আন্তর্জাতিকশীর্ষ খবর

ইসরাইলের সাথে কোন সম্পর্ক চায় না বাংলাদেশ

রাজনৈতিক বা অর্থনৈতিক বিশেষ কোন প্রাপ্তি নেই বাংলাদেশের ইসরাইলের সাথে সম্পর্ক স্থাপনে। স্বাধীনতার পর থেকে এ পর্যন্ত ইসরায়েল-ফিলিস্তিনি বিরোধে বাংলাদেশের অবস্থান একেবারে স্পষ্ট। ফিলিস্তিনিদের স্বতন্ত্র-স্বাধীন রাষ্ট্রের পক্ষে বাংলাদেশ বলিষ্ঠ অবস্থান নিয়েছে একেবারে শুরু থেকেই।

বাংলাদেশের এই অবস্থানে যে অদূর ভবিষ্যতেও কোন পরিবর্তন আসবে, তেমন সম্ভাবনা একেবারেই দেখছেন না বিশ্লেষকরা। তাদের মতে, এর কারণ যতটা না আন্তর্জাতিক, তার চেয়ে অনেক বেশি বাংলাদেশের জনমত এবং আভ্যন্তরীণ রাজনীতি।

১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর শুরুর দিকে যে কয়েকটি দেশ বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়ার প্রস্তাব করেছিল, তারমধ্যে ছিল ইসরায়েল।

১৯৭২ সালের ৪ঠা ফেব্রুয়ারি ইসরায়েল বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়ার প্রস্তাব করেছিল।

তখন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বাধীন সরকার লিখিতভাবে ইসরায়েলের স্বীকৃতি প্রত্যাখ্যান করেছিলেন।

সেই অবস্থানের পিছনে মূল বিষয় ছিল ফিলিস্তিনিদের স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের সমর্থন।

আজ ১২ সেপ্টেম্বর বিবিসি বাংলায় প্রকাশিত এ সম্পর্কিত এক প্রতিবেদেন থেকে এ তথ্য জানা গেছে। বিবিসি বাংলা-কে দেয়া সাক্ষাৎকারে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেছেন, কোন রাজনৈতিক ঝুঁকি বা সমস্যা তাদের সরকারের বিবেচ্য বিষয় নয়। তাদের সরকার নৈতিকতার জায়গা থেকে ফিলিস্তিনি স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রামের পক্ষে রয়েছে এবং থাকবে বলে তিনি উল্লেখ করেছেন।

“বাংলাদেশের জন্মলগ্ন থেকেই বা তার অব্যহিত পরেই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান খুব পরিস্কারভাবেই বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সম্মেলনে একথাটি বলেছেন যে, আমরা প্যালেস্টাইনের জনগণের পক্ষে আছি, আমরা একটি স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পক্ষে আছি। এই নীতিতে আমরা বিশ্বাস করি। সেই ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত বাংলাদেশের সাথে ইসরায়েলের সম্পর্কবিহীন যে পথ চলা, সেটা অব্যাহত থাকবে।”

বলেছেন, ফিলিস্তিনিদের দাবি এড়িয়ে বাংলাদেশ আপোষ করতে পারে না।

“অন্য দেশ বা অন্য আরেকটি মুসলিম দেশ ইসরায়েলের সাথে কি করছে-এর আগেও হয়েছে, আমরা দেখেছি জর্ডানে ইসরায়েলের দূতাবাস আছে। এবং একাধিক মুসলিম রাষ্ট্রের সাথে তাদের সম্পর্ক আছে। আমরা যতটুকু জেনেছি বা বলা হয়েছে আমাদের, যে এই প্রক্রিয়া ফিলিস্তিনিদের অধিকার আদায়ে সহায়তা করতে পারে। ঐ মুসলিম রাষ্ট্রগুলো এটা বলছে। এটা কতটুকু বিশ্বাসযোগ্য-সেটা আমরা অপেক্ষায় থাকবো। কিন্তু বিষয়টি হলো এটা তৃতীয় আরেকটি রাষ্ট্রের বিষয়। কিন্তু বাংলাদেশের অবস্থানে এখানে কোন পরিবর্তন নেই।”

যেহেতু ইসরায়েল একটি ধর্মভিত্তিক রাষ্ট্র সেজন্য এবং ফিলিস্তিন ইস্যুতে ইসরেইলের কার্যক্রম নিন্দাজনক তাই বাংলদেশের কোন রাজনৈতিক দল বা কোন গোষ্ঠী এমনকি সাধারণ মানুষও চায় না বাংলাদেশ ইসরাইলের সাথে কোন সম্পর্কে জড়াক। এক্ষেত্রে আওয়ামীলীগ-বিএনপি ঐক্যমত।

বিবিসিকে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, বাংলাদেশের কোন দলই ইসরায়েলের সাথে সম্পর্ক চাইবে না বলে তিনি মনে করেন।

