শীর্ষ খবর

ভূমিকম্পের ডেঞ্জার জোন সিলেটে ক্ষয়ক্ষতি কমাতে সিসিকের পরিকল্পনা

ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে থাকা সিলেটে ভূমিকম্পের পূর্ববর্তী ও পরবর্তী করণীয় নিয়ে কাজ শুরু করেছে সিলেট সিটি কর্পোরেশন (সিসিক)।

ভূমিকম্পের ডেঞ্জার জোন সিলেট। সম্প্রতি সিরিজ ভূকম্পনকে ভূতাত্ত্বিকভাবে ঝুঁকিপূর্ণ এই এলাকায় যে কোনো সময় বড় ধরনের ভূমিকম্প হওয়ার ইঙ্গিত হিসেবে দেখছেন বিশেষজ্ঞরা। তাই এর মধ্যে স্বল্প ও দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনাও নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছে সিলেট সিটি কর্পোরেশন সূত্র।

আজ মঙ্গলবার (১ জুন) সন্ধ্যা ৭টায় ভূমিকম্প পূর্ববর্তী ও পরবর্তীতে সিসিকের করণীয় কী হতে পারে কিংবা কিভাবে ভূমিকম্পের ক্ষয়ক্ষতি কমানো যায় সে বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের সাথে সভায় বসবেন সিসিক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী।

বিষয়টি নিশ্চিত করে মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভিসি ড. মাসুদ কামাল, বিশেষজ্ঞ ড. আনসারি, বিশেষজ্ঞ ড. জাহাঙ্গীরসহ সিলেটে যারা ভূমিকম্প নিয়ে কাজ করেন তাদের সাথে বৈঠক হবে। কারণ তারা সকলেই দীর্ঘদিন বিষয়টি নিয়ে কাজ করছেন। এজন্য আমরা তাদের পরামর্শ নেব। এরপর আমরা সিদ্ধান্ত নেব।

তিনি আরও বলেন, বর্তমানে আমার পরিকল্পনা হলো এই ধরনের ঘটনা ঘটলে আমরা জনগণকে কিভাবে সাহায্য করতে পারব সেটি হাতের কাছে রাখা। এছাড়া প্রশিক্ষণ ও সতর্কতার কোনো বিকল্প নেই। এর বাইরে যেটি দরকার সেটি হল লজিস্টিক। সেজন্য আমাদের প্রস্তুতি আছে।

গত শনিবার সকাল ১০টা থেকে বেলা ২টার মধ্যে সিলেটে ৯টি ভূকম্পন হয়। এর পরদিন রোববার ভোরে ফের ভূকম্পন অনুভূত হয়। এসব ভূকম্পনগুলোর সময় মানুষের মধ্যে দেখা দেয় আতঙ্ক। ভবিষ্যতের বড় বিপদ বিবেচনায় প্রস্তুতির অংশ হিসেবে ভূমিকম্পের সময় করণীয় বিষয়ে শিগগির মহড়া অনুষ্ঠানের উপর জোর এসেছে।

সেই প্রেক্ষিতে গত শনিবার দুপুর থেকেই তৎপর হয়ে ওঠে সিলেট সিটি কর্পোরেশন। পরদিন রোববার নগরের ঝুঁকিপূর্ণ মার্কেট ও ভবনগুলোতে অভিযান চালায় সিসিক। সোমবার (৩১ মে) থেকে ৯ জুন পর্যন্ত নগরের ঝুঁকিপূর্ণ ৬টি মার্কেট বন্ধ রাখার ঘোষণা দেয় সিসিক।

মার্কেটগুলো হলো- সিলেট নগরীর মিতালি ম্যানশন, সিটি সুপার মার্কেট, মধুবন সুপার মার্কেট, রাজা ম্যানশন, সমবায় ভবন ও সুরমা মার্কেট। এই ৬টি ভবন আগে থেকেই ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের তালিকায় ছিল বলে জানিয়েছে সিটি কর্পোরেশন।

এদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থাপিত আর্থ অবজারভেটরির পরিচালক ভূতত্ত্ববিদ অধ্যাপক সৈয়দ হুমায়ুন আখতার বলেন, সামান্য তিন মাত্রার হলেও ৩০-৪০ মিনিটের ব্যবধানে ঘন ঘন ভূমিকম্প হওয়ায় সিলেটবাসী আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। একই এলাকায় মোট ৬ বার কম্পন হয়েছে। এটাকে ‘আফটার শক’, ‘প্রি শক’ কিছুই বলা যাবে না। এই ভূকম্পন একটা ইঙ্গিত বহন করে যে এটা সক্রিয় এবং ভবিষ্যতে এখানে বড় মাত্রার ভূমিকম্প যে কোনো সময় হতে পারে। যেহেতু প্রচুর শক্তি জমে আছে।

অধ্যাপক হুমায়ুন জানান, ১৯২২ সালে ৭.৬ মাত্রার ভূমিকম্প হয়েছিল হবিগঞ্জ অঞ্চলে, ১৯১৮ সালেও ৭.৫ মাত্রার হয়েছিল। চার বছরের ব্যবধানে বড় ভূকম্পন ছিল শতবছর আগে। একমাস আগে ডাউকি ফল্টেরই উত্তর প্রান্তে আসাম সীমান্তে ৬ মাত্রার ভূমিকম্প হয়। তার মানে এই ডাউকি ফল্ট খুব সক্রিয়।

তিনি আরও বলেন, ডাউকি ফল্ট ও টেকনাফ সাবডাকশন জোনে হাজার বছর ধরে যে পরিমাণ শক্তি ক্রমান্বয়ে সঞ্চয় হয়ে আসছে, তাতে আট মাত্রার অধিক ভূকম্পন সংগঠিত করতে পারে। এ শক্তি একবারে বের হতে পারে, আবার আংশিকভাবে বের হতে পারে। সেটি আমরা এখনই বলতে পারি না।

এ অধ্যাপক বলেন, ঝুঁকি রয়েছে, সেজন্য আমরা হুমকির মুখেও রয়েছি। ভূমিকম্পের দুর্যোগ মোকাবেলায় মানসিক প্রস্তুতি দরকার। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়ে মহড়া ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নিতে হবে। অনেক বছর আগে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। এটা চলমান রাখতে হবে। সবচেয়ে বড় কথা, মহড়া প্রতিবছর করতে হবে।

অধ্যাপক হুমায়ুন বলেন, সিলেটে মহড়া করা থাকলে এমন আতঙ্ক বিরাজ করত না। করোনায় যেমন মাস্ক আবশ্যক, ভূমিকম্পের সচেতনতায় মহড়াও তেমন আবশ্যক।

প্রস্তুতির বিষয়ে সিলেটের মেয়রকে উদ্যোগী হওয়ার আহ্বান জানান এই ভূতত্ত্ববিদ। তিনি বলেন, ‘সিলেটের সিটি মেয়রকে শহরে মহড়া আয়োজনের ব্যবস্থা করতে হবে। পুরোনো ও নতুন স্বেচ্ছাসেবকদের ট্রেইন্ড আপ করতে হবে, একটি প্রক্রিয়ার মধ্যে রাখতে হবে। নিরাপদ জায়গাগুলো জানতে হবে।

আর আবহাওয়া অফিস, ঢাকার আবহাওয়াবিদ মমিনুল ইসলাম বলেন, সিলেট অঞ্চল ভূমিকম্পের ঝুঁকিপূর্ণ। এ কারণ এখানে বড় ধরনের ডাউকি ফল্ট রয়েছে। সিলেট থেকে ৫০-৬০ কিলোমিটার দূরে এর চ্যুতি। ফল্ট লাইনগুলোতে ভূকম্পন হয়।

আরও সংবাদ

Close