আন্তর্জাতিকশীর্ষ খবর
চতুর্মুখী বিপদে ভারত
মহামারী-পতঙ্গ-ভূমিকম্প-যুদ্ধের আভাস। চতুর্মুখী বিপদে ভারত। দক্ষিণ এশিয়ায় প্রভাব বিস্তারকারী দেশটি সব দিক থেকে যেনো একঘরে হয়ে পড়ছে। প্রতিবেশী দেশগুলোর সাথে ক্রমেই সম্পর্কের অবনতি হচ্ছে। বাড়ছে প্রাণঘাতি করোনা আক্রান্তের সংখ্যা। ভারতের এক বিজ্ঞানী সূর্যগ্রহণের পর করোনা বিদায় নিবে বললেও তা মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে। উল্টো লাফিয়ে বাড়ছে করোনার সংক্রমন। প্রাকৃতির দুর্যোগও যেন দেশটিকে চোখ রাঙাচ্ছে। ঘুর্ণিঝড় আম্পানের পর বন্যা এখন ঘন ঘন ভূমিকম্প। এরমাঝে দিল্লীতে ঝাঁকে ঝাঁকে পঙ্গপালের আক্রমণ হয়েছে।
সর্বশেষ প্রাপ্ত খবরে ভারতে দিন দিন করোনা সংক্রমণ আরও খারাপের দিকে মোড় নিচ্ছে। শেষ ২৪ ঘণ্টায় দেশটিতে নতুন করে রেকর্ড ১৮ হাজার ৫৫২ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। মহামারি শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত একদিনে এটিই সর্বোচ্চ শনাক্ত। এর মধ্য দিয়ে ভারতে করোনা শনাক্ত ৫ লাখ ছাড়িয়ে গেছে। শনিবার (২৭ জুন) ভারতের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, শেষ ২৪ ঘণ্টায় শনাক্তদের নিয়ে দেশটিতে করোনা শনাক্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৫ লাখ ৯ হাজার। ভারতের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে রয়টার্স জানায়, সরকারি হিসেবে শেষ ২৪ ঘণ্টায় দেশটিতে নতুন করে করোনায় আরও ৩৮৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে মোট মৃতের সংখ্যা দাঁড়ালো ১৫ হাজার ৬৮৫ জনে।
এদিকে, প্রায় প্রতিদিনই ভারতের কোনও না-কোনও অঞ্চলে কম্পন হচ্ছে। শুক্রবার দেশের অন্তত তিনটি অঞ্চল থেকে ভূমিকম্প অনুভূত হয়। শুক্রবার রাতে ভূমিকম্পে কেঁপে উঠল লাদাখ। এ দিন রাত ৮টা ১৫ মিনিট নাগাদ কম্পন অনুভূত হয়। রিখটার স্কেলে এর মাত্রা ছিল ৪.৫। এ দিন দুপুর ৩টে ৩২ মিনিট নাগাদ কেঁপে ওঠে রোহতক-সহ হরিয়ানার বেশ কিছু এলাকা। স্কেলে এর কম্পনের মাত্রা ছিল ২.৮। এর দু’দিন আগে গত বুধবারেও একই মাত্রায় কেঁপে উঠেছিল রোহতক।
এরমধ্যে যা ভয় ছিল, তাই-ই ঘটল৷ গুরুগ্রামে পৌঁছেই পঙ্গপালের দল হানা দিল ভারতের রাজধানী দিল্লিতে৷ শনিবার সকালে গুরুগ্রামের আকাশ ছেয়ে যায় পঙ্গপালে৷ কোটি কোটি পঙ্গপাল দখল নেয় গুরুগ্রাম৷ সেখান থেকে দুপুরেই কয়েক কোটি পঙ্গপাল হানা দিল দিল্লি৷ দক্ষিণ দিল্লির ছতরপুরে হামলা চালাল পঙ্গপালের দল৷ পঙ্গপাল মোকাবেলায় দিল্লির পরিবেশমন্ত্রী গোপাল রাই গোটা দিল্লি ও সংলগ্ন এলাকায় হাই অ্যালার্ট জারি করেছেন৷ প্রশাসনকে তত্পর হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন৷ পঙ্গপালের দল প্রথমেই হামলে পড়বে ফসলের ওপর৷ তাই দিল্লির কৃষি দপ্তর প্রতিটি জেলা প্রশাসককে বিশেষ অ্যাডভাইজরি ইস্যু করেছে৷ বন দপ্তরকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, ডি জে, ঢোল, বাসন বাজিয়ে পঙ্গপালের দলকে ছত্রভঙ্গ করার জন্য৷
সবকিছু ছাপিয়ে বাজছে চীন-ভারতের যুদ্ধের দামামা। চীনের সঙ্গে যুদ্ধ উত্তেজনার মাঝে চারদিক থেকে চাপে পড়ে যাচ্ছে ভারত। ভারতের বিভিন্ন মিডিয়া সূত্রে জানা গেছে ইতোমধ্যে চীন ভারতের বিশাল অংশে প্রভাব বিস্তার করে বসে আছে। শুধু তাই নয় সেখানে সামরিক সরঞ্জাম মজুদসহ ঘাঁটিও তৈরী করছে, যা স্যাটেলাইটের মাধ্যমে তোলা ছবি থেকে জানা গেছে। কেবল চীনের সাথেই নয়, ভারতের সম্পর্ক ক্রমেই খারাপ হচ্ছে প্রতিবেশী দেশগুলোর সাথেও। উত্তরাখণ্ড রাজ্যের পিথোরাগড় সীমান্তে বর্ডার রোড বানাতে সেনা মোতায়েন করেছে নেপাল। দারচুলা-তিনকার মধ্যকার ওই সড়কটি মহাকালী করিডর নামেও পরিচিত। নেপালিদের ভারতের সড়কের ওপর নির্ভরতা কমাতেই এমন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়া।
