আজকের সিলেটআন্তর্জাতিকপ্রবাসফিচার

বিশ্বনাথের তরুণ বিজ্ঞানী সাদিয়ার আবিষ্কার : কোভিডসহ ৫ প্রাণঘাতি জীবাণু ধ্বংসকারী স্প্রে এখন নাসায়

শুধু করোনা নয় তার আবিষ্কৃত স্প্রে ধ্বংস করতে সক্ষম ইবোলা, ইনফ্লুয়েঞ্জা, সার্স এমনকি এইচআইভির জীবাণুও। ২৬ বছর বয়স্ক বাঙালি বিজ্ঞানী বিশ্বকে হতবাক করে দিয়ে আবিষ্কার করল কোভিড-১৯ এর জীবাণু বিধ্বংসী সলিউশন বা স্প্রে। মরণব্যাধি কতগুলো ভাইরাসের বিরুদ্ধে এক যুগান্তকারী আবিষ্কার। তার এই নতুন আবিষ্কার ইতিমধ্যে নাসায় ব্যবহার করা হয়েছে। ওমান, দুবাই ব্রাজিলসহ পৃথিবীর সব প্রান্ত থেকে এই ভল্টিক এর চাহিদা খুব দ্রুত বেড়ে চলেছে। ১০ মিলিয়ন পাউন্ডের অর্ডারের চুক্তিও হয়েছে।

যুক্তরাজ্যের চেশায়ার শহরে বসবাসরত তরুণ বিজ্ঞানীর এই আবিষ্কার সারাবিশ্বে আশার আলো ছড়াচ্ছে। বাংলাদেশের গর্ব সাদিয়া এবং তাঁর পিতা কবীর আহমদের সঙ্গে বিস্তারিত আলোচনার নিয়ে আজকের এই পর্ব।

পুরো নাম সাদিয়া খানম। পিতা কবির আহমেদ। বাংলাদেশে তাদের বাড়ি বিশ্বনাথ উপজেলার মোহাম্মদ পুর গ্রামে। মা ফরিদা খানম আহমেদের বাড়ি দক্ষিণ সুরমার সিলামে। তাঁরা দুই বোন ও মা-বাবা মিলে ছিমছাম পরিবার। সাদিয়া’র দাদা আসমত আলী দীর্ঘদিন ধরে অ্যালজাইমার অসুখে ভোগছেন। দাদার প্রতি গভীর ভালোবাসা তাকে অ্যালজাইমা নিয়ে পিএইচডি করতে উদ্বুদ্ধ করেছে। সাদিয়ার সঙ্গে অনেকক্ষণ কথা বলার পর তার ডিটারমিনেশন দেখে আমার মনে হচ্ছিল সাদিয়াই পারবে এই দুরারোগ্য থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য কোন ঔষধ আবিষ্কার করতে।

ভল্টিক আবিষ্কার দীর্ঘ এক বছরের অক্লান্ত প্রচেষ্টার ফল। কোভিড-১৯ শুরু হওয়ার সাথে সাথে জীবনের গাড়ি যেন থেমে গেল। এ সময়কার অবস্থার কথা ব্যক্ত করতে গিয়ে সাদিয়া বলেন, রিয়েল লাইফ সিচুয়েশনে মানুষ কিভাবে তার নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারে, কিভাবে মানুষকে এই মরণব্যাধি থেকে রক্ষা করা যায়, কিভাবে মানুষকে সাহায্য করা যায়, কিভাবে অ্যালজাইমার মতো একটা দুরারোগ্য থেকে মানুষ রক্ষা পায়, একজন বিজ্ঞানী হিসেবে যেন আমার অনেক দায়িত্ব বেড়ে গেল। কভিডের কারণে এ সময় আমাদের পারিবারিক রেস্টুরেন্ট বন্ধ হয়ে যায় এবং আমি দিনরাত আমার গবেষণার কাজে নিয়োজিত হই। রেস্টুরেন্ট হয়ে পড়ে ল্যাবরেটরি। বিভিন্ন জিনিসের উপর অবিরাম গবেষণা চলতে থাকলো। কোভিড ১৯ এর উপর গভীর গবেষণা চালিয়ে যেতে লাগলাম। বাজারে যত ধরনের জীবাণুনাশক রয়েছে প্রায় সবকটির উপর গবেষণা চালালাম।

দীর্ঘ প্রায় এক বছর ধরে অক্লান্ত পরিশ্রমের পর আমার স্বপ্ন সত্যি হলো। ভল্টিক আবিষ্কার হলো। চূড়ান্তভাবে এই সলিউশনের ফর্মুলা আবিষ্কার যেন আমার জীবনের উৎসাহ-উদ্দীপনা আরো বৃদ্ধি করে দিল। এই ভল্টিক এর রয়েছে শতভাগ কর্মক্ষমতা। যা ব্যবহারের পর ১৪ দিন পর্যন্ত ব্যবহৃত জায়গা সম্পূর্ণ জীবাণুমুক্ত থাকে।

বিখ্যাত সাইন্টিস্ট Colin Hagan, ‘Chester and Cheshire News’ কে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন “the potential of Voltique is a watering and it could become a revolutionary product across all industries including medical hospitality aviation marine and nuclear. The implications are massive, with every surface of spray is applied to being 100% COVID safe for 14 days following application”

তিনি আরো বলেন ” it represents a huge step for COVID safety and it will save businesses money on disinfectants and cleaning hours too. It’s been tested by the NHS, NASA and many independent labs globally, so people can be assured it’s safe and non-flammable – you can spray Voultique on an apple and eat it safely”

