শীর্ষ খবর
সিলেটের ওয়াজ মাহফিল কঠোর নজরদারীতে : হচ্ছে রেকর্ড
এবারের শীত মৌসুমে সিলেটে কমেছে ওয়াজ কিংবা বার্ষিক জলসার সংখ্যা। বিগতবছরের তুলনামূলক এ সংখ্যা অনেক অনেক বেশি ছিল। তবে এবার সিলেটের ওয়াজ মাহফিলে কোথায় কোন বক্তা বক্তব্য দিচ্ছেন, কারা মাহফিলের আয়োজন করেছেন সেসব বিষয় গুরুত্বসহকারে খতিয়ে দেখার পাশাপাশি নজরদারি বাড়ানোর নির্দেশনা রয়েছে পুলিশ সদর দফতরের। গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ইতোমধ্যে পুলিশ সদর দফতরকে আরও কঠোর হওয়ার নির্দেশনাও প্রদান করেছে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়। নির্দেশনার পর থেকে সিলেটে বাড়ানোয় হয়েছে নজরদারি।
ওয়াজ মাহফিলে যেসব বক্তা কৌশলে রাজনৈতিক বক্তব্য দিয়ে থাকেন মূলত তাদের ব্যাপারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী রয়েছে সর্তক। সেই সাথে ওয়াজ মাহফিলে আগত বক্তাদের রাজনৈতিক পরিচয়ের পাশাপাশি মাহফিলে কোন বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হবে কিনা সেসব বিষয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মাহফিল হওয়ার আগেই খতিয়ে দেখছে। এদিকে, বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নিয়ে বক্তব্য দেওয়া হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হকের গোলাপগঞ্জের ভাদেশ্বরে আসলেও উঠতে পারেননি ওয়াজ মাহফিলের মঞ্চে গত মঙ্গলবার। ওইদিন গোলাপগঞ্জের ভাদেশ্বর ইউনিয়নের শেখপুর শাহী ঈদগাহ ময়দানে শেখপুর তরুণ সংঘের উদ্যোগে আয়োজিত ওয়াজ মাহফিলের অতিথি করা হয়েছিলো মামুনুল হককে। তবে বিতর্কের মুখে ও প্রশাসনের হস্তক্ষেপে মঞ্চে না উঠেই চলে যেতে হয় তাকে। শেষ পর্যন্ত মামুনুল হককে বাদ দিয়েই অনুষ্ঠিত হয় মাহফিল।
এ ব্যাপারে গোলাপগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ হারুনুর রশীদ চৌধুরী জানান, প্রশাসনের অনুমতি না থাকায় এবং আইনশৃঙ্খলা বিঘ্ন ঘটার আশংকায় বয়ান দিতে দেওয়া হয়নি তাকে।
মহানগর পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার (গণমাধ্যম) এবিএম আশরাফ উল্যাহ তাহের বলেন, মহানগরী এলাকায় ওয়াজ মাহফিল কিংবা জলসা করতে হলে পুলিশকে জানাতে হবে আগে। এসব মাহফিলে কারা বক্তব্য দিবেন তাদের রাজনৈতিক পরিচয় কি সেসব তথ্যও পুলিশকে দিতে হবে। এরপর পুলিশ যাচাই-বাছাই করার পর তা যথাযথ মনে হলে পুলিশ অনুমতি দিবে অন্যথায় অনুমতি দিবে না। আরও বলেন, মহানগরী এলাকার ওয়াজ হলে তা পুলিশের নজরাদারিতে রয়েছে। সেই সাথে মাহফিলের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা পর্যবেক্ষণ করার পাশাপাশি করে রাখেন রেকর্ডও।
জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর ও গণমাধ্যম) লুৎফর রহমান বলেন, ওয়াজ মাহফিল সহ বিভিন্ন বিষয়ে পুলিশের আগ থেকেই দেয়া আছে নির্দেশনা। পুলিশের নির্দেশনা মেনেই আয়োজন করতে হবে ওয়াজ মাহফিলের। এছাড়াও ওয়াজ মাহফিলে কারা বক্তব্য দিবেন আয়োজক কারা এসব বিষয় পুলিশকে জানাতে হবে আগে। এরপর পুলিশ যাচাই-বাছাই করার পর নির্ধারণ করবে পরবর্তী করণীয়। মাহফিলগুলোতে নজরদারি করে আসছে সাদা পোশাকে পুলিশ। জেলা পুলিশের এক কর্মকর্তা জানান, গত বছরের ডিসেম্বর মাসে গোয়েন্দা সংস্থার একটি দল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ে একটি প্রতিবেদন দাখিল করে। এই প্রতিবেদনে রয়েছে সিলেটের নামও। এরপর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয় থেকে পুলিশকে ওয়াজ মাহফিলের ব্যাপারে সর্তক থাকার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এরপর থেকে সিলেটে বাড়ানো হয়েছে গোয়েন্দা নজরদারি।
সূত্র জানায়, গোয়েন্দা সংস্থার দাখিলকৃত প্রতিবেদনে বলা হয় হেফাজতে ইসলামের কওমি ধারার কিছু বক্তা সম্প্রতি ওয়াজে রাজনীতি এবং সরকারের নানা ইস্যুকে নিয়ে আসছেন টেনে। তবে তরিকত ও মারেফতে বিশ্বাসী বক্তারা তাদের বক্তব্যে রাজনীতি এবং চলমান ইস্যু টানেন না। সিলেটে মাহফিল অনুষ্ঠিত হওয়ার আগে পুলিশ ও বিভিন্ন সংস্থার সদস্যদের মাহফিলের বক্তা কারা, তার কোনো রাজনৈতিক পরিচয় আছে কি-না বা এর আগে কোনো জেলায় বক্তব্য দিতে গিয়ে ওই এলাকায় হট্টগোল সৃষ্টি হয়েছে কি-না তা খতিয়ে দেখতে সুপারিশ করা হয়েছে। সত্যতা থাকলে সঙ্গে সঙ্গে মাহফিল করতে নিষেধ করতে হবে কমিটিকে। যদি মাহফিল কমিটি মাহফিল বন্ধ করতে রাজি না হয়, তবে আইনের সুষ্ঠু প্রয়োগের মাধ্যমে সেই মাহফিল করতে হবে।
সূত্র: ইনকিলাব