আজকের সিলেট

বাংলাদেশ ও আফ্রিকায় ইষ্টহ্যান্ডসের রমজান সহায়তা পেয়েছে ৬০০ পরিবার

ব্রিটিশ চ্যারিটি সংস্থা ইষ্ট হ্যান্ডসের উদ্যোগে রমজান মাসে আফ্রিকা ও বাংলাদেশের সিলেট বিভাগের বিভিন্ন অঞ্চলে ৬০০ পরিবারকে তুলে দেয়া হয় রমজানের ফ্যামিলি ফুড প্যাক।

১০ এপ্রিল শনিবার সিলেটে দৃষ্টি ও শ্রবণ প্রতিবন্ধীদের বেসরকারি সংস্থা গ্রীণ ডিজএ্যাবল্ড ফাউন্ডেশনের আবাসিক ও অনাবাসিক ২৪ জন ছাত্র-শিক্ষকের জন্য দেয়া হয় রমজান মাসের খাবার। গত ১ বছরে করোনা মহামারীর সময় তাদের পাশে দাড়িয়েছে যুক্তরাজ্যের দাতব্য সংস্থা ইষ্টহ্যান্ডস। সংগঠনের পক্ষ থেকে গত ১ বছরে কয়েক দফা তাদের খাবার দেয়া হয় ।

গ্রীন ডিজএবল্ড ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে তাদের কর্মকর্তা বলেন, ইষ্টহ্যান্ডস যেভাবে গত ১ বছরে প্রতি ৩ মাস পর পর বড় ধরনের খাদ্য সহায়তা দিয়েছে তার জন্য এই অসহায় প্রতিবন্ধী বাচ্চাদের পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা।

একই দিন ১০ এপ্রিল সুনামগঞ্জের বিশ্বম্ভরপুর, জামালগঞ্জ, সুনামগঞ্জ সদর, দক্ষিন সুনামগঞ্জ আসন্ন রমজান মাস উপলক্ষে ১৫০টি পরিবারকে খাদ্য সহায়তা দেওয়া হয়েছে। যুক্তরাজ্য ভিত্তিক চ্যারিটি সংস্থা ইস্টহ্যান্ডস বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার সলুকাবাদ ইউনিয়নের কাপনা গ্রামের হতদরিদ্রদের এই সহায়তা দেয়। গ্রামের জামে মসজিদ প্রাঙ্গণে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে ৮৫টি পরিবারকে এই খাদ্যসামগ্রী তুলে দেওয়া হয়। খাদ্যসামগ্রীর মধ্যে রয়েছে ১০ কেজি আটা, ২০ কেজি চাল, ৩ লিটার তেল, ডাল, পেঁয়াজ, খেজুর, চিনি, রসুন, মশলাসহ বিভিন্ন সামগ্রী। এ সময় উপস্থিত ছিলেন, ইউপি সদস্য আক্তার হোসেন, আওয়ামী লীগ নেতা ফুল মিয়া, বায়েজিদ হোসেন প্রমুখ।

খাদ্যসামগ্রী বিতরণ শেষে স্থানীয় ইউপি সদস্য আক্তার হোসেন বলেন, ইষ্টহ্যান্ডস প্রতিবছর এই এলাকার গরীব মানুষের পাশে দাড়াচ্ছেন । করোনার সময় দুই রমজানে ফ্যামিলি প্যাক খাবার দেয়া হয়েছে যা এদেরকে পুরো একমাসের খাদ্য নিশ্চয়তা দিয়েছে। তিনি এই আয়োজনের জন্য এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে ইষ্টহ্যান্ডসের ট্রাষ্টি বাবলুল হকের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান।
এরপর জামালগঞ্জ সদর, দক্ষিন সুনামগঞ্জের শরীয়তপুর, সুনামগঞ্জ সদরেও রমজানের প্রথম সপ্তাহে ৮৫টি পরিবারের হাতে তুলে দেয়া হয় রমজানের ফুড প্যাক। বাংলাদেশে লকডাউন থাকায় স্থানীয় বাজার থেকে বাড়ি বাড়ি নিয়ে দেয়া হয় খাদ্য সহায়তা।

প্রতি বছরের মতো এ বছরও সিলেট সিটি কর্পোরেশনের ৫ নং ওয়ার্ডের ১৬২ প্রতিবন্ধী পরিবারের হাতে পুরো রমজান মাসের খাবার তুলে দিলো ইষ্টহ্যান্ডস।

১২ এপ্রিল, সোমবার সিলেট সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী ও চিকিৎসক নাজমুস সাকিব উপস্থিত থেকে এই সহায়তা তুলে দেন গরীব ও অসহায় মানুষের হাতে। পুরো কার্যক্রমটি তত্ববধানে ছিলেন আম্বরখানা বড়বাজার নিয়ে গঠিত ৫নং ওয়ার্ডের কমিশনার সাংবাদিক রেজওয়ান আহমেদ।

