শীর্ষ খবর
মায়ের কবরে চিরনিদ্রায় শায়িত খোকা
মুক্তিযোদ্ধা, অবিভক্ত ঢাকা সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র বিএনপির প্রয়াত নেতা সাদেক হোসেন খোকাকে ঢাকার জুরাইন কবরস্থানে তার মায়ের কবরে দাফন করা হয়েছে।
আজ বৃহস্পতিবার (৭ নভেম্বর) সন্ধ্যায় ধুপখোলা খেলার মাঠে শেষ জানাজার পর সাদেক হোসেন খোকার ইচ্ছা অনুযায়ী তাকে তার মায়ের কবরে সমাহিত করা হয়।
খোকার মরদেহ নিয়ে এমিরেটসের একটি ফ্লাইটে নিউইয়র্ক থেকে আজ বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা ২৮ মিনিটে রাজধানীর হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে।
বিমানবন্দরে সাবেক মেয়রের মরদেহ গ্রহণ করেন দলের জ্যেষ্ঠ নেতা মির্জা আব্বাস ও ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু। সেসময় অন্যান্য বিএনপি নেতা- আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, মেজর (অব) কামরুল ইসলাম, খায়রুল কবির খোকন, হাবিব উন নবী খান সোহেল, ফজলুল হক মিলন, কামরুজ্জামান রতন ও দলের মহানগর শাখার নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
বিমানবন্দর থেকে মরদেহ জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তার জানাজা শেষে মরদেহ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে নিয়ে যাওয়া হয়।
শহীদ মিনারে সাবেক মেয়রকে শ্রদ্ধা জানান সর্বস্তরের জনগণ। এরপর তাকে নয়া পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেও তার জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা সেখানে তার প্রতি শেষ শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। পল্টন থেকে খোকার মরদেহ ঢাকা সিটি করপোরেশন ভবনে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে আরেকবার জানাজা হয়।
৪ নভেম্বর নিউইয়র্ক সময় রাত ২টা ৫০ মিনিটে নিউইয়র্কের মেমোরিয়াল স্লোয়ান ক্যাটারিং ক্যানসার সেন্টারে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন সাদেক হোসেন খোকা।
খোকা ১৯৫২ সালের ১২ মে তারিখ ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৯৭১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র থাকাকালীন মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন।
তিনি মাওলানা ভাসানীর ন্যাশনাল আওয়ামী লীগ পার্টিতে (ন্যাপ) যোগ দেওয়ার মাধ্যমে রাজনীতিতে প্রবেশ করেন। পরে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলে (বিএনপি) যোগ দেন এবং দলের ঢাকা মহানগর শাখার সভাপতি হন।
খোকা প্রথম সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন ১৯৯১ সালে ঢাকা-৭ আসন থেকে। পরবর্তীতে ১৯৯৬ এবং ২০০১ সালেও তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এরপর, ২০০২ সালে ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অংশ নিয়ে মেয়র নির্বাচিত হন। এই পদে তিনি প্রায় নয় বছর ছিলেন।
১৯৯১ সালে বিএনপি সরকার গঠন করলে সাদেক হোসেন খোকা যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব লাভ করেন এবং ২০০১ সালে তার দল সরকার গঠন করলে তিনি মৎস্য ও পশুসম্পদ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব লাভ করেন।
২০১৪ সালের মে মাসে ক্যানসার চিকিৎসার উদ্দেশে ভ্রমণ ভিসায় স্ত্রীসহ যুক্তরাষ্ট্রে গিয়েছিলেন সাদেক হোসেন খোকা।
স্লোয়ান ক্যাটারিং হাসপাতালে চিকিৎসা শুরুর পর প্রতি সপ্তাহে নিয়মিতভাবে বিভিন্ন ধরনের থেরাপি ও পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে তিনি চিকিৎসকের নিবিড় তত্ত্বাবধানে ছিলেন।
২০১৭ সালের শেষদিকে তার এবং স্ত্রী ইসমত হোসেনের পাসপোর্টের মেয়াদ শেষ হয়ে গেলে পাসপোর্ট নবায়ন বা নতুন পাসপোর্টের জন্য আবেদন করেন। দীর্ঘদিন পরও তাদেরকে পাসপোর্ট না দেওয়ায় এক পর্যায়ে খোকা যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন করেন।
দীর্ঘদিন চিকিৎসার মধ্যে থাকার পর গত কয়েক মাস ধরে সাদেক হোসেন খোকা দেশে ফেরার জন্য বার বার আকুতি প্রকাশ করতে থাকেন। তিনি বলতেন, ঢাকায় যাওয়ার পর জেলে যেতে হলে যাবো, চিকিৎসার জন্য আর আসতে না দিলেও সমস্যা নাই। দেশে গিয়েই মরব।
সাদেক হোসেন খোকার ফুসফুসে ক্যানসার মারাত্মকভাবে ছড়িয়ে পড়ায় তার জীবন বিপন্ন হয়ে পড়ে। কিডনি ক্যানসারের চিকিৎসা নেওয়ার সময় হঠাৎ করেই ফুসফুস আক্রান্ত হলে তার শারীরিক অবস্থার দ্রুত অবনতি হয়। তিনি প্রচণ্ড শ্বাসকষ্টে ভুগছিলেন।