বোধকরি ঠিক একই কারণে ‘চেসার টাইম’ তার আবিষ্কারের কথা বলতে গিয়ে এক টাইটেলে যথার্থই লিখে : “From Cheshire Indian restaurant to NASA the breakthrough COVID spray invented by young scientist”

লেখাপড়ার কথা বলতে গিয়ে সাদিয়া জানায়, ব্ল্যাক বার্ন মুসলিম গার্লস স্কুল থেকে ইসলামিক থিওলজি এবং মিশকাত এর উপর আলিমা কোর্স করে এবং একই স্কুল থেকে জিসিএসই পাস করে। তারপর হলিক্রস কলেজ থেকে এ‌ লেভেল উত্তীর্ণ হয়। তার পিতার সাথে আলাপকালে তিনি উল্লেখ করেন, হলিক্রস কলেজ মিডল্যান্ড এলাকায় অত্যন্ত স্বনামধন্য একটি কলেজ এবং বিশেষ করে সাইন্সের সাবজেক্ট এর ব্যাপারে বিশেষভাবে পারদর্শী। এখনকার মেজরিটি শিক্ষকরাই প্রফেসর।

২০১৪ সালে সাদিয়া পরিবারের সঙ্গে বাংলাদেশে বেড়াতে যায়। অতিরিক্ত সময়ে ছুটি কাটাতে গিয়ে তার লেখাপড়া অনেকটা পিছিয়ে পড়ার আশংকা দেখা দেয়। এ সময় তার শিক্ষককে অতিরিক্ত হোম ওয়ার্ক দেওয়ার জন্য অনুরোধ করে। বিশেষ করে সাইন্সের অতিরিক্ত হোমওয়ার্ক নিয়ে তার বাংলাদেশ সফর। কেননা সায়েন্স তার প্রিয় সাবজেক্ট। এ কাজ করতে গিয়ে সে সম্পূর্ণ বইগুলো শেষ করে ফেলে। শিক্ষক তার মেধা দেখে আশ্চর্য হয়ে যান। এরপর কলেজে গিয়ে তার কোন বেগ পেতে হয়না। মানচেষ্টার ইউনিভার্সিটি তে বায়োমেডিকেলে ডিগ্রী উত্তীর্ণ করেন।

অ্যালজাইমার উপর পিএইচডি করার জন্য ভর্তি হয়। অ্যালজাইমার উপর তার একটা বিশেষ দুর্বলতা রয়েছে। কেননা ১৪ বছর বয়স থেকেই দেখে আসছে তার দাদা এই অ্যালজাইমার রোগে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ে যাচ্ছেন। দাদার প্রতি অকৃত্রিম ভালবাসা অ্যালজাইমা জয় করার জন্য তার প্রচেষ্টা চলতে থাকে। সাদিয়া জানায়, যদিও অ্যালজাইমার প্রাথমিক একটা নিখুঁত দিক নির্দেশনা ছিল কিন্তু পর্যাপ্ত টাকার অভাবে তাকে কোভিড নিয়ে গবেষণায় মনোনিবেশ করতে হয়। ইতোমধ্যে কোভিডের আক্রমণ তীব্র হলে কিভাবে মানুষকে সাহায্য করা যায় সেই থেকে তার গবেষণার কাজ এগিয়ে যেতে থাকে।

তার প্রতিভা, মেধা এবং অধ্যাবসায় এই তিন মিলে ভল্টিক আবিষ্কার করে বিশ্বকে জানান দিল, যেকোনো প্রচেষ্টার ফল সুদুরপ্রসারী। অত্যন্ত কঠোর পরিশ্রমী ও উদ্ভাবনী শক্তির অধিকারী সাদিয়া তার লক্ষ্যবস্তুতে পৌঁছাতে কোন বাধাই তাকে আটকাতে পারেনি ।

তার পিতার অনুপ্রেরণার কথা বলতে গিয়ে সাদিয়া জানায়, চেশায়ার শহর থেকে তার স্কুল এবং ইউনিভার্সিটি প্রায় ৬০ মাইল দূরে। প্রতিদিন এই দীর্ঘ পথ যাওয়া আসা প্রায় ১২০ মাইল ড্রাইভ করার দায়িত্ব ছিল তার বাবার। এই যাতায়াত একদিন, এক সপ্তাহ কিংবা এক বছরের জন্য ছিল তা কিন্তু নয়। বরং ১০ বছরব্যাপী মেয়ের লেখাপড়ার জন্য পিতার এই সহযোগিতা এই পরিশ্রম সাফল্যের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যায়।

ভল্টিকের অর্থনৈতিক সফলতার কথা বলতে গিয়ে সাদিয়া জানায়, আমি অর্থনৈতিক সফলতার চেয়ে মানবতার সফলতা বড় করে দেখছি। আমার স্বপ্ন অ্যালজাইমার জয় করা।

দীর্ঘ আলাপচারিতার পর আমার বিশ্বাস সাদিয়া অত্যন্ত পরিশ্রমী অত্যন্ত আত্মবিশ্বাসী এবং প্রতিভাবান। আমি বিশ্বাস করি ইনশাআল্লাহ একদিন তার হাতে অ্যালজাইমার প্রতিষেধক উদ্ভাবিত হবে। আমি তাকে বাঙালি কমিউনিটির পক্ষ থেকে ভল্টিক আবিষ্কারের জন্য অভিনন্দন জ্ঞাপন করি এবং ভবিষ্যৎ সাফল্য কামনা করি।

লেখক মোঃ আবুল হোসেন। শিক্ষক, লন্ডন।

আরও সংবাদ

Close