প্রবাস

অদম্য সিলেটের রুমন : ইতালির পথে পথে গোলাপ বিক্রি করে এখন ডাক্তার

রুমন সিদ্দিকির জন্ম সিলেটের মধ্যবত্তি ঘরে। কিন্তু স্বপ্নের খোঁজে পাড়ি জমান ইউরোপের দেশ ইতালিতে। অর্থাভাবে সেই স্বপ্ন যখন ক্রমশঃ নিভু নিভু তখনই তিনি গোলাপ হাতে নেমে পড়েন পথে। এভাবে জীবনের অন্ধকার অলি-গলিতে ঘুরতে থাকাবস্থায় বাংলাদেশি বংশোদ্ভুত রুমনের পাশে ‘প্রদীপ’ হাতে দাঁড়ান এক ইতালিয়ান দম্পতি।

১৯৯৯ সালের দিকে এক আত্মীয়ার সঙ্গে রুমন ইতালিতে যান। সেখানে রোটারি ইন্টারন্যাশনালের ‘মেক ইওর ড্রিমস কাম ট্রু’ প্রজেক্টের মাধ্যমে তার কপাল খুলে যায়। স্থানীয় অধ্যাপক নিকোলা কার্লিসি রুমনের সব পড়ালেখার দায়িত্ব নেন।

সেইসব দিনের কথা স্মরণ করে ২৯ বছর বয়সী রুমন বলেন, ‘শিক্ষকের স্ত্রী পত্রিকায় আমার একটি লেখা পড়ে মুগ্ধ হন। তখন থেকেই তিনি আমার সঙ্গে দেখা করার সিদ্ধান্ত নেন। তিনি আমার জীবন বদলে দেন। আমার লেখাপড়ার দায়িত্ব নেন। আমার জন্য সবকিছু করেছেন তারা। তাদের ছাড়া কোনোদিন ডাক্তার হতে পারতাম না। নিজেদের ভাতিজার মতো আমাকে তারা গ্রহণ করেন।’

নিকোলার পাশাপাশি মেধাবী রুমনের পাশে দাঁড়ান আরও কয়েকজন ব্যক্তি। সালভাতোর এব্রুস্কাটো তাকে থাকার জন্য একটি বাড়ি দেন। জিউসেপ গ্যালিয়াজো নামের আরেকজন দেন অর্থ। এসব মানুষদের সাহায্য পেয়ে রুমন রাস্তায় ফুল বিক্রি বাদ দিয়ে পড়ালেখায় মন দেন।

সম্প্রতি রুমন ডাক্তারি পাশ করেছেন। এবার তার স্বপ্ন দেশে ফিরে মানুষের সেবা করার। তার আগে ইতালিয়ানদের জন্য এই করোনাকালে কিছু করতে চান। কিন্তু সেখানে পড়েছেন আরেক সমস্যায়! ইউরোপীয় ইউনিয়নের নাগরিকত্ব না থাকায় রুমন ইতালিতে চাকরির জন্য আবেদন করতে পারছেন না। বিষয়টি নিয়ে কিছুটা হতাশও তিনি।

গত মাসে ইতালিয়ান সরকার সিসিলিকে উচ্চ-ঝুঁকির অঞ্চল ঘোষণা করে। দরিদ্র এই অঞ্চলের চিকিৎসক সংকট কাটাতে একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। জুনিয়র চিকিৎসকের সনদ থাকা রুমন সেখানে আবেদন করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু ইতালির নাগরিক না হওয়ায় পারছেন না। অবাক করার বিষয় হলো স্থানীয় কর্তৃপক্ষ কিউবা থেকে ৬০ জন স্বাস্থ্যকর্মী আনার কথা বললেও রুমনের মতো আরও অনেককেই তারা সুযোগ দিচ্ছে না।

ক্ষোভ প্রকাশ করে রুমন বলেন, ‘এ যেন দ্বিচারিতা। আমাদের এখানে চিকিৎসক থাকলেও তাদের না নিয়ে কিউবা থেকে আনা হচ্ছে।

সিসিলির রাজধানী পালেরমোর বেসরকারি পাওলো গিয়াকোন বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে কাজ করছেন রুমন। তিনি চান সরকারিভাবে কাজ করতে। ইতালির আইনানুযয়ী, নাগরিকত্ব পেতে হলে দেশটির কারো সঙ্গে রক্তের সম্পর্ক থাকতে হয়। ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাইরে থেকে গেলে ধারাবাহিকভাবে প্রায় এক দশক থাকতে অথবা বিয়ে করতে হয়। এসব শর্ত পূরণের পর আবেদন করে আবার চার-পাঁচ বছর অপেক্ষা করতে হয়।

আরও সংবাদ

Close