আন্তর্জাতিকশীর্ষ খবর
অলিভিয়া বন্দরে হাদিসুরের মৃত্যুতে রাশিয়ার শোক প্রকাশ
ইউক্রেনের অলিভিয়া বন্দরে রকেট হামলায় বাংলাদেশি মেরিন ইঞ্জিনিয়ার হাদিসুর রহমান আরিফের মৃত্যুতে শোকপ্রকাশ করে রাশিয়ান দূতাবাস জানিয়েছে, বাংলাদেশি জাহাজকে নিরাপদে বের করে আনার চেষ্টা চলছে।
ইউক্রেনের বন্দরে আটকে পড়া জাহাজ ‘বাংলার সমৃদ্ধি’ যাতে সেখান থেকে নিরাপদে বেড়িয়ে যেতে পারে তার জন্য সব রকম চেষ্টা চলছে বলে বৃহস্পতিবার (৩ মার্চ) জানায় ঢাকায় অবস্থিত রাশিয়ান দূতাবাস।
এসময় তারা ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় নিহত ‘বাংলার সমৃদ্ধি’র নাবিক ইঞ্জিনিয়ার হাদিসুর রহমানের মৃত্যুতে গভীর শোকপ্রকাশ করে এবং নিহতের পরিবার-পরিজনের জন্য সমবেদনা জানিয়েছে।
দূতাবাস আরও জানায়, রাশিয়ার প্রতিরক্ষা বাহিনীগুলো লক্ষ্যবস্তু পর্যবেক্ষণের তথ্যের ভিত্তিতে তাদের অপারেশন পরিচালনা করে। তারা জানিয়েছে, পিছু হটার সময় ইউক্রেনীয় জাতীয়তার যোদ্ধারা নির্বিচারে গোলাগুলি চালায় এবং বেসামরিক নাগরিকদের জিম্মি করে ‘মানব ঢাল’ হিসেবে ব্যবহার করছে। সন্ত্রাসীদের সনাতন এই কৌশলকেই তারা বেঁছে নিয়েছে।
বুধবার (২ মার্চ) নিহত হাদিসুর রহমান ছিলেন বাংলার সমৃদ্ধি জাহাজের থার্ড ইঞ্জিনিয়ার। বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশনের মালিকানাধীন জাহাজটি ইউক্রেনের অলভিয়া বন্দরে নোঙর করে রয়েছে। যুদ্ধের কারণে বন্দর থেকে বেড়িয়ে আসতেও পারছে না।
নিহত হাদিসুরের বাড়ি বরগুনার বেতাগী উপজেলায়। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম সন্তান হাদিসকে হারিয়ে সংজ্ঞাহীন বাবা ও বেহুঁশ মা।
জানা যায়, এসএসসি ও এইচএসসিতে গোল্ডেন জিপিএ পাওয়া আরিফ চট্টগ্রাম মেরিন একাডেমির ৪৭তম ব্যাচের ছাত্র ছিলেন। লেখাপড়া শেষ করে তিনি এমভি বাংলার সমৃদ্ধি জাহাজে থার্ড ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে চাকরি নেন।
ইউক্রেনে জাহাজটি আটকে পড়ার পর থেকেই তাদের পরিবারের সকলের দুশ্চিন্তার মধ্য দিয়ে দিন কাটছিল। নানা শঙ্কার মধ্যে ছিলেন তারা। তাদের সেই শঙ্কাই সত্যি হলো। সন্তানের লাশ ফেরা নিয়ে এখন আশঙ্কায় রয়েছেন তারা।
স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ‘এমভি বাংলার সমৃদ্ধি’ জাহাজটিতে পাঁচ বছর যাবৎ চাকরি করছিলেন আরিফ।
নিহত হাদিসের ছোট ভাই মো. তারেক বলেন, বুধবার সকালেও ভাই আমাদের সঙ্গে কথা বলেছেন। সেই সময়ে ফোনে বলেন, ভাই আমাদের আর ভাঙা ঘরে থাকতে হবে না। বাড়িতে এসেই যেভাবে হোক ঘরের কাজ ধরবো।
ফোনালাপে ইউক্রেনে বোমা, গুলির শব্দ ও যুদ্ধের অবস্থা নিয়েও কথা হয়। ভীতিকর পরিস্থিতি নিয়ে আরিফ শঙ্কিত ছিল বলেও জানান তিনি। বাড়ি ফেরার তাড়া অনুভব হয়েছিল আরিফের কথায়। বাড়ি ফিরে কি কি কাজ করবে, ছোট ভাইয়ের সঙ্গে তার একটি আলোচনাও করেন।
তারেক আরও বলেন, আমরা জাহাজে থাকা আরিফের সহকর্মীদের কাছেই মৃত্যুর খবর নিশ্চিত হয়েছি। এরপর থেকেই আমার বাবা বাকরুদ্ধ হয়ে বসে আছেন, মা বেহুঁশ।
তিনি সরকারের কাছে অনুরোধ করেন, যাতে দ্রুত তার ভাইয়ের লাশ দেশে ফিরিয়ে আনা হয়।