শীর্ষ খবর

অক্সফোর্ড না ওহান কার ভ্যাকসিন আগে পাবে বিশ্ব

করোনাভাইরাস প্রতিরোধে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় ও ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান অ্যাস্ট্রাজেনেকার পরীক্ষামূলক ভ্যাকসিন প্রথম ভ্যাকসিন হিসেবে চূড়ান্ত ধাপে পৌঁছেছে।  এ পর্যায়ে এটি কোভিড-১৯ থেকে মানুষকে কতটা কার্যকরভাবে সুরক্ষা দিতে পারে, তা পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে।

গত এপ্রিলে করোনার প্রতিষেধক ডিএনএ ভ্যাকসিনের হিউম্যান ট্রায়াল শুরু করেছিল জেনার ইনস্টিটিউট।  শনিবার প্রতিষ্ঠানটির বরাতে বিজনেস ইনসাইডার জানায়, ভ্যাকসিনের পর পর দু’টি হিউম্যান ট্রায়ালের সফলতার পর তৃতীয় পরীক্ষারও সবকিছু ঠিকঠাক চলছে। বিজ্ঞানীদের আশা পরীক্ষার এই শেষ ধাপ সফল হলে জুলাইতেই মিলতে পারে বহুল প্রতীক্ষিত করোনার প্রতিষেধক।

বিশ্বের যেক’টি ভ্যাকসিন এখন পরীক্ষাধীন রয়েছে তার মধ্যে অগ্রগতি বিবেচনায় শীর্ষে রয়েছে অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিনটি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) প্রধান বিজ্ঞানী সৌম্য স্বামীনাথম শুক্রবার এমন তথ্য জানিয়েছেন।  খবর রয়টার্স ও হিন্দুস্তান টাইমসের।

ব্রিটিশ ওষুধ কোম্পানি অ্যাস্ট্রাজেনেকা অক্সফোর্ডের গবেষকদের তৈরি ওই ভ্যাকসিনটি বৃহৎ ও মাঝারি পরিসরে ইতোমধ্যে মানবদেহে প্রয়োগ শুরু করেছে। এখন অপেক্ষা ভ্যাকসিনটির কার্যকারিতা প্রমাণিত হওয়ার। প্রাথমিকভাবে অ্যাস্ট্রাজেনেকার লাইসেন্সকৃত ‘সিএইচএডিওএক্সওয়ান এনকোভ-১৯’ ভ্যাকসিনটি যুক্তরাজ্যে ১০ হাজার ২৬০ জন প্রাপ্তবয়স্ক ও শিশুকে দেয়া হবে।  দক্ষিণ আফ্রিকা ও ব্রাজিলেও এর পরীক্ষা শুরু হয়েছে।

ভ্যাকসিনটি তৈরিতে ব্যবহার হচ্ছে ‘সিএইচএডিওএক্সওয়ান’ ভাইরাস, যা মূলত সাধারণ সর্দি-কাশির দুর্বল ভাইরাস (অ্যাডেনোভাইরাস) হিসেবে পরিচিত। এটি শিম্পাঞ্জিকে সংক্রমিত করে। গবেষকরা এ ভাইরাসের জেনেটিক পরিবর্তন করেছেন, যাতে তা মানুষের ক্ষতি না করে।

সৌম্য স্বামীনাথম জানান, মার্কিন কোম্পানি মডার্নার তৈরি ভ্যাকসিনটিরও বেশ ভালো অগ্রগতি হয়েছে। তিনি বলেন, আমরা জানি যে, মডার্নার তৈরি ভ্যাকসিনটিও তৃতীয় ধাপের ট্রায়াল শুরু করতে যাচ্ছে, সম্ভবত জুলাইয়ের মাঝামাঝি এবং সম্ভাব্য এই ভ্যাকসিনটিও খুব বেশি দূরে নেই।

অক্সফোর্ড ভ্যাকসিন গ্রুপের প্রধান অ্যান্ডরু পোলার্ড এক বিবৃতিতে বলেছেন, ক্লিনিক্যাল পরীক্ষাগুলো খুব ভালোভাবে এগোচ্ছে। আমরা এখন পরীক্ষা পর্যালোচনা করে দেখছি যে, ভ্যাকসিনটি বয়স্ক ব্যক্তিদের বেলায় কতটা কার্যকরভাবে প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি করতে পারে। এটি ব্যাপক জনসংখ্যার মাঝে সুরক্ষা দিতে পারবে কি না, তা পরীক্ষা করে দেখছি।

