ভিন্ন খবর

দৃষ্টিনন্দন করার স্বপ্নে বিভোর মেয়র, অপেক্ষায় ‘ব্যানার পার্টি’

‘এখানে পোস্টার লাগানো নিষেধ’ লিখেও তাদের খপ্পর থেকে বেঁচে থাকা সম্ভব নয়। আপনার বাড়ির দেয়ালটা সুন্দর করে রং করে বড় করে কথাগুলো লিখে দিলেন। তারা ওই লেখার উপরেই পোস্টার সেঁটে দিবে! পুরনো শেওলা পড়া দেয়ালে তো আর পোস্টার লাগানো যায় না! লাগালেও টিকবে না! তাই আপনার সদ্য রং করা দেয়ালটি তাদের পছন্দের শীর্ষে।

আরিফুল হক চৌধুরী একজন স্বপ্নবিলাসী মেয়র। সিলেটকে অনেকে দ্বিতীয় লন্ডন বলেন। মেয়র আরিফও সিলেটকে লন্ডনের আদলে সাজাতে কাজ করছেন।

সম্প্রতি নগরীর চৌহাট্টা থেকে রোড ডিভাইডারের মাঝে স্থাপন করা শুরু হয়েছে দৃষ্টি নন্দন গ্রিল। সাথে ফুল। কাজ শেষ না হতেই তা যেন শোভা ছড়াতে শুরু করেছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে সেসব ছবি।

কিন্তু মেয়র চাইলেই কি লন্ডনের মতো সুন্দর করতে পারবেন সিলেটকে? না। তা হতে দিচ্ছেনা ‘সাটান গ্রুপ’। যেখানে সেখানে ব্যানার, পোস্টার, ফেস্টুন লাগানোই তাদের কাজ। মেয়র কাজ শেষ করলেই তারা মাঠে নেমে যাবেন তাদের কোম্পানীর প্রচার প্রসারে!

সর্বরোগের ঔষধ প্রদানকারী সরফরাজ কবিরাজের সাথে কথা হলে তিনি বেশ উৎফুল্ল হয়ে বলেন, এখন আর কষ্ট করে মই লাগিয়ে ফেস্টুন টানাতে হবে না। গ্রীলেই টানিয়ে দেয়া যাবে। নিচে থাকবে চোখেও পরবে রোগীদের। সব রোগী কি জিন্দাবাজারে যায় এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, রোগী যাক না যাক তাতে আমার কি! মানুষতো যায়!

যাই হোক আপনার প্রস্তুতি কেমন মেয়র সাহেব তো পুরোদমে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন এমন উত্তরে বলেন, হাজারখানে ফেস্টুন অর্ডার করেছি দেখি আমি ছাড়া আর কোন কবিরাজের ফেস্টুন দেখা যায় গ্রীলে। প্রতিযোগিতার বাজার বোঝেন না!

তারপর কথা হলো আইএলটিএস নামক লাভজনক ব্যবসার একটি প্রতিষ্ঠানের সাথে। তারা বলেন, দীর্ঘদিন করোনার কারণে ক্লাস হচ্ছেনা। বিদেশে যাওয়াও বন্ধ। তাই ব্যবসা তেমন জমে উঠছে না। করোনা কমে আসবে শিগগির। এদিকে গ্রীল লাগানোও প্রায় শেষ। সেখানে ইচ্ছামতো ব্যানার লাগাবো। দেখি ব্যবসা না হয়ে কোথায় যায়!

আবার এক প্রবীন রাজনৈতিক সংগঠনের নেতার সাথে কথা হলে তিনি নাম প্রকাশ না করতে হুশিয়ারি উচ্চারণ করেন। বলেন, আমি জানি কিন্তু বলবো না! কি বলবেন না জানতে চাইলে তিনি বলেন, কারা ব্যানার লাগায় তা বলবো না। অনেক অনুরোধের পর তিনি অট্টহাসি ছুড়ে দিয়ে বললেন, আরে ব্যানার তো আমরাই লাগাই। আমরা যে মিছিল, মিটিং করলাম তা কয়জনই বা দেখলো। মিছিল শেষে ব্যানারটা টানিয়ে রাখলে স্মৃতি থেকে যাবে। মানুষ দেখবে আর বুঝতে পারবে আমারা আন্দোলন করেছি!!

বিষয়টি এখন টক অব দা টাউন! চায়ের দোকানে এক বৃদ্ধ গরম চায়ে ‍চুমুক দিতে দিতে বললেন, ‘আরিফে কাম করের রে বা’। সাথে সাথে সবাই ‘হুম হুম’ বলে সায় দিল। কিন্তু এক তরুণ বলে উঠলো ‘জিন্দাবাজাযে গ্রীল লাগাইরা অতাত কয়দিন পরে দেখবা খালি পোস্টার আর ব্যানার।’ কেবল চায়ের দোকান না ফেইসবুকের বিশিষ্ট ভবিষ্যতবিদগণও এ নিয়ে চিন্তায় আছেন। এত টাকা খরচ! এত কষ্ট! এত স্বপ্ন! এত সৌন্দর্য! তা ব্যানারে ঢেকে যাবে- এমনটা ভবিষ্যতবাণী করেই ক্ষান্ত হচ্ছেন না। ফটোশপে এডিট করে ছবিও আপলোড করছেন। তুলে ধরছেন ভবিষ্যতে প্রতিচ্ছবি।

এখানে ব্যবহৃত সকল ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান ও সংগঠনের নাম এবং সংলাপ সম্পূর্ণ কাল্পনিক। যদি কারও সাথে কোনভাবে মিলে যায় তবে কর্তৃপক্ষ দায়ি নহে। 

আরও সংবাদ

Close