শীর্ষ খবর
বিয়ানীবাজারে করোনার কোন তোয়াক্কা নেই : নির্বিকার প্রশাসন
বিয়ানীবাজারে এসেছেন ব্যারিস্টার সুমন। খেলার মাঠে ১৫ হাজারেরও বেশি দর্শক জমায়েত হলেন। কারও মুখেই মাস্ক নেই। করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবেলায় সরকার নানা ধরনের সচেতনতামূলক কর্মসূচি গ্রহণ করছে। বাধ্যতামূলক করেছে মাস্ক ব্যবহারও। মাস্ক না পড়লে জরিমানারও বিধান করা হয়েছে। অথচ সরকারের সকল নির্দেশনা উপেক্ষা করে শুক্রবার (৪ ডিসেম্বর) বিয়ানীবাজার পৌরশহরে হাজার হাজার মানুষের উপস্থিতিতে ফুটবল ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
এ ফুটবল ম্যাচ দেখতে উপজেলার প্রায় ১০/১৫ হাজার মানুষ মাঠে উপস্থিত ছিলেন। তবে এসব মানুষের মধ্যে কারো মুখেই ছিলো না মাস্ক। আর সামাজিক দূরত্ব তো বহুদূরের পথ। দর্শকদের উপস্থিতি, সামাজিক দূরত্ব না মানা আর প্রশাসনের নীরবতায় নিয়ে উপজেলার সচেতন মানুষ প্রশ্ন তুলেছেন।
এছাড়া স্থানীয় প্রশাসনের নীরবতা ও রাজনৈতিক নেতাদের কাণ্ডজ্ঞান নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন কেউ কেউ। যদিও স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে এ নিয়ে কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
প্রশাসনের অনুমতি ছাড়া সামাজিক ও শারীরিক দূরত্ব বজায় না রেখে কিংবা স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ না করে এত বড় আয়োজন নিয়ে এখন সচেতন মহলে চলছে আলোচনা-সমালোচনা।
অনেকে এমনও বলছেন, মাস্ক না পরায় যেখানে সাধারণ পথচারী ও চালকদের ১শ-৩শ টাকা জরিমানা আদায় করছে প্রশাসন। সেখানে ১৫ হাজারেরও বেশি দর্শক-অতিথির মাস্ক না থাকায় প্রশাসন নীরব কেন?
জানা গেছে, বিয়ানীবাজার পিএইচজি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে বিয়ানীবাজার খেলোয়াড় কল্যাণ সমিতির আয়োজনে শুক্রবার ব্যারিস্টার সুমন ফুটবল একাডেমীর প্রীতি ফুটবল ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়। ১-১ গোলের সমতায় শেষ হওয়া এ প্রীতি খেলা উপভোগ করতে মাঠে ছিলেন প্রায় ১৫ হাজারেরও বেশি দর্শক।
খেলা শুরুর প্রাক্কালের অনুষ্ঠানে অতিথি ছিলেন, সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নাসির উদ্দিন খান, বাংলাদেশ যুবলীগের কেন্দ্রীয় আইন বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন, বিয়ানীবাজার পৌরসভার মেয়র মো. আব্দুস শুকুর, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (জকিগঞ্জ সার্কেল) সুদীপ্ত রায়, সিলেট মহানগর যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মুশফিক জয়াগীরদার, উপজেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক ইসলাম উদ্দিন, জেলা আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল বারী, এডভোকেট আব্বাছ উদ্দিন, পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবাদ আহমদ, বিয়ানীবাজার থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) হিল্লোল রায়, ইউপি চেয়ারম্যান শিহাব উদ্দিন ও আব্দুল মন্নান, পিএইচজি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল হাছিব জীবন।
গ্যালারি ভর্তি দর্শক কিংবা মঞ্চে আমন্ত্রিত অতিথি কেউই মানেন নি স্বাস্থ্যবিধি ও শারীরিক দূরত্ব। মাস্কও ছিল না কারও মুখে।
