খোলা জানালা
হারিয়ে গেছে ঈদের সেই আনন্দ
মাহবুব আহমদ রুমন
ত্যাগের মহিমায় চিরভাস্বর পবিত্র ঈদ-উল-আযহা সমাগত।দুনিয়াজুড়ে চলছে মহামারি করোনা ভাইরাসের প্রকোপ।ব্যতিক্রম নয় জন্মভূমি বাংলাদেশেও।করোনাময় পৃথিবীতে শত বছরেও এমন ঈদ-উল-আযহা কেউই দেখেনি।তার উপর চলছে দেশে বন্যা।করোনায় অসংখ্য অগণিত মানুষের চলে যাওয়াতে গোটা দেশ বিষাদময়।এ রকম দুঃসহ বেদনাদায়ক পরিস্থিতির মধ্যদিয়ে আমরা উদযাপন করতে যাচ্ছি ঈদ-উল আযহা।
পবিত্র ঈদকে ঘিরে হৃদয়ের ক্যানভাসে জড়ো হয়েছে অজস্র স্মৃতি।স্মৃতি কাতরতায় বিভোর হয়ে যাই।আমার শৈশবের ঈদই হলো ঈদের মধুরতম স্মৃতি।সেই স্মৃতি স্মরণ করে বিষণ্নতাবোধ করি।বহু ঈদের আনন্দ আমাকে আলোড়িত করছে।এখন আর ঈদের সেই আনন্দ নেই।হারিয়ে গেছে ঈদের সেই আনন্দ।ছোটবেলায় ঈদের আগের দিন রাতে বন্ধুদের সাথে ঈদের চাঁদ দেখতে বের হতাম।ভোর বেলা ঘুম থেকে উঠে গোসল শেষে বাবার সাথে ঈদগাহে যেতাম।তখন নামাজ পড়তাম না।ঈদগাহের পিছনে বন্ধুদের সাথে দাঁড়িয়ে থাকতাম।
আজ এই ক্ষণে স্মৃতিতে ভাসে কত আপনজনের মুখ।ছোটবেলার আনন্দময় দিনগুলোকে স্মৃতির ঝাঁপি খুলে খুঁজে বেড়াই।ফিরে যাই ফেলে আসা সেই দিনগুলোতে।ছোটবেলায় ঈদের আনন্দে ঘুম হতো না।ছোটবেলায় কোনো দায়িত্ব ছিলো না।শুধু মজা আর মজা।ঈদের কাপড় আগে কাউকে দেখাতাম না।এমনকি কেউ যেনো দেখতে না পায় সেজন্য আলমারিতে তালাবদ্ধ করে রাখতাম।ঈদ আর নতুন জামা কাপড় পাওয়া,হৈচৈ করে বন্ধু-বান্ধবদের নিয়ে ঘুরে বেড়ানো আরও কত কি।কার জামা কাপড় কত সুন্দর তা নিয়ে বন্ধুদের সঙ্গে রীতিমতো প্রতিযোগিতা চলতো।
ঈদের দিন পাড়া-প্রতিবেশি,বন্ধু-বান্ধব আত্মীয়-স্বজনদের বাড়িতে ঘুরতে যেতাম।এখনকার আর তখনকার ঈদের মধ্যে পার্থক্য স্বাভাবিকভাবেই অনেক।ছোটবেলার ঈদ মানে শুধুই আনন্দ।সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সবকিছু পাল্টে যায়।ঈদের আনন্দও পাল্টেছে।আগে গ্রামে দেখতাম,কুরবানির ঈদের সময় যারা কুরবানি দিতেন তারা পাড়া-প্রতিবেশির বাড়িতে গোস্ত দিয়ে পাঠাতেন।তখন গ্রামে বিদ্যুৎ ছিলো না।ছিলো না ঘরে ঘরে ফ্রিজ।গোস্ত বিভিন্ন প্রক্রিয়াজাত করে রাখা হতো।
বিশেষ করে দেখতাম গোস্ত শুকানো হতো।গোস্তের ঘ্রাণে চলাফেরা করা ছিলো কষ্টসাধ্য।সেই দৃশ্য এখন আর দেখা যায় না।যারা কুরবানি দেন তারা গোস্ত তেমন একটা বন্টন না করে ফ্রিজে রেখে দেন।এমন কি দুস্থ-অসহায়,ফকির মিসকিনদের মধ্যে কুরবানির গোস্ত বন্টন করারও দৃশ্য খুব একটা দেখা যায় না।দিন দিন যুগ পাল্টাচ্ছে।আধুনিকায়নে কমছে আন্তরিকতার টান।পবিত্র ঈদ-উল-আযহা নিয়ে আসুক করোনামুক্ত সুস্থ-সুন্দর-মানবিক পৃথিবী।সবার ঈদ ভালো কাটুক।
লেখকঃ কথাসাহিত্যিক ও সাবেক যুগ্ম-আহবায়ক ওসমানীনগর উপজেলা ছাত্রদল।