আজকের সিলেট

১০ লাখ ভারতীয় রুপিতে আকবরকে বিক্রি করে গোপাল দাস!

১০ লাখ ভারতীয় রুপির বিনিময়ে পুলিশের এসআই আকবর হোসেন ভূঁইয়াকে (বরখাস্ত) বিক্রি করেছে গোপাল নামে এক ভারতীয় নাগরিক। সূত্রের খবর, পলাতক আকবরকে দেশে ফেরাতে ভারতীয় ওই নাগরিকের সাথে চুক্তি করে সিলেট জেলা পুলিশ।

সিলেটের বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে নির্যাতনে নিহত রায়হান হত্যা মামলার প্রধান অভিযুক্ত আকবর হোসেন ভূঁইয়া। এরই মধ্যে আকবরের বাংলাদেশে ফেরা এবং পুলিশের হেফাজতে আসার ঘটনা নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে ধুম্রজাল। সিলেট জেলা পুলিশের একটি সূত্রের খবর ১২ লাখ টাকা (১০ লাখ রুপি)’র বিনিময়ে আকবরকে দেশে ফেরত এনেছেন তারা।

এদিকে গত সোমবার সন্ধ্যায় এক প্রেস কনফারেন্সে সিলেট জেলার পুলিশ সুপার ফরিদ উদ্দিন আহমদ জানান, কিছু ঘনিষ্ঠ বন্ধুর মাধ্যমে বরখাস্ত সাব ইন্সপেক্টর আকবরকে সীমান্ত এলাকা থেকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে।

তিনি বলেন, ‘আমাদের কাছে একটি তথ্য ছিল সে (আকবর) ভারতে পালিয়ে যাবে। তাই আমরা সীমান্তবর্তী এলাকায় অতিরিক্ত নজরদারি শুরু করেছিলাম।

আমার সংবাদের অনুসন্ধানে জানা গেছে, ১৪ অক্টোবর ভোরে কোম্পানীগঞ্জের উৎমা-বড়পুঞ্জি সীমান্ত দিয়ে ভারতের মেঘালয় রাজ্যে প্রবেশ করেন আকবর। সেখানে চেরাপুঞ্জি পাহাড়ের পাদদেশে মাজাই গ্রামের মণিপুরী যুবক পাথর ব্যবসায়ী নরেশ সিংহের বাড়িতে সে (আকবর) আশ্রয় নেন। ৪-৫দিন সেখানেই থাকেন তিনি।

পরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা টের পেয়ে আকবরকে সেখান থেকে সরিয়ে শিলং শহরের আলুগুদাম নামক স্থানে রাখেন নরেশ। পরে ২৬ অক্টোবর সেখান থেকে আসামের শিলচর শহর থেকে ৩২ কিলোমিটার দূরে চাঁচাড় জেলার গুমরাহ থানার অন্তর্গত কৈপত্রপাড়া গ্রামে গোপালের বাড়িতে আকবরকে রেখে আসেন নরেশ। নরেশের আত্মীয় গোপাল আকবরকে নিজের বাড়িতে আশ্রয় দেন। পরে নরেশ সীমান্ত এলাকায় এসে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাথে কথা বলে এবং জানায় আকবর তার আশ্রয়ে নেই। এরপর থেকেই লাপাত্তা নরেশ।

পুলিশ জানতে পারে, আসামের গুমরাহ এলাকায় নরেশের আত্মীয় গোপালের আশ্রয়েই আছেন আকবর। সেই তথ্য অনুযায়ী জকিগঞ্জ স্থলবন্দর দিয়ে পণ্য রফতানিকারক ভারতীয় এক ফল ব্যবসায়ীর সঙ্গে যোগাযোগ করে পুলিশ। সেই ব্যবসায়ী আসামের আকরাম পুলিশকে জানায় গোপালের বাড়ি শিলচরের কইপত্যপাড়ায় আছেন আকবর।