বিয়ানীবাজার সরকারি কলেজের শিক্ষক আরবাব হোসেন তার ফেসবুক টাইমলাইনে লিখেছেন, বিয়ানীবাজারের ভ্রাম্যমাণ আদালত ও সাংবাদিক কোথায়। এরকম জনসমাগমের পরে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাস্ক না পরার জন্য বিয়ানীবাজারের সাধারণ মানুষকে শাস্তি দেওয়া আর খাশা বারোপালের দীঘিতে থেকে এক গ্লাস পানি বিশুদ্ধকরণ ঔষধ দিয়ে পুরো দীঘি বিশুদ্ধ করণের দাবি করার সমান। মাঝে মাঝে বিয়ানীবাজারের কোন কোন রাস্তায় মাস্কবিহীন মানুষকে দাড় করিয়ে জরিমানা করেন যা আইন সম্মত। আইনের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে বলছি এই জনসমাগমের পর আর ভ্রাম্যমাণ আদালতের প্রয়োজন আছে বলে মনে করি না।
আর এই করনাকালীন মহামারির সময়ে বিভিন্ন পেশার মানুষ যারা সরকারি চাকুরি করে না, চুরি ডাকাতি করে না, চাঁদাবাজি করে না তারা জীবিকা নির্বাহের জন্য কোন না কোন ভাবে তারা নিজেদের পেশার কাজ চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করে তাদেরকে নিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে লিখতে পারেন। কিন্তু এরকম জনসমাগম লিখতে পারেন না। পারবেন ও না কারণ প্রকৃত সাংবাদিক হলে পারতেন।
খলিল চৌধুরী আদর্শ বিদ্যানিকেতনের সাবেক শিক্ষক মোহাম্মদ সামস উদ্দিন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফেসবুকে লিখেছেন, এই সেই মাঠ। দুরন্ত শৈশব, কৈশোর ও যৌবনের বিশেষ সময় ঐ মাঠে ই দৌড়াদৌড়ি করে কেটেছে। পায়ের শহবব হারিয়েছিলাম ঐ মাঠেই। প্রিয় পিএইচজি মাঠ। এই মাঠের খেলায় হতো হৃদয় স্পন্দিত। আর এই মাঠে ই হলো আজ মৃত্যু খেলা। হৃদয় আজ শঙ্কিত। হে আল্লাহ প্রিয় বিয়ানীবাজারকে ও প্রিয় মানুষগুলোকে রক্ষা করুন।
সমাজসেবী শমসের আলম ফেসবুকে লিখেছেন, বিবেক যখন বন্দি হয়ে যায় বাকী দেহটা তখন সমাজের জন্য বিড়ম্বনা। সরকারের কড়া নির্দেশ করোনাকালীন জনসচেতনতা বাড়াতে, প্রয়োজনে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে জরিমানা করার বিধান করা হয়েছে। সরকারি এমন ঘোষণাকে লঙ্ঘন করে পিএইচজি হাইস্কুল মাঠে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল হাজার হাজার দর্শকের সমাগম। সম্পন্ন হল প্রীতি ম্যাচ ফুটবল। অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় যে, দায়িত্বশীল নেতাদের মুখে মাস্ক নেই, জনসচেতনতার ধারক ব্যারিস্টার সুমন সাহেবও স্টেইজে, তিনি তাঁর টিম নিয়ে বিয়ানীবাজার এসেছেন প্রীতি ম্যাচ খেলতে। আশ্চর্য হওয়া ছাড়া গত্যন্তর নেই। উনি কিভাবে এই করোনাকালে এমন একটা আত্মঘাতী পরিকল্পনায় সম্পৃক্ত হতে পারলেন? অথচ মাত্র দু’দিন হয় বিয়ানীবাজারে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হল। জরিমানাও করা হল বলে জানা গেল। সরকারি নির্দেশ ‘মাস্ক নেই, সার্ভিস নেই’ অথচ এত বড় জনসভা হয়ে গেল প্রশাসনের কারও কোন খবর নেই। এই যদি হয় সমাজের জনপ্রতিনিধি ও বিবেকবানদের মনোজগৎ, তাদের জাতীয় কর্তব্য ও চিন্তা চেতনার পরিসর! একটা স্বাধীন গণতান্ত্রিক দেশে যদি এলিটদের জ্ঞান গরিমা ও বিবেকের মানদণ্ড তাই হয়, তবে কোন অলৌকিক শক্তির বলে এই দায়িত্বশীলরা সমাজের কাণ্ডহীন মানুষগুলোকে এগিয়ে নিয়ে যাবেন বলে আশা করেন।
তিনি আরও বলেন, আমার বোধে আসে না, কেমন করে তাঁরা এমন নড়বড়ে আদর্শ নিয়ে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়ন করবেন বলে জনসম্মুখে লম্বা লম্বা নছিহত ছুঁড়েন। আর যাই হোক সরকারী আদেশ অমান্য করে খেলার নামে এত বড় একটা জনসমাগমের উন্মাদনা ঘটানো আর সরকারি নিয়মনীতির প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করা একই কথা। ক্ষমতা থাকলেই যে সব কিছু করা যাবে, তা তো নয় বরং সমাজ, রাষ্ট্র ও বহির্বিশ্বের বাঙ্গালীপাড়ার মানুষগুলো কি ভাবছে এই সামান্যটুকুও কি ভাবার দরকার নেই?