“প্যালেস্টাইনকে নিয়ে বাংলাদেশের যে কমিটমেন্ট, সেটা হচ্ছে, প্যালেস্টাইনের যে মুক্তিযুদ্ধ বা স্বাদীনতা সংগ্রাম, তাকে বাংলাদেশের সব রাজনৈতিক দল সব সময়ই সমর্থন করে এসেছে। সেখানে ইসরায়েলের যে ভূমিকা ছিল, সেই ভূমিকাকে সব দলই সব সময় নিন্দা জানিয়েছে। এখানে কোন দল বা কোন সরকার আলাদা কোন অবস্থান নেয়নি।”

বিবিসি জানিয়েছে, ইসরায়েল মধ্যপ্রাচ্যের পাশাপাশি দক্ষিণ এশিয়াতেও নতুন সম্পর্ক তৈরির চেষ্টা করছে। সম্প্রতি ইসরায়েলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এশিয়া নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছে। তাতে ইসরায়েলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ডেপুটি ডাইরেক্টর জেনারেল সাংবাদিকদের সাথে কথা বলেন। এটি ছিল মূলত এশিয়ার দেশগুলোর সাথে ইসরায়েলের সম্পর্ক নিয়ে। সাংবাদিকরা দক্ষিণ এশিয়া সম্পর্কে ইসরায়েলের অবস্থান জানতে চেয়েছিলেন। জবাবে ইসরায়েলের ঐ কর্মকর্তা বলেছেন, ইসরায়েল সবার সাথে সম্পর্ক করতে চায় এবং সবার সাথে সর্ম্পক স্থাপনের একটা চেষ্টাও হচ্ছে।”

রাজনৈতিক বিশ্লেষক অধ্যাপক রওনক জাহান ফিলিস্তিন ইস্যুকে এড়িয়ে বাংলাদেশ ইসরায়েলের সাথে যাবে না বলে তিনি মনে করেন। তিনি বলেছেন, “যদিও এখন সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং সৌদি আরব সম্পর্ক করছে। কিন্তু এই সম্পর্কের ব্যাপারে আরব দেশগুলোতে কতটা জনসমর্থন আছে? কারণ সরকারগুলোতো সম্পর্ক করতে পারে। কিন্তু আরব দেশগুলোর জনগণতো এতদিন প্যালেস্টাইনের স্বাধীনতার পক্ষে ছিল। অতএব বাংলাদেশের পক্ষে এখনই আগ বাড়িয়ে এটার মধ্যে যাওয়ারতো প্রশ্ন আসে না।”

মূলত ইসরাইলের সাথে কোন ধরনের সম্পর্কে জড়িয়ে বাংলাদেশের কোন দিকেই তেমন বিশেষ কোন প্রাপ্তি নেই। উল্টো এতে ইসরাইলের স্বার্থ নিহিত রয়েছে। বাংলাদেশ বিশ্বে একটি গুরুত্বপূর্ণ দেশ হিসেবে পরিচিতি পাচ্ছে। অনেক দেশ থেকে বিনিয়োগকারীরা আসছেন এখানে। সস্তা শ্রমের ফলে দ্রুত প্রসার ঘটছে বৈদেশিক বিনিয়োগের। ইসরাইলের সে সুযোগটা নিতে চায়। পাশাপাশি দক্ষিণ এশিয়ার মুসলিম প্রধান দেশ বাংলাদেশ যদি তাদের সাথে সম্পর্কে জড়ায় এতে করে ইসরাইল  বাংলাদেশের কাছ থেকে স্বীকৃতি পেয়ে গেল একটি দেশ হিসেবে। ফলে বিশ্লেষকদের মতে বাংলাদেশ-ইসরাইল সম্পর্কে বাংলাদেশের বিশেষ কোন লাভ হবে না উল্টো দেশের অভ্যন্তরে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হতে পারে।

এ প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভার অধ্যাপক লাইলুফার ইয়াসমিন বিবিসিকে বলেন, বাংলাদেশে কখনও ঐকমত্য না হলে একক কোন নেতৃত্ব ইসরায়েলের সাথে কোন সম্পর্ক করতে চাইলে সেই নেতৃত্বকে বড় রাজনৈতিক মূল্য দিতে হতে পারে।

“আমাদের সকলের একটা সেন্টিমেন্ট আছে প্যালেস্টাইনের প্রতি। সেজন্য আমি মনে করি, ইসরায়েলে সাথে কিছু করতে হলে একটা জাতীয় ঐকমত্য দরকার। আর কোন একক নেতৃত্ব যখন এ ব্যাপারে কোন সিদ্ধান্ত নেবে, সেটা কিন্তু সেই নেতৃত্বের জন্য দেশের অভ্যন্তরে খারাপ হতে পারে।”

অধ্যাপক লাইলফার ইয়াসমিন মনে করেন, ইসরায়েল প্রযুক্তিগত দিক থেকে অনেক উন্নত। কিন্তু বাংলাদেশ বিকল্প অনেক দেশ থেকেই প্রযুক্তিগত সহযোগিতা নিচ্ছে। ফলে ইসরায়েলের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ক করার প্রয়োজন বা তাগিদ নেই।

আরও সংবাদ

Close