শীর্ষ খবর

সেই পাইপ ২২ বছর ধরে পরিত্যাক্ত : তবু গ্যাস বন্ধ করেনি তিতাস

নারায়ণগঞ্জের পশ্চিম তল্লার বায়তুস সালাত জামে মসজিদে বিস্ফোরণে প্রাণহানির পর পাশের মাটি খুঁড়ে যে গ্যাসপাইপে ছয়টি ছিদ্র পাওয়া গেছে, সেটি ২২ বছর ধরে কোনো কাজে না লাগলেও তাতে গ্যাসের প্রবাহ বন্ধ করা হয়নি।

ওই পাইপের ছিদ্র থেকে গ্যাস বেরিয়ে তা মসজিদে জমা হয়ে এই বিস্ফোরণ ঘটেছে বলে ধারণা করছেন ঘটনার তদন্ত সংশ্লিষ্ট ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা।

মূল যে লাইন থেকে ওই পাইপে গ্যাস আসে, সেখানে ১৯৯৮ সালে আরেকটি মোটা পাইপ বসিয়ে আশপাশের বাড়িগুলোতে গ্যাস সংযোগ দেওয়া হয়েছে। এরপর অপ্রয়োজনীয় হয়ে পড়া ওই লাইনে কেন গ্যাস বন্ধ করা হয়নি, তার সদুত্তর দিতে পারেনি তিতাস গ্যাসের স্থানীয় কর্মকর্তারা।

তারা বলছেন, যারা ওই পাইপ বসিয়ে গ্যাস সংযোগ নিয়েছিল তাদেরই ‘দায়িত্ব ছিল’ বিষয়টি তিতাস কর্তৃপক্ষের নজরে আনা। তারা তা করেননি বলেই মূল লাইন থেকে এই পাইপের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়নি।

তবে স্থানীয় অফিসের এই ব্যাখ্যার সঙ্গে একমত নন তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। তার মতে, পরিত্যক্ত লাইনের বিষয়ে স্থানীয় অফিসেরই ব্যবস্থা নেওয়ার কথা ছিল।

এদিকে এই ঘটনার ১০-১২ দিন আগেই মসজিদে গ্যাসের গন্ধ পেয়েছেন বলে জানিয়েছেন মসজিদ কমিটির নেতারা। তারপরেও কেন মসজিদের জানালা খোলা রাখা হয়নি, সে বিষয়েও তাদের কাছে কোনো ব্যাখ্যা পাওয়া যায়নি।

তবে নামাজ পড়ে বিস্ফোরণের আগ মুহূর্তে মসজিদ থেকে বেরিয়ে আসা পাশের একজন দোকানদার বলেছেন, যেদিন বিস্ফোরণ ঘটে, তার আগের দুই দিন প্রচণ্ড গরম ছিল। সে কারণে মসজিদের এসি ব্যবহার করতে চেয়েছিলেন তারা। আর এসি চালালে জানালগুলো বন্ধ রাখতেই হয়।

গত ৪ সেপ্টেম্বর রাত সাড়ে ৮টার দিকে এশার নামাজ চলাকালে ফতুল্লার পশ্চিম তল্লা এলাকার বায়তুস সালাত জামে মসজিদে বিকট শব্দে বিস্ফোরণে অর্ধশতাধিক মানুষ অগ্নিদগ্ধ হন।

তাদের মধ্যে এক শিশু এবং ওই মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন, মসজিদ কমিটির সাধারণ সম্পাদক, কোষাধ্যক্ষসহ অন্তত ৩১ জনের মৃত্যু হয়েছে। আরও কয়েকজন আশঙ্কাজনক অবস্থায় শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন আছেন।

মসজিদের ছয়টি এসির বিস্ফোরণে ওই ঘটনা ঘটেছে বলে প্রাথমিকভাবে মনে করা হলেও পরে জানা যায়, মসজিদের পাশ দিয়ে চলে যাওয়া তিতাসের গ্যাসলাইনে ছিদ্র থাকায় মসজিদের ভেতরে গ্যাস জমা হয়। বৈদ্যুতিক স্পার্ক থেকে ওই গ্যাসে আগুন ধরে বিস্ফোরণের এ ঘটনা ঘটে বলে ফায়ার সার্ভিস কর্মকর্তাদের ধারণা।

ফায়ার সার্ভিসের পাশাপাশি তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ, জেলা প্রশাসন এবং নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন এ ঘটনার তদন্ত করছে।

বায়তুস সালাত মসজিদের পূর্ব পাশে উত্তর-দক্ষিণমুখী একটি সড়ক পশ্চিম তল্লা থেকে রেললাইন পার হয়ে খানপুর পর্যন্ত চলে গেছে। ওই সড়ক থেকে মসজিদের উত্তরপাশ ঘেঁষে ছয় ফুট প্রশস্ত আরেকটি রাস্তা পশ্চিম দিকে সবুজবাগের দিকে গেছে। দুটি রাস্তাই কংক্রিট ঢালাই করা।

 

সূত্র-বিডি নিউজ

আরও সংবাদ

Close