শীর্ষ খবর

সিলেটের হোটেলগুলোতে কি চলে?

রবিউস সানী: সিলেটের আবাসিক হোটেল যেন একেকটা ‘মিনি পতিতালয়’। নগরীর বেশকিছু আবাসিক হোটেলে প্রায়শই সন্ধান মিলছে নানা অসামাজিক কার্যকলাপের। অবৈধ ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে হোটেল মালিকরা। মাঝেমধ্যে এসব হোটেলে অভিযান চালিয়ে অসামাজিকতার সাথে জড়িতদের আটক করে পুলিশ। তারপরও বন্ধ হচ্ছে না অসামাজিক কাজ। চিহ্নিত হোটেলগুলোর মালিকদের ডেকে এনে পুলিশের পক্ষ থেকে সতর্ক করা হয়েছে।

গেল এক সপ্তাহে নগরীর ৪টি আবাসিক হোটেল থেকে অবৈধ কাজে লিপ্ত থাকার দায়ে ১৮ নারীপুরুষকে আটক করা হয়। এর আগে মার্চ মাসে চালানো অভিযানে আটক করা হয় ৪৮ জনকে। কিন্তু এসব অভিযানের পরও থামছে না অবৈধ এ কার্যক্রম। যে হোটেলে পুলিশ অভিযান চালায় সেখানেই পাওয়া যাচ্ছে অসামাজিকতার সাথে জড়িত নারী-পুরুষদের।

সর্বশেষ আজ বুধবার (২৬ মে) নগরীর সুরমা মার্কেটস্থ নিউ সুরমা আবাসিক হোটেলে অভিযান চালায় পুলিশ।এসসময় অসামাজিকতার দায়ে ২ নারী ও ২ পুরুষকে আটক করা হয়। হোটেলের ৪র্থ তলার একটি কক্ষ থেকে তাদের আটক করা হয়।

এর দুই দিন আগে অর্থাৎ সোমবারও সুরমা মার্কেটের বদরুল আবাসিক হোটেলে বেলা আড়াইটার দিকে পুলিশ বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে। এসময় ওই হোটেল থেকে ৭ নারী-পুরুষকে আটক করা হয়।

এছাড়া গেল রোববার (২৩ মে) নগরীর কালীঘাটস্থ ‘বন্ধু রেস্ট হাউজ’ নামক হোটেল থেকে অসামাজিক কাজে লিপ্ত থাকাবস্থায় ১ পুরুষ ও ২ নারীকে আটক করে কোতোয়ালি মডেল থানাধীন বন্দরবাজার ফাঁড়ি পুলিশ।

আর (২২ মে) রাত ১টার দিকে নগরীর দক্ষিণ সুরমা থানাধীন কদমতলি এলাকার মুক্তিযোদ্ধা চত্বরস্থ মেঘনা আবাসিক হোটেলে আকস্মিক অভিযান চালায় থানার একদল পুলিশ। এসময় ওই হোটেলের ৩য় তলার ১১৯ নম্বর রুমের ভিতরে অসামাজিক কার্যকলাপে লিপ্ত ছিলেন ২ যুবক ও ২ যুবতী। অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করা হয়।

গেল মার্চ মাসে তিনটি অভিযানে গ্রেপ্তার করা হয় ২৪ জন নারী-পুরুষকে। সিলেটের ৩ এলাকার আবাসিক হোটেলের বিরুদ্ধে বিস্তর অভিযোগ। এর মধ্যে রয়েছে সিলেটের উত্তর অংশের সুরমা মার্কেটের দু’টি আবাসিক হোটেল ও বন্দরবাজার এলাকার কয়েকটি হোটেল।

এ ছাড়া অপরাধ জোন দক্ষিণ সুরমার কয়েকটি হোটেলের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ রয়েছে। স্থানীয়রা জানিয়েছেন- এসব হোটেলের মালিকদের পুলিশের বড় কর্তারা সতর্ক করলেও মূলত থানা ও ফাঁড়ির মাঠপর্যায়ের পুলিশ সদস্যরা এই অসামাজিক কাজে শেল্টার দিয়ে থাকে। লালদিঘীর পাড়ের হোটেল সোনালী। গত এক বছরে একাধিকবার ওই হোটেলে অভিযান চালিয়েছে পুলিশ। প্রতিবারই অভিযানে গ্রেপ্তার হয়েছে অসামাজিক কাজে নিয়োজিত নারী ও পুরুষকে। অভিযান শেষ হওয়ার পর আবার শুরু হয় অবৈধ ব্যবসা।

স্থানীয় ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করেছেন শুধু অসামাজিক কাজ নয়, এসব হোটেলে মাদকের হাট গড়ে তোলা হয়েছে। ইয়াবা বিক্রি ও সেবন করা হচ্ছে এসব হোটেলে। এতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সিলেটের স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা গত রোববার সন্ধ্যারাতের দিকে সোনালী আবাসিক হোটেলে ফের অভিযান চালায় পুলিশ। এ সময় পুলিশ অসামাজিক কাজে জড়িত থাকার অভিযোগে ৩ যুবক ও ৩ যুবতীকে গ্রেপ্তার করে।

সুরমা মার্কেটের নিউ সুরমা আবাসিক হোটেল। সিলেটের পরিচিত অসামাজিক কাজের স্থান এটি। অনেকটা প্রকাশ্যেই ওই হোটেলের মালিকপক্ষ চালিয়ে যাচ্ছে অসামাজিক কাজ। গত ৬ মাসে অন্তত ৬-৭ বার এই হোটেলে অভিযান চালিয়েছে পুলিশ। কখনো কখনো পুলিশের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তারা এ হোটেলের অভিযানে অংশ নেন। এরপরও হোটেলে অসামাজিক কাজ বন্ধ হয়নি। বরং মাঠপর্যায়ের পুলিশের শেল্টার নিয়ে হোটেলের মালিকপক্ষ প্রকাশ্যেই অবৈধ ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছিলেন।

নিউ সুরমা আবাসিক হোটেলের কর্মকাণ্ডে বিরক্ত সুরমা মার্কেটের ব্যবসায়ীরা। অভিযোগের পর অভিযোগ ওঠায় মার্চ মাসে পুলিশ ওই হোটেলে অভিযান চালিয়েছে। এ সময় হোটেল থেকে ২ যুবতী ও ৬ যুবককে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। গ্রেপ্তারকৃতদের বিরুদ্ধে এসএমপি অ্যাক্টের ৭৭ ধারা মোতাবেক বিজ্ঞ আদালতে প্রসিকিউশন দাখিল করা হয়েছে।

অসামাজিক কর্মকাণ্ডের আরেক নিরাপদ জোন সিলেটের দক্ষিণ সুরমার কয়েকটি আবাসিক হোটেল। এর মধ্যে হোটেল তিতাস ও হোটেল প্রভাতী হচ্ছে পরিচিত হোটেল। ওই হোটেলে গত ৩ মাসে একাধিকবার অভিযান চালালেও অবৈধ কর্মকাণ্ড বন্ধ হয়নি। গত মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে সিলেটের দক্ষিণ সুরমার হুমায়ুন রশিদ চত্বরস্থ তিতাস হোটেলে অসামাজিক কার্যকলাপে জড়িত থাকায় ৩ জন নারী ও ৭ পুরুষসহ মোট ১০ জনকে গ্রেপ্তার করেছে দক্ষিণ সুরমা থানা পুলিশ।

আরও সংবাদ

Close