বিষয়টি জকিগঞ্জ থানার ওসি মীর আবু নাসেরকে জানান আকরাম। এমনকি আকবরের ছবিও পুলিশের কাছে পাঠানো হয়। নিশ্চিত হয়ে সেই ব্যবসায়ীর মাধ্যমেই গোপালের সঙ্গে আকবরকে ফিরিয়ে দেয়ার দর-কষাকষি শুরু হয়। প্রথমে রাজি না হলেও পরে সে (গোপাল) ৩০ লাখ টাকার বিনিময়ে ফিরিয়ে দিতে রাজি হয়।

শেষমেষ গত শনিবার ১০ লাখ ভারতীয় রুপির (১২ লাখ টাকা) বিনিময়ে আকবরকে হস্তান্তর করতে রাজি হয় গোপাল। এই অনুযায়ী গুমরাহ থেকে ৪৫ কিলোমিটার দূরে করিমগঞ্জ সীমান্ত দিয়ে আকবরকে ফেরত দেয়ার কথা জানায় গোপাল। কিন্তু সীমান্ত জটিলতায় সে পরিকল্পনা ভেস্তে যায়। পরে কানাইঘাটের দনা সীমান্ত দিয়েই আকবরকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠাতে রাজি হয় গোপাল।

এদিকে গোপাল আকবরকে জানায়, সে তার বাড়িতে (শিলচরে) নিরাপদ নয়। তাই তাকে গোয়াহাটির এক আত্মীয়র বাসায় যেতে হবে। পরদিন রোববার একটি গাড়িতে করে মেঘালয়ের দিকে রওয়ানা হন গোপাল ও আকবর। অন্যদিকে, কানাইঘাটের লক্ষীপ্রসাদ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জেমস লিও ফার্গুসন নানকা’র সাহায্য নেয় সিলেটের পুলিশ।

ওইদিন বিকেলে আকবরকে আনতে তার (নানকার) পরিচিত চার খাসিয়া যান কুলিয়াং নামক খাসিয়া পানপুঞ্জিতে। সেখানে গিয়ে তারা আকবরের দেখা পায়নি। ওইরাতে কুলিয়াং বস্তির উয়েস নামের এক খাসিয়া যুবকের সাথে বিষয়টি নিয়ে কথা বলেন কানাইঘাটের সালেহ আহমদ ও শাহাব উদ্দিন। সে আকবরকে তাদের হাতে তুলে দেয়ার কথা জানায়। কথামতো, ওইদিন গভীর রাতে মেঘালয়ের উখিয়াং থেকে উয়েস ও তার সহযোগিরা গোপালের কাছ থেকে বুঝে নেয় আকবরকে।

এদিকে আকবরকে ফেরত আনতে বাংলাদেশী যুবক রহিম ও তার সহযোগীদের সাথে ১৫ হাজার টাকার চুক্তি করে সিলেটের পুলিশ। সোমবার ভোরে পুলিশের গাড়িতেই সীমান্তে পৌছান রহিম ও তার সহযোগীরা। দুপুর ১২টার দিকে আকবরকে নিয়ে ১৩৩৫ নম্বর পিলার পেরিয়ে বাংলাদেশের দনা সমান্তে প্রবেশ করেন রহিম ও তার সঙ্গীরা। পরে পুলিশ তাদের হাত থেকে আকবরকে গ্রেফতার করে।

গ্রেপ্তারের পর পুলিশের কাছে আকবর জানায়, ১২ অক্টোবর বিকালে বন্দর ফাঁড়ি থেকে পালিয়ে গিয়ে রাতে শহরেই অবস্থান করে আকবর। পরদিন বিকালে স্থানীয় সাংবাদিক নোমানের সঙ্গে সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ এলাকার ভোলাগঞ্জ যায়। সেখানে এক নারী জনপ্রতিনিধির বাসায় রাত্রিযাপন করে।

এবং সেই জনপ্রতিনিধির স্বামীর মাধ্যমেই পরদিন ১৪ অক্টোবর ভোরে ভারতের মাঝাই গ্রামে নরেশ সিংহের বাসায় ওঠে। সেখানে ৪ রাত্রি অবস্থান করে আকবর। ১৮ অক্টোবর সন্ধ্যার দিকে আকবরকে আসামের শিলচরে পাঠায় নরেশ সিংহ। সেখানে নরেশের বন্ধু পান্নার আত্মীয় গোপাল দাসের বাড়িতে ওঠে আকবর।

আরও সংবাদ

Close