শীর্ষ খবর
এক বছরে করোনা কেড়ে নিল সাড়ে ৮ হাজার প্রাণ
বাংলাদেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণের এক বছর অতিবাহিত হলো। এ পর্যন্ত দেশে করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে পাঁচ লাখ ৫০ হাজার ৩৩০ জন। তাদের মধ্যে মারা গেছে ৮ হাজার ৪৬২ জন এবং সুস্থ হয়েছে পাঁচ লাখ তিন হাজার তিনজন।
গত বছরের ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনা রোগী শনাক্তের খবর দেয় সরকার। এর ১০ দিনের মাথায় ১৮ মার্চ প্রথম মৃত্যুর তথ্য জানানো হয়। আজ সোমবার (৮ মার্চ) এক বছর পূর্ণ হলো। সরকারি হিসাবে এই এক বছরে করোনায় আক্রান্ত হয়ে গড়ে দৈনিক ২৩ জন মারা গেছে। এ সময় শনাক্ত রোগীর সংখ্যা সাড়ে পাঁচ লাখ ছাড়িয়ে গেছে।
অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে পাঠানো নিয়মিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, গত এক বছরে গড়ে দৈনিক ২৩ জন করে মারা গেলেও প্রায় এক মাস ধরেই দেশে দৈনিক মৃত্যু ২০ জনের নিচে বিভিন্ন সংখ্যায় ওঠানামা করছে। এর মধ্যে সর্বশেষ গত আট দিন মৃত্যু ১০ জনের মধ্যে থাকলেও গতকাল আবার বেড়ে হয়েছে ১১ জন। গতকাল সকাল ৮টা পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে ৬০৬ জন এবং সুস্থ হয়েছে এক হাজার ৩৭ জন।
কয়েক দিন ধরে দৈনিক রোগী শনাক্তের হার আবার দ্রুত বাড়তে শুরু করেছে। গত ২৪ ঘণ্টায় শনাক্তের হার ৪.৪০ শতাংশ। এখন পর্যন্ত মোট শনাক্তের হার ১৩.২৭ শতাংশ। আর সুস্থতার হার ৯১.৪০ শতাংশ এবং মৃত্যুর হার ১.৫৪ শতাংশ।
সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় মারা যাওয়া ১১ জনের মধ্যে ৯ জন পুরুষ এবং দুজন নারী। বয়স বিবেচনায় ৩১ থেকে ৪০ বছরের একজন, ৪১ থেকে ৫০ বছরের একজন, ৫১ থেকে ৬০ বছরের দুজন এবং ষাটোর্ধ্ব সাতজন। ঢাকা বিভাগে ছয়জন, চট্টগ্রাম বিভাগে চারজন এবং খুলনা বিভাগে একজন মারা গেছেন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের আরেক তথ্য অনুসারে, দেশে করোনার টিকা দেওয়ার জন্য নিবন্ধনসংখ্যা ৫০ লাখ ছাড়িয়েছে। গতকাল দুপুর পর্যন্ত ৫০ লাখ ১৭ হাজার ৮০৪ জন নিবন্ধন করেছেন। এ ছাড়া গত ৭ ফেব্রুয়ারি জাতীয় টিকাদান কর্মসূচি শুরুর পর থেকে গতকাল পর্যন্ত এক মাসে টিকা নিয়েছেন ৩৭ লাখ ৮৯ হাজার ৩৫২ জন। এর মধ্যে গতকাল এক দিনে টিকা নিয়েছেন এক লাখ সাত হাজার ২০০ জন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুসারে এখনো প্রতিদিনই আক্রান্ত ও মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে। ৭ মার্চ সকাল পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় নমুনা সংগ্রহ হয়েছে ১৪ হাজার ৫৪টি। পরীক্ষা হয়েছে ১৪ হাজার ৯২ জনের। নতুন শনাক্ত হয়েছে ৬০৫ জন এবং সুস্থ হয়েছে এক হাজার ৩৭ জন। আর মারা গেছেন ১১ জন।
সবকিছু ছাপিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ নেতৃত্ব এবং নির্দেশনায় দ্রুত সময়ের মধ্যেই দেশ আবার স্বাভাবিক পরিবেশে ফিরে আসতে শুরু করেছে। প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে চলতি বছরের গত ২০ জানুয়ারি দেশে করোনা ভাইরাসের টিকাও এসেছে। ২৭ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী ওই টিকাদান কর্মসূচির উদ্বোধন করেন। এরপর ৭ ফেব্রুয়ারি সারাদেশে টিকা কার্যক্রম শুরু হয়। করোনা ভাইরাস মোকাবিলায় বাংলাদেশ সরকারকে এরই মধ্যে সাফল্যের কৃতিত্ব দিয়ে অভিনন্দন জানিয়েছে জাতিসংঘ, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাসহ আরও একাধিক আন্তর্জাতিক সংস্থা।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এমআইএস শাখার পরিচালক অধ্যাপক ডা. মিজানুর রহমান জানান, গতকাল বিকেল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত টিকা দেওয়ার জন্য নিবন্ধন করেছেন ৫০ লাখ ১৭ হাজার ৮০৪ জন। টিকা নিয়েছেন ৩৭ লাখ ৮৯ হাজার ৩৫২ জন। টিকা নেওয়ার পর মৃদু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দেয় ৮৪৮ জনের মধ্যে।
এর আগে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম বলেন, রাজধানী ঢাকায় ৫০টি হাসপাতাল ও সারাদেশে ৯৫৫টি হাসপাতালসহ সারাদেশে মোট এক হাজার পাঁচটি হাসপাতালে টিকাদান কার্যক্রম চলবে। এসব হাসপাতালে দুই হাজার ১৯৬টি টিম কাজ করবে। অর্থাৎ মোট এক হাজার পাঁচটি হাসপাতালে মোট ২ হাজার ৪০০টিম কাজ করবে। এছাড়াও ভ্যাকসিন বিষয়ক কার্যক্রমের জন্য টিম প্রস্তুত রয়েছে সাত হাজার ৩৪৪টি।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা জানান, চলমান কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনেশন কার্যক্রমে ব্যবহৃত কোভশিল্ড ভ্যাকসিনের দুটি ডোজ নেওয়ার ন্যূনতম ২ সপ্তাহ পর থেকে সর্বোচ্চ প্রতিরোধ সক্ষমতা তৈরি হয়। তাই এই সময়ে যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে না চললে করোনায় আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা থেকে যায়। সুতরাং ভ্যাকসিন নেওয়ার পূর্বে এবং পরেও মাস্ক ব্যবহারসহ অন্যান্য স্বাস্থ্যবিধি যথাযথভাবে মনে চলার অনুরোধ জানান তিনি।