সারা বাংলা
প্রেমিকের সাথে লুকিয়ে ছিল তিথী : অপহরণ নাটকের পর এবার হাত-পা বাঁধার গুজব
হাত-পা অবস্থায় তাকে গ্রেফতারের গুজব যারা রটিয়েছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। এমন কোন ঘটনাই ঘটেনি। বরং নিজেকে বাঁচাতে এবং অন্যের উপর দোষ চাপাতে অপহরণের নাটক সাজিয়েছিল সেই জবি ছাত্রী। সে তার প্রেমিকের সাথেই ছিল আত্মগোপনে।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের (বহিষ্কৃত) শিক্ষার্থী তিথী সরকারকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। তারা জানিয়েছে, তিথী সরকার পালিয়ে বিয়ে করে লুকিয়ে থেকে অপহরণের নাটক সাজাচ্ছিলেন।
বৃহস্পতিবার (১২ নভেম্বর) দুপুরে সাইবার পুলিশ সেন্টারের এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানানো হয়।
ব্রিফিংয়ে বলা হয়েছে, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী তিথী সরকার তার ফেসবুক আইডি ব্যবহার করে বিভিন্ন সময় ধর্মীয় উস্কানিমূলক পোস্ট, কমেন্ট ও তথ্য শেয়ার করেন। যার ফলশ্রুতিতে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা তার বিরুদ্ধে আন্দোলন ও সমাবেশ করে।
ধর্ম নিয়ে কটূক্তির অভিযোগে গত ২৬ অক্টোবর জবি-২০০৫ আইন এর ধারা ১০(১১) এর উপাচার্যের ক্ষমতাবলে সিন্ডিকেটের অনুমোদন সাপেক্ষে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত তিথী সরকারকে সাময়িকভাবে বহিষ্কার করা হয়। তিথী সরকারকে বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখার দপ্তর সম্পাদক পদ থেকেও সাময়িক অব্যাহতি দেয়া হয়।
এতে বলা হয়, তিথী ২৫ অক্টোবর রাজধানীর পল্লবীর বাসা থেকে বের হয়ে তার প্রেমিক শিপলু মল্লিকের সঙ্গে যোগাযোগ করে বাগেরহাটে যান। সেখানে তিনি শিপলুকে বিয়ে করেন এবং বাগেরহাটে অবস্থান করেন। এরপর তিনি ৯ নভেম্বর ঢাকায় আসেন।
সিআইডি জানায়, নরসিংদীতে শিপলুর দূর-সম্পর্কীয় চাচা দেবাশীষ রায়ের বাসায় থাকার সময় সিআইডি সাইবার পুলিশের দল তার অবস্থান নিশ্চিত হয়ে তাকে সেখান থেকে বুধবার (১১ নভেম্বর) তাকে আটক করে।
সিআইডি জানায়, গত ৩১ অক্টোবর সিআইডির সাইবার মনিটরিং টিম লক্ষ্য করে, সামাজিক যোগাযোগ ‘ফেসবুকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তিথী সরকারকে সিআইডির মালিবাগ অফিসের চারতলা থেকে হাত পা বাঁধা অবস্থায় উদ্ধার’ শীর্ষক একটি মিথ্যা পোস্ট শেয়ার করা হচ্ছে। এই সংবাদটি দ্রুত বিভিন্ন ফেসবুক আইডি ও পেইজ এ ভাইরাল করা হয়। প্রকৃতপক্ষে সিআইডির অভ্যন্তরে এ রকম কোন ঘটনা ঘটেনি।
এসকল গুজব রটনাকারীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য কার্যক্রম শুরু করে সাইবার পুলিশ (সিআইডি)। এরই ধারাবাহিকতায় গত ২ নভেম্বর রাজধানীর রামপুরাস্থ বনশ্রী এলাকা থেকে অন্যতম গুজব রটনাকারী নিরঞ্জন বড়াল নামে একজনকে গ্রেপ্তার সাইবার পুলিশ সেন্টার। এ বিষয়ে নিরঞ্জন বড়ালসহ অজ্ঞাতনামা আরও কয়েকজনের বিরুদ্ধে ডিএমপির পল্টন থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে একটি মামলা দায়ের করা হয়।
সাইবার পুলিশ সেন্টারের কাছে থাকা মামলার তদন্ত চলাকালীন সময়ে গোপন তথ্য পাওয়া যায় যে, তিথী সরকার স্বেচ্ছায় আত্মগোপনে থেকে গ্রেপ্তার/অপহরণের নাটক সাজাচ্ছে। তার ধারণা ছিল এভাবে করে আত্মগোপনে থেকে তার অপহরণের দায়ভার অন্যের উপরে চাপিয়ে দিয়ে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত সংক্রান্ত ঘটনা থেকে সে রেহাই পাবে এবং ঘটনাপ্রবাহ অন্যদিকে ধাবিত হবে।
সিআইডি জানান, গত ২ নভেম্বর পল্টন থানার ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত এবং আইনশৃঙ্খলা অবনতি ঘটানোর পরিস্থিতি সৃষ্টি করা সংক্রান্ত সিআইডির মামলায় তিথী সরকার এবং শিপলু মল্লিককে গ্রেপ্তার দেখিয়ে কোর্টে প্রেরণ করা হবে। তাদের বিরুদ্ধে আদালতে রিমান্ড আবেদন এবং পৃথক মামলাও দায়ের করা হবে।
বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ অত্যন্ত শান্তিপ্রিয় ও অসাম্প্রদায়িক চেতনায় বিশ্বাসী উল্লেখ করে তারা বলেন, সাম্প্রদায়িকতা, সহিংসতা ও উগ্রবাদের বিরুদ্ধে যে কোন ধরণের তথ্য ও সংবাদ সঠিকভাবে যাচাই ব্যতীত বিশ্বাস না করতে সাধারণ জনগণের প্রতি অনুরোধ জানানো হলো।