এ সময় মেয়র আরিফুল হক বলেন, প্রতি বছর এই প্রতিবন্ধীদের জন্য ইষ্টহ্যান্ডস যে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেয় তা অতুলনীয় ।

এই সহায়তা কার্যক্রমের পরিচালনাকারী কমিশনার রেজওয়ান আহমেদ বলেন, আমার ওয়ার্ডে ১৬২ টি প্রতিবন্ধী পরিবার আছে। এদেরকে প্রতি বছর আমরা চেষ্টা করি রমজান, কুরবানী ছাড়াও যেকোন সংকটে সহায়তা করার। এর আগে করোনাকালীন সময়েও ইষ্টহ্যান্ডস এদের পাশে ছিলো।

এছাড়া ২৩ এপ্রিল, শুক্রবার সিলেট শহরের নয়া সড়কের মিশন গলি এলাকায় ইষ্টহ্যান্ডসের উদ্যোগে গরীব অসহায় ৩৫টি পরিবার ও বালাগন্জে ১৫ পরিবারকে পুরো রমজান মাসের জন্য খাদ্য সামগ্রী তুলে দেয়া হয়।

পুরো বিতরণ কার্যক্রম পরিচালনা করেন ইষ্টহ্যান্ডসের স্থানীয় সমন্বয়কারী মো. ইকরামুল ইসলাম। বিতরণে উপস্থিত ছিলেন নর্থ ইষ্ট মেডিকেলের ডাক্তার সুদীপ্ত দে, সলটি দাস, সুমন দাস, সিমন দাস, রাজীব দাস, স্থানীয় বাসিন্দা মো খলিল মিয়া, ফয়েজ আহমেদ আরহাব, রওশন আরা বেগম ও স্থানীয় খ্রীষ্টান মিশনের ছেলেরা।

এছাড়া সিলেটের বালাগন্জে আরো ১৫ পরিবারকে বাড়ীতে নিয়ে পুরো রমজানের খাদ্য সামগ্রী দেয়া হয়।
ইষ্টহ্যান্ডস চেয়ারম্যান নবাব উদ্দিন বলেন, বাংলাদেশে গরীব অসহায় মানুষের কাছে রমজানের খাবার পৌছে দিয়েছি তবে আমাদের প্রাধান্য ছিলো দৃষ্টি, শ্রবণ ও শারীরিক প্রতিবন্ধীদের পরিবারের জন্য খাবার নিশ্চিত করা। করোনার সাথে রমজান তাই শারীরিক অক্ষম মানুষের জন্য আমাদের সহায়তার ক্ষেত্রে প্রাধান্য ছিলো। আমি আমাদের ডোনারদের প্রতি কৃতজ্ঞ।

পূর্ব আফ্রিকায় ইষ্টহ্যান্ডসের রমজান ফুড প্যাক

পূর্ব আফ্রিকায় ৬৫ মানুষের কাছে রমজান মাসের ফুড প্যাক পৌছে দিলো যুক্তরাজ্যের দাতব্য সংস্থা ইষ্টহ্যান্ডস। ইষ্টহ্যান্ডস আফ্রিকার জন্য রমজান মাসের ফ্যামিলি ফুড প্যাকের জন্য আবেদন করে ডোনারদের কাছে। অল্প করে হলেও ডোনারদের অনেকেই বাংলাদেশের পাশাপাশি আফ্রিকার জন্য দান করেন। পূর্ব আফ্রিকার দারিদ্র ও খরা পীরিত দেশ সোমালীল্যান্ডের রাজধানী থেকে অদূরে মোহাম্মদ মগ বস্তিতে এই ফুড প্যাক পৌছে দেয়া হয়।

করোনা পরিস্থিতির জন্য সরকারের বিধি নিষেধ মেনেই কোন ধরনের জন সমাগম ছাড়াই বাড়ীতে বাড়ীতে গিয়ে ইষ্টহ্যান্ডস এর স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবীরা এই ফুড প্যাকগুলো পৌছে দেন।

ইষ্টহ্যান্ডসের সোমালীল্যান্ড প্রতিনিধি উসমান আবদেলী বলেন, একেকটা পরিবারকে ২৫ কেজি চাল, ২৫ কেজি আটা, ২৫ কেজি চিনি, ৫ লিটার তেল ও ১০ কেজি খেজুরসহ ৯০ কেজি ওজনের ফুড প্যাক দেয়া হয়।

ইষ্টহ্যান্ডস এর চেয়ারম্যান নবাব উদ্দিন বলেন, আমরা বাংলাদেশের পাশাপাশি ডোনারদের কাছে আফ্রিকার জন্যও রামাদানের ফুড প্যাক আহবান করেছিলাম, ডোনারদের অভূতপূর্ব সাড়ায় সম্ভব হয়েছে আফ্রিকায় দারিদ্রপীড়িত এলাকায়। ভবিষ্যতে আরো বড় পরিসরে আফ্রিকায় কাজ করার ইচ্ছা রয়েছে।

আরও সংবাদ

Close