শীর্ষ খবর

জ্বালানি সংকটে সিলেট : আন্দোলনের প্রস্তুতি ব্যবসায়ীদের

সিলেটে জ্বালানি তেলের চাহিদার চেয়ে সরবরাহ অনেক কম। ফলে জ্বালানি তেলের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে রাষ্ট্রমালিকানাধীন স্থানীয় পরিশোধনাগার বন্ধ থাকা, রেলের ওয়াগন সংকট ও শীত মৌসুমে চাহিদা বাড়ায় দেখা দিয়েছে এ সংকট। সিলেটের পরিশোধনাগারগুলো চালুর দাবিতে সিলেটের জ্বালানি ব্যবসায়ীরা দীর্ঘদিন ধরে নানা কর্মসূচি পালন করে আসছেন। কিন্তু নানা অজুহাতে বন্ধ রাখা হয়েছে শোধনাগারগুলো। এ অবস্থায় লাগাতার ধর্মঘটসহ বিভিন্ন কর্মসূচি নিয়ে আন্দোলনে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছেন জ্বালানি ব্যবসায়ীরা। সংকট নিরসনে তারা প্রশাসনকে সাত দিনের আলটিমেটামও দিয়েছেন।

সিলেটের জ্বালানি ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, জেলায় ডিজেল, পেট্রোল, অকটেন ও কেরোসিন মিলিয়ে প্রতিদিনের চাহিদা ১০ লাখ লিটার। আগে সিলেটের গ্যাস ক্ষেত্র থেকে প্রাপ্ত উপজাত দিয়ে স্থানীয় শোধনাগারগুলোর মাধ্যমে পেট্রোল ও অকটেন উৎপাদন করে চাহিদা মিটিয়ে দেশের অন্যান্য স্থানে পাঠানো হতো। কিন্তু প্রায় এক বছর আগে বিএসটিআইর মানসম্পন্ন জ্বালানি উৎপাদন সম্ভব হচ্ছে না এমন অজুহাত দেখিয়ে রাষ্ট্রমালিকানাধীন সিলেটের ছয়টি শোধনাগার বন্ধ করে দেওয়া হয়।

ছয়টি শোধনাগারের মধ্যে স্থানীয় গ্যাস ক্ষেত্র থেকে প্রাপ্ত কনডেনসেট দিয়ে প্রতিদিন গোলাপগঞ্জের রূপান্তরিত প্রাকৃতিক গ্যাস কোম্পানি লিমিটেড-আরপিজিসিএলের দুটি প্লান্ট থেকে ৮০০ ও ৫০০ ব্যারেল, সিলেট গ্যাস ফিল্ড লিমিটেডের আওতাধীন হরিপুরে ৬০ ব্যারেল, কৈলাসটিলায় ৩০০ ব্যারেল এবং রশিদপুরের দুটি প্লান্টে যথাক্রমে ৩ হাজার ৭৫০ ও ৪ হাজার ব্যারেল পেট্রোল, ডিজেল ও এলপিজি উৎপাদন হতো। সিলেটের শোধনাগারগুলো বন্ধ করে দেওয়ার পর গ্যাস ক্ষেত্র থেকে উপজাত হিসেবে পাওয়া কনডেনসেটগুলো চট্টগ্রামের বিভিন্ন বেসরকারি শোধনাগারে পাঠিয়ে দেওয়া হতো। সেখান থেকে রেলের ওয়াগনে করে ডিজেল, পেট্রোল, অকটেন ও কেরোসিন সিলেটে এনে পদ্মা, মেঘনা, যমুনা এ তিনটি কোম্পানির মাধ্যমে সরবরাহ করা হতো।

সিলেটের শোধনাগারগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়ার পরই দেখা দেয় জ্বালানি সংকট। রেলের ইঞ্জিন ও ওয়াগন সংকট, ঘন ঘন দুর্ঘটনা ইত্যাদি কারণে জ্বালানি সরবরাহ বিঘ্নিত হতে থাকে। এ নিয়ে জ্বালানি ব্যবসায়ীরা লাগাতার কর্মসূচি ঘোষণা করলে ১০ মার্চ সিলেটে আসেন বিপিসির তৎকালীন চেয়ারম্যান আবু বকর ছিদ্দিক। তিনি সংস্কারের মাধ্যমে সিলেটের সব কটি শোধনাগার চালুর আশ্বাস দিলেও শুধু রশিদপুরের প্লান্টটি চালু হয়। বাকিগুলো বন্ধ।

শীত মৌসুমে জ্বালানি তেলের চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় সংকট আরও প্রকট আকার ধারণ করে। সম্প্রতি বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম ডিলারস ডিস্ট্রিবিউটরস এজেন্ট অ্যান্ড পেট্রোলিয়াম ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন সিলেট বিভাগীয় শাখা জরুরি বৈঠক করে। ওই বৈঠক থেকে তারা জ্বালানি সংকট নিরসনে সাত দিনের আলটিমেটাম দেন। সংকট নিরসন না হলে লাগাতার ধর্মঘটসহ কঠোর কর্মসূচির হুমকি দেন।

অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক জুবায়ের আহমদ চৌধুরী জানান, সিলেট জেলায় ৫৬টি রিফুয়েলিং স্টেশন রয়েছে। এ ছাড়া এজেন্ট রয়েছে শতাধিক। সব মিলিয়ে জেলায় প্রতিদিন জ্বালানি তেলের চাহিদা রয়েছে ১০ লাখ লিটার। বর্তমানে সরবরাহ করা হচ্ছে এক থেকে সোয়া লাখ লিটার। এ ছাড়া শীত মৌসুমে কৃষিতে সেচের প্রয়োজন হওয়ায় চাহিদা বেড়েছে জ্বালানি তেলের। আগে সিলেটের তিনটি ছাড়া ভৈরব ডিপো থেকে সিলেটে জ্বালানি সরবরাহ করা হলেও এখন তা-ও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

তিনি আরও জানান, মান নিয়ে প্রশ্ন তুলে সিলেটের রাষ্ট্রমালিকানাধীন শোধনাগারগুলো বন্ধ করা হলেও বর্তমানে চট্টগ্রাম থেকে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের যে জ্বালানি সরবরাহ করা হচ্ছে সেগুলোর অবস্থা আরও খারাপ। পেট্রোল নেওয়ার পর গাড়ি বিকল হয়ে পড়ে। তাই পেট্রোলের পরিবর্তে অকটেনের ব্যবহার বাড়ছে। মূলত রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো ধ্বংস করতেই একটি অজুহাত দাঁড় করিয়ে এগুলো বন্ধ করা হয়েছে।

আরও সংবাদ

Close