পরীক্ষা সফল হলে অক্সফোর্ড ভ্যাকসিন গ্রুপ আশা করছে, চলতি বছরের শেষ নাগাদ তারা কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন বাজারে ছেড়ে দিতে পারবে। ভ্যাকসিনটির কার্যকারিতা প্রমাণিত হলেই এটি হবে সবচেয়ে দ্রুত তৈরি করা ভ্যাকসিন, যা পরীক্ষাগার থেকে ব্যবহারের জন্য অনুমোদন পাবে।

অক্সফোর্ডের এই ভ্যাকসিন তৈরিতে চুক্তিবদ্ধ হয়েছে ভারতের সেরাম ইন্সটিটিউটও। প্রতিষ্ঠানটি ১০ কোটি মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করে নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোর জন্য ১০০ কোটি ডোজ ভ্যাকসিন প্রস্তুত করছে।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এখন করোনাভাইরাসের টিকা আবিষ্কারের লড়াই চলছে। এখন পর্যন্ত দুই শতাধিক ভ্যাকসিন বা টিকা নিয়ে গবেষণার খবর পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল চলছে ১৫টির। ইতোমধ্যে মানবদেহে বেশ কয়েকটি ভ্যাকসিন প্রয়োগের পরীক্ষাও শুরু হয়েছে।

এদিকে, ভ্যাকসিন নিয়ে গবেষণার মধ্যে অন্যতম চীনের চায়না ন্যাশনাল বায়োটেক গ্রুপের (সিএনবিজি) তৈরি ভ্যাকসিন।  এর গবেষকরা দাবি করছেন, মানদেহের ওপর সম্পূর্ণ নিরাপদ তাদের ভ্যাকসিনটি।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের বরাতে জানা যায়, সিএনবিজির গবেষকরা প্রথম ধাপে মাবনদেহে পরীক্ষামূলক ভ্যাকসিন প্রয়োগের ফলাফল বিশ্লেষণ করেছেন। এতে মানবদেহে কোনো পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। তাছাড়া ভাইরাসের সংক্রমণ থেকেও সবাই সুস্থ আছেন এখন পর্যন্ত।

গবেষকরা বলছেন, ভ্যাকসিন প্রয়োগের পর সংশ্লিষ্টদের দেহে তারা উচ্চমাত্রায় এন্টিবডির উপস্থিতি পেয়েছেন।  প্রথম ধাপে তারা যে ১ হাজার ১২০ জনের ওপর ভ্যাকসিন প্রয়োগ করা হয়, তাদের সবার দেহেই এন্টিবডি পাওয়া গেছে। তারা সবাই এখন পর্যন্ত সুস্থ আছেন।

জানা যায়, করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন আবিষ্কারের লক্ষ্যে চীনে ৮টি বড় গবেষণা চলমান। এর মধ্যে কিছু গবেষণা বিশ্বের অন্যান্য দেশের সঙ্গে অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে পরিচালিত হচ্ছে। বাকিগুলো নিয়ে চীনা গবেষকরা এককভাবে কাজ করছেন। ভ্যাকসিন আবিষ্কারের দৌড়েও বেশ এগিয়ে আছেন তারা।

মানবদেহে একটি ভ্যাকসিনের পরীক্ষামূলক প্রয়োগ সাধারণত ৩টি ধাপে সম্পন্ন করা হয়। সিএনবিজির গবেষণাটি দ্বিতীয় ধাপ শেষ করে তৃতীয় ধাপে প্রবেশ করেছে।  এ জন্য চীন আরব আমিরাতের সাথে ইতোমধ্যে চুক্তি সম্পন্ন করেছে। শিগগিরই আমিরাতে পরীক্ষামূলকভাবে ভ্যাকসিনটি প্রয়োগ করা হবে।

মানবদেহে পরীক্ষামূলক প্রয়োগের সব ধাপে নিরাপদ প্রমাণিত হলেই কেবল একটি ভ্যাকসিন গ্রহণযোগ্য বলে বিবেচিত হয়। এর পরই তা গণহারে প্রয়োগের অনুমতি দেওয়া হয়।

এখন পর্যন্ত অক্সফোর্ড, চীন ও অস্ট্রেলিয়ার তিনটি ভ্যাকসিন চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে।  তবে এরমধ্যে অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিন এগিয়ে রয়েছে।

সবকিছু ঠিক থাকলে চলতি বছরের শেষ হয়তো ভ্যাকসিন পৌছে যাবে সবার হাতে। মিলবে প্রাণঘাতি এই ভাইরাস থেকে মুক্তি।

 

আরও সংবাদ

Close