আজকের সিলেট
নগরে সদস্য, জেলায় উপদেষ্টা পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন
সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সদস্য হলেন সিলেট-১ আসনের এমপি ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন। একই সাথে সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের কমিটিতে উপদেষ্টা হিসেবেও রাখা হয়েছে ড. মোমেনকে।
শুক্রবার (৮ জানুয়ারি) বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এমপি এ দুই কমিটি অনুমোদন করেন।
ড. এ কে আব্দুল মোমেনে জন্ম ১৯৪৭ সালের ২৩ আগস্ট। ড. মোমেনের বাবা অ্যাডভোকেট আবু আহমদ আবদুল হাফিজ ছিলেন একজন বলিষ্ঠ আইনজীবী এবং রাজনীতিবিদ। মোমেনর মাতা সৈয়দা শাহার বানু ছিলেন আসাম পার্লামেন্টের প্রথম মুসলিম নারী এমপি। তিনি ছিলেন ভাষা আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক এবং সিলেটে নারী জাগরণের অগ্রদূত। তার বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবন ভাষা আন্দোলন এবং সিলেটের ঐতিহাসিক গণভোটে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
ড. এ কে আবদুল মোমেন ২০০৯ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত ড. মোমেন জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি এ দায়িত্ব পালনকালে বাংলাদেশ সর্বোচ্চ সংখ্যক শান্তিরক্ষী বাহিনী পাঠানোর মর্যাদা লাভ করেন। এছাড়া তার সময়ই বাংলাদেশ থেকে নারী শান্তিরক্ষী, নেভাল ফোর্স প্রথম পাঠানো হয়। জাতিসংঘের মাধ্যমে বাংলাদেশের সমুদ্র বিজয়, জলবায়ু পরিবর্তন ইস্যুতে ক্ষতিপূরণের দাবি, সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এমডিজি) অর্জনসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করেন ড. এ কে আবদুল মোমেন।
বর্ণাঢ্য কর্মজীবনে তিনি সৌদি আরব ও যুক্তরাষ্ট্রের একটি প্রকল্পে অর্থনৈতিক উপদেষ্টা হিসেবে কৃতিত্বের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেন। সৌদি আরবে কর্মরত অবস্থায় তিনি প্রবাসী বাংলাদেশিদের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে কাজ করেন। এছাড়াও যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেসে অনাকাঙ্ক্ষিত শিশুশ্রম, শিশুকে জঙ্গি হিসেবে ব্যবহার এবং শিশু যৌনকর্মী ব্যবহারের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিয়েছেন। ড. এ কে আবদুল মোমেন যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় দুই যুগ শিক্ষকতা করেছেন। ড. এ কে আব্দুল মোমেন বাংলাদেশের নারী ও শিশু পাচার বন্ধে বিশ্বজুড়ে আন্দোলন গড়ে তোলেন। ফলে ১৯৯২ সালে মুম্বাই থেকে ২৫টি শিশু এবং পাকিস্তান থেকে অসংখ্য মেয়েকে ফিরিয়ে আনা হয়। নারী ও শিশু পাচার বন্ধ, অপ্রাপ্ত বয়স্ক নারীদের খৎনা, শিশুদের উটের ঝুঁকি বন্ধকরণসহ বিশ্বে জনমত গড়ে তোলেন তিনি। ড. মোমেনের বলিষ্ঠ ভূমিকায় যুক্তরাষ্ট্র সরকার ১৯৯৪ সালে দুটি বিল পাস করে। ড. মোমেনের এ উদ্যোগ বিশ্ব মিডিয়ায় তোলপাড় সৃষ্টি হয়। ১৯৯৪ সালে বিল ক্লিনটন তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে অনুপ্রেরণা যোগান। ড. মোমেনকে ১৯৯০ সাল থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত মানব কল্যাণে অবদানের জন্য মার্কিন পত্রিকা ঈগল ট্রাইবুন ‘হোম টাউন হিরো’, মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন ‘‘হিউমেনিটারিয়ান অ্যাওয়ার্ড,’ ও নিউ ইয়র্কের প্রবাসী সংস্থা ‘ফ্রেন্ডস অব দি পুওর’ উপাধিতে ভূষিত করে।
ড. মোমেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতি বিএ (অনার্স) ও এমএ, এলএলবি, এবং যুক্তরাষ্ট্র থেকে পিএইচডি (অর্থনীতি), এমপিএ (হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়) করেন। কর্মজীবনের শুরুতেই স্বাধীনতা পরবর্তী বাংলাদেশ সরকারের বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী দেওয়ান ফরিদ গাজীর একান্ত সচিব হিসাবে বাংলাদেশের ওয়েজ আর্নার স্কিম চালু করেন। এটি বঙ্গবন্ধু সরকারের উল্লেখযোগ্য অবদান। অর্থমন্ত্রী এম সাইফুর রহমানের একান্ত সচিব থাকা অবস্থায় অনেক ঝক্কি ঝামেলা মোকাবেলা করে দেশের চা-বাগানগুলো ব্যক্তি মালিকানায় দেয়ায় ভূমিকা রাখেন আবদুল মোমেন। ১৯৮৮-৮৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ডেমোক্রেটিক প্রেসিডেন্সিয়াল পদপ্রার্থী মাইকেল ডুকাকিসের উপদেষ্টা ছিলেন।