শীর্ষ খবর

ধামাচাপার প্রশ্নে বিদ্ধ সিলেটের পুলিশ : রক্ষক যখন ভক্ষক

পুলিশ জনগণের বন্ধু। মানুষের জানমালের নিরাপত্তা প্রদানের জন্যই পুলিশ বাহিনীর জন্ম। অথচ সেই পুলিশের কপাইলেই আজ কলঙ্ক তিলক। রক্ষক যখন ভক্ষকের ভূমিকা পালন করে তখন সাধারণ মানুষের অবস্থা কতটা বিপদজনক হয়ে উঠে তা কল্পনার বাইরে। যেই পুলিশ বাহিনী অন্যায়কে দমন করে ভুক্তভোগীর পাশে দাঁড়ানোর কথা সেই পুলিশ উল্টো অপরাধীদের রক্ষার চেষ্টা চালায় আবার কখনো সে নিজেই অপরাধী।

সিলেটের পুলিশের সাম্প্রতিক কার্যক্রম নানা প্রশ্নের সম্মুখিন হচ্ছে। কখনো অপরাধকাণ্ডের বিষয়টি আড়ালে নেয়ার চেষ্টা চলছে সমঝোতার নামে আবার কখনো খোদ ভুক্তভোগীকে সাজানো হচ্ছে চিহ্নিত অপরাধী।

সম্প্রতি বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে রায়হান হত্যাকাণ্ড নিয়ে এমন অভিযোগ উঠে এসেছে। এসএমপির আওতাধীন বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়ির ভেতরে নির্যাতনে এক যুবকের মৃত্যুর অভিযোগ ওঠেছে। এ ঘটনায় রীতিমত কাঠগড়ায় সিলেট মহানগর পুলিশ। ওই ফাঁড়িতে সিলেট নগরের আখালিয়া এলাকার যুবক রায়হান আহমদের মৃত্যুর ঘটনায় ফাঁড়ির ইনচার্জসহ কয়েকজন পুলিশ সদস্যের নাম উঠে এসেছে।

গত রোববার সকালে রায়হানের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়ার পর মহানগর পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়া ও ভিন্নখাতে প্রবাহিতের চেষ্টা চালান। রায়হানকে ‘চিহ্নিত ছিনতাইকারী’ আখ্যা দিয়ে গণপিটুনিতে তার মৃত্যু হয়েছে বলে বিভিন্ন গণমাধ্যমে বক্তব্য দেন মহানগর পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। অথচ পরে অভিযোগ উঠে তাকে মাত্র ১০ হাজার টাকার জন্য নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছে।

সর্বশেষ এই ঘটনার প্রধান অভিযুক্ত এসআই আকবর হোসেন ভূইয়াকে পাওয়া যাচ্ছে না বলেও বিভিন্ন মাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। পুলিশের ব্যারাক থেকে অভিযুক্ত কর্মকর্তার পালিয়ে যাওয়ায় ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন ওঠেছে।

এর আগে ঘটে যায় সিলেটের ইতিহাসের আরেকটি কলঙ্কজনক ঘটনা। যার জন্ম দেয় ছাত্রলীগ। আর তাদের রক্ষায় পুলিশের চেষ্টার অভিযোগ রয়েছে।

গত ২৫ সেপ্টেম্বর রাতে সিলেটের মুরারী চাঁদ (এমসি) কলেজ ছাত্রাবাসের সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হন এক তরুণী। এই ঘটনার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যান শাহপরান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ আরও কয়েকজন কর্মকর্তা। তবে সময়ক্ষেপণ করে তারা ধর্ষণের ঘটনায় অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতাদের পালিয়ে যাওয়ার সুযোগ করে দেন এবং সমঝোতার চেষ্টা চালান বলে অভিযোগ রয়েছে।

রাত সাড়ে ৮টায় ওই ঘটনার পর পুলিশ রাত ৯টার দিকে ছাত্রাবাস এলাকায় পৌঁছে। অপরদিকে, ছাত্রাবাস থেকে নির্যাতিত তরুণীকে বের করে আনে রাত সাড়ে ১১টার দিকে। এই দীর্ঘসময় পুলিশের ভূমিকা নিয়ে অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন। এদিকে, ধর্ষণের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যাওয়ার আগে শাহপরান থানা পুলিশের পক্ষ থেকে ফোন দেওয়া হয় স্থানীয় সরকার দলীয় এক নেতাকে। অভিযুক্তরা ওই নেতার অনুসারী বলে অভিযোগ রয়েছে। ধর্ষণের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যাওয়ার আগে পুলিশ কেন ক্ষমতাসীন দলের নেতাকে ফোন দেবে- এই প্রশ্নের কোনো উত্তর নেই মহানগর পুলিশের কর্মকর্তাদের কাছে।

এই ধর্ষণের ঘটনায় নির্যাতিত তরুণীর স্বামী বাদী হয়ে ৬ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরও ২/৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত গ্রেপ্তার হয়েছেন ৮ জন। তবে এদের কাউকেই মহানগর পুলিশ গ্রেপ্তার করতে পারেনি। গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে ৪ জনকে গ্রেপ্তার করেছে সিলেট রেঞ্জ পুলিশ ও ৪ জন গ্রেপ্তার হয়েছে র‌্যাবের হাতে। রেঞ্জ পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে, ধর্ষণের পর দীর্ঘসময় মহানগর এলাকায়ই ছিলো আসামিরা। পরদিন তারা মহানগর পুলিশের আওতাধীন এলাকা থেকে বিভিন্ন স্থানে পালিয়ে যায়।

আরও সংবাদ

Close