ময়না ছিলেন ১৯৭১ সালের রণাঙ্গনের একজন সম্মুখসারির যোদ্ধা।

আরও সংবাদ

Close