শীর্ষ খবর

ভারত থেকে কারামুক্ত হয়ে বিয়ানীবাজার সীমান্ত দিয়ে ফিরলেন ১৯ বাংলাদেশী

ভারতের বিভিন্ন কারাগারে সাজাভোগের পর দেশে ফিরে এসেছেন ১৯ বাংলাদেশি নাগরিক। আজ বৃহস্পতিবার (২৮ জানুয়ারি) দুপুরে বিয়ানীবাজারের শেওলা সীমান্ত দিয়ে বিএসএফ ও ভারতীয় সীমান্ত পুলিশ তাদের বিজিবি ও ইমিগ্রেশন পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছে। তাদের মধ্যে রয়েছেন বিভিন্ন বয়সী ১৪ জন পুরুষ ও ৫ জন নারী। সাজার মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও বছরের পর বছর ভারতের বিভিন্ন কারাগারে বন্দি ছিলেন তারা।

বৃহস্পতিবার সকাল ১১টা থেকে বিয়ানীবাজারের শেওলা সীমান্তে এসে অপেক্ষারত ছিলেন প্রত্যাবর্তনকারীদের স্বজনরা। এরপর সবধরনের আনুষ্ঠানিকতা শেষে প্রত্যাবর্তনকারীরা অপেক্ষারত স্বজনদের সাথে মিলিত হন। তখন এক আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়।

কুড়িগ্রাম জেলার নাগেশ্বরী উপজেলার বাসিন্দা শহিদুল ইসলাম ও নাসির উদ্দিন পেশায় মৎস্য শিকারী। তারা জানান, সীমান্তের কাছাকাছি এলাকায় মাছ ধরতে গিয়ে নো ম্যান্স ল্যান্ডে প্রবেশ করায় তাদের দু’জনকে আটক করে বিএসএফ। পরে দু’জনেই ভারতের বিভিন্ন কারাগারে বিভিন্ন মেয়াদে আড়াই বছরেরও বেশি সময় কারাগারে ছিলেন। দীর্ঘদিন সাজাভোগের পর দেশে ফিরতে পেরে অনেক আনন্দিত তারা।

কথা হয় ভারতের বিভিন্ন কারাগারে টানা ৭ বছর সাজাভোগ করে দেশে ফেরত আসা ষাটোর্ধ্ব বৃদ্ধ ইব্রাহিল খলিলের সাথে। তার গ্রামের বাড়ি চাঁদপুর জেলার মতলব উত্তর উপজেলায়। তিনি জানান, কাজের তাগিদে তিনি ভারতে পাড়ি জমান এবং অনুপ্রবেশ করার অভিযোগে বিএসএফ তাকে আটক করেছিল। দেশে গ্রামের বাড়িতে তাকে নিতে আসার মতো কেউ নেই, তাই আপাতত মামাদের বাড়িতে গিয়ে উঠবেন তিনি।

বিয়ানীবাজার বিজিবি ও ইমিগ্রেশন পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, দেশে প্রত্যাবর্তনকারীদের মধ্যে রয়েছেন কুড়িগ্রাম জেলার ৪ জন, ব্রা²ণবাড়িয়ার ২ জন, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, গাজীপুর, ঢাকা, চাঁদপুর, লালমনিরহাট, কিশোরগঞ্জ, শেরপুর, টাঙ্গাইল, নীলফামারী, লক্ষীপুর, ঠাকুরগাঁও ও বরিশালের একজন করে মোট ১৯ জন নারী-পুরুষ। এর মধ্যে ১৪ জন পুরুষ ও ৫ জন নারী রয়েছেন।

বৃহস্পতিবার দুপুরে বিএসএফ ও ভারতীয় সীমান্ত পুলিশ বিয়ানীবাজার বিজিবি, থানা পুলিশ ও শেওলা ইমিগ্রেশন পুলিশের কাছে প্রত্যাবর্তনকারী বাংলাদেশিদের হস্তান্তর করেছে। এ সময় উপস্থিত ছিলেন, বিজিবি ৫২ বিয়ানীবাজার ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল গাজী শহীদুল্লাহ, করিমগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার মায়াঙ্ক কুমার, বিজিবি বড়গ্রাম ক্যাম্পের কোম্পানি কমান্ডার নায়েক সুবেদার সিরাজুল ইসলাম, বিএসএফ কোম্পানি কমান্ডার এসি মান্দিপ, শেওলা ইমিগ্রেশন পুলিশ চোকপোস্টের ইনচার্জ এসআই আবুল কালাম, বিয়ানীবাজার থানার এসআই শাহ আলম, বিয়ানীবাজার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সহকারী মেডিকেল অফিসার ডা. হারুন-উর রশিদসহ স্বাস্থ্য বিভাগ, সাংবাদিক ও মানবাধিকার সংস্থার নেতা-কর্মীরা।

শেওলা চেকপোস্টের ইনচার্জ এসআই আবুল কালাম জানান, ভারত থেকে সাজাভোগের পর ১৯ জন বাংলাদেশি বৃহস্পতিবার দুপুরে দেশে প্রত্যাবর্তন করেছেন। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে স্বজনরা তাদের নিতে পূর্ব থেকেই অপেক্ষা করছিলেন। মেডিকেল টেস্টসহ প্রয়োজনীয় আনুষ্ঠানিকতা শেষে প্রত্যাবর্তনকারীদের তাদের স্বজনদের কাছে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে।

বিজিবি ৫২ বিয়ানীবাজার ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল গাজী শহীদুল্লাহ বলেন, ১৯ জন বাংলাদেশি নাগরিক বিভিন্ন মেয়াদে ভারতের বিভিন্ন কারাগারে বন্দি জীবন কাটাচ্ছিলেন। বাংলাদেশ সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রাণালয়ের কূটনৈতিক তৎপরতায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও বিজিবি সদর দপ্তরের উদ্যোগ এবং নির্দেশনায় বিয়ানীবাজার ৫২ বিজিবি ব্যাটালিয়ন সংশ্লিষ্ট বিএসএফের সাথে যোগাযোগের মাধ্যমে দ্রুত সময়ের মধ্যে তাদেরকে বাংলাদেশে আনতে পেরে আমরা আনন্দিত।

তিনি বলেন, আরও যারা বাংলাদেশি নাগরিক ভারতের বিভিন্ন কারাগারে বন্দি রয়েছেন বিজিবি সদর দপ্তরের নির্দেশনায় তাদেরকে দ্রুত সময়ের মধ্যে দেশে ফেরত আনার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

আরও সংবাদ

Close