উত্তরাখণ্ডের কয়েকটি এলাকাকে নিজেদের মানচিত্রে স্থান দিয়ে নেপালের পার্লামেন্ট কিছুদিন আগেই যে নতুন মানচিত্র বিলটি পাস করেছে, সেই উত্তেজনার রেশ না কাটতেই এমন খবর ভারতকে আরো চিন্তিত করে তুলেছে।
যাতযাতের সড়ক না থাকায় ওই এলাকার গ্রামীবাসীদের ভারতের সড়ক মাড়াতে হয়। একবার এ সড়কটি হয়ে গেলে নেপালের সাধারণ মানুষের ভারতের ওপর নির্ভরতা কেবল কমবে তা নয়, দেশটির আর্মড-পুলিশও এলাকাটিতে বর্ডার পোস্ট বসাতে পারবে। একইসঙ্গে দিতে পারবে টহলও।
অন্যদিকে তিনকারের কাছেই চায়না বর্ডারেও গমনাগমন সহজতর হবে সড়কটির কাজ সম্পন্ন হলে। এছাড়া পিলগ্রিম ও কৈলাস মানস সরোবরে যেতেও ট্যুরিস্টদের জন্য সহজ হবে।
চীন-ভারতের মধ্যে চলমান উত্তেজনা প্রশমনের খবর প্রকাশ হলেও বাস্তবে লাদাখে যুদ্ধাবস্থা বিরাজ করছে। গালওয়ানে ২০ ভারতীয় সেনা নিহতের ঘটনার রেশ এখনো কাটেনি। এরই মধ্যে প্যাংগং লেকের পাড়ে হেলিপ্যাড তৈরি ও সেনা বাড়িয়েছে চীন।
ভারতীয় গণমাধ্যম ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের খবরে বলা হয়েছে, উত্তেজনা প্রশমণে আলোচনাকেই গুরুত্ব দেওয়ার কথা বলা হলেও বেইজিংয়ের কাজে ও কথায় বিস্তর ফারাক। প্যাংগং টিএসও-তে নিজেদের অবস্থান শক্ত করছে চীনা বাহিনী। ফিঙ্গার ৪-এ হেডিপ্যাড বানানোর সঙ্গে সঙ্গে প্যাংগং টিএসও-র দক্ষিণে হঠাৎই সেনা মোতায়েন বাড়িয়েছে লাল ফৌজ।
গালওয়ানকে আগেই নিজেদের এলাকা বলে দাবি করেছে চীনা সেনা ও বেইজিং। এবার প্যাংগং টিএসও-কেও সেই দাবির অন্তর্ভুক্ত করতে মরিয়া চীন।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে এক সেনা কর্মকর্তা বলেছেন, ‘প্যাংগং লেকের উত্তরে নিজেদের অবস্থান শক্ত করছে চীন। গত আট সপ্তাহে ওই এলাকায় বহু কাঠামো নির্মাণ করেছে লাল ফৌজ। এর মধ্যেই ফিঙ্গার ৪-এ হেলিপ্যাড নির্মাণের বিষয়টি নতুন সংযোজন। ফিঙ্গার ৩-তেও চীনা সেনার টহল বেড়েছে। ভারতীয়দের বারে বারেই ফিঙ্গার ২-এর দিকে সরে যেতে বলে চীনা সেনারা।’
এদিকে, গালওয়ান এলাকায় ঝাঁকে ঝাঁকে চীনের গোয়েন্দা ড্রোন উড়ছে বলে জানা গেছে। ভারতীয় সেনাবাহিনীর সূত্রের বরাত দিয়ে দেশটির সংবাদমাধ্যম আনন্দবাজার পত্রিকা শনিবার (২৭ জুন) এ খবর দিয়েছে। ভারতীয় বাহিনীর গতিবিধির ওপর নজর রাখার জন্য কৌশলগত এসব ড্রোন উড়াচ্ছে চীনা সেনাবাহিনী (পিএলএ)। কখনো কখনো এসব ড্রোন সীমান্ত পেরিয়ে পূর্ব-লাদাখের ভারতীয় অংশেও ঢুকে যাচ্ছে। গত কয়েক সপ্তাহে ভারতের অন্তত চারটি গুরুত্বপূর্ণ এলাকার উপর শনাক্ত করা হয়েছে ড্রোন।
অন্যদিকে, লাদাখে চীন ও ভারতের মধ্যে সংঘাতের মধ্যেই এক সপ্তাহে অন্তত ১০ জনের প্রাণহানী ঘটেছে। এমন পরিস্থিতি পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে সংঘাত সৃষ্টির শঙ্কা দেখা দিয়েছে। লাদাখে জমা হওয়া ভারতের ক্ষোভ কাশ্মীরে প্রকাশ পেতে পারে আশঙ্কা।
এজন্য বড়সড় প্রস্তুতি নিচ্ছে পাকিস্তান সেনাবাহিনী। দেশটির সেনা প্রধান জেনারেল কমর জাভেদ স্বাস্থ্যমন্ত্রীর কাঠে একটি চিঠি পাঠিয়ে সেনাবাহিনীর সদস্যদের জন্য হাসপাতালে ৫০ শতাংশ বেড সংরক্ষিত রাখার অনুরোধ করেছেন।