খোলা জানালা

সিলেটের আকাশ থেকে খসে পরলো আরেকটি ধ্রুবতারা

মাহবুব আহমদ রুমন

মোহাম্মদ আবদুল হক এম এ হক কিংবা হক সাব নামে সমধিক পরিচিত।হক সাব সিলেটের রাজনৈতিক অঙ্গণের দীর্ঘদিনের পরিচিত মুখ।এক নামে চেনে সবাই।সজ্জন,বিনয়ী,পরিচ্ছন্ন রাজনীতিবিদ হিসেবে সমাদৃত ছিলেন সবার কাছে।

সিলেটবাসীর প্রিয় এই নেতা আজ সকালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সিলেটের নর্থইস্ট মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ইন্তেকাল করেছেন (ইন্নালিল্লাহী ওয়া ইন্না ইলাহী রাজিউন)।এম এ হকের বিদায়ে সিলেটের আকাশ থেকে খসে পরলো আরেকটি ধ্রুবতারা।সিলেটের বিরোধী মতাদর্শের নেতারাও সমীহ করতেন এম এ হক সাবকে।

সিলেটের মানুষ প্রায়ই বলতেন, এম এ হক সাব একজন নামি দামি ও ভালো মানুষ।একজন ব্যবসায়ী হিসেবে যথেষ্ট সুনাম রয়েছে তার।সিলেট বিএনপির অভিভাবক এম এ হকের জন্ম ১৯৫২ সালের ১ জুলাই সিলেটের বালাগঞ্জের কলুমা মোহাম্মদপুর গ্রামে।তিনি ১৯৮৬ সালের ২০ শে মার্চ দক্ষিণ সুরমার বনেদি পরিবারের কন্যা রওশন জাহান চৌধুরীর সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন।বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ এম এ হক সরাসরি রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত হন ১৯৯১ সালে।ব্যবসায় উপার্জিত টাকা ঢেলেছেন রাজনীতিতে।

১৯৯১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সিলেট-২ (বালাগঞ্জ-বিশ্বনাথ) আসন থেকে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন।১৯৯৩ সালে কাউন্সিলের মাধ্যমে সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি হন।দীর্ঘ এক যুগ পালন করেন সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতির দায়িত্ব।১৯৯৬ থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত পালন করেন বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব।নিজ দল ছিলো একাধিকবার ক্ষমতায়।নিজে ছিলেন ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে।কিন্তু কখনোই ক্ষমতার অপব্যবহার করেননি।গাঁয়ে লাগতে দেননি দুর্নীতির কলঙ্ক।এজন্য সবার কাছে ছিলেন শ্রদ্ধার পাত্র।একজন ত্যাগী নিবেদিত দলপ্রাণ নেতা হিসেবে সিলেটের বিএনপির প্রতিটি নেতা-কর্মী বহুকাল মনে রাখবে তার ত্যাগ-তিতিক্ষা ও অবদানের কথা।

২০০৩ ও ২০০৮ সালে দুই দফায় মেয়র প্রার্থী হিসেবে অংশ নেন সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে।যশ,খ্যাতি,সম্মান সবই পেয়েছেন।কেবল হতে পারেননি নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি।জনপ্রতিনিধি না হলেও ছিলেন সত্যিকার অর্থের জনগণের নেতা।কপালে ছিলো না তার জনপ্রতিনিধিত্ব করা।এ নিয়ে কখনো জোড়াজোড়িও করেননি।কিন্তু চাইলেই করতে পারতেন।নিজ দল ক্ষমতায়,প্রভাবশালী মন্ত্রী ছিলেন তার অভিভাবক।এতকিছু থাকতে জনগণের অধিকার হরণ করতে চাননি বলে আজো সবার কাছে হক সাবের জনপ্রিয়তা আকাশচুম্বি।

রাজনীতির ময়দান থেকে তাকে ছুঁড়ে ফেলা হয়েছিলো বহুবার।উঠে এসেছেন খাদের কিনার থেকে।ধরেছেন হালও।বিএনপি সরকারের শাসনামলের শেষদিকে কোণঠাসা হয়ে পরেন নিজ দলে।অসুস্থ স্ত্রীর চিকিৎসা ও নিজের অসুস্থতায় অর্থনৈতিক টানাপোড়নের সম্মুখীন হতে হয় তাকে।তারপরেও ছিলেন রাজনীতির অন্তঃপ্রাণ।সিলেট মহানগর বিএনপির সভাপতি হওয়ার মধ্যদিয়ে আবারো ঘুরে দাঁড়ান রাজনীতিতে।

সর্বশেষ বিএনপির ৫ম জাতীয় কাউন্সিলে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মনোনীত হন।মৃত্যুর পূর্বপর্যন্ত তিনিই ছিলেন সিলেট বিএনপির শীর্ষ নেতা।এম এ হক নিয়মিত পাঁচওয়াক্ত নামাজ আদায় করতেন।ফজরের নামাজের পর পবিত্র কুরআন শরীফ তেলাওত করতেন।অত্যন্ত সৌভাগ্যবান একজন মানুষ আমাদের সবার প্রিয় হক সাব।

পবিত্র জুমার দিনে তিনি বিদায় নিয়েছেন আমাদের মাঝ থেকে।জুমার দিনে মারা গেলে আলাদা ফজিলত রয়েছে। কবর দেশে ভালো থাকুন সিলেটের মানুষের প্রিয় নেতা এম এ হক ভাই।

 

লেখকঃ সাবেক যুগ্ম-আহবায়ক ওসমানীনগর উপজেলা ছাত্রদল।

আরও সংবাদ

আরও দেখুন

Close
Close