শীর্ষ খবর
সিলেটে ফের মাথাচাড়া দিচ্ছে ইয়াবা ব্যবসায়ীরা : একদিনে গোয়েন্দাজালে ৩
রবিউস সানী: সিলেটের ইয়াবা ব্যবসায়ীরা ফের মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে। তরুণ যুবকরা জড়িয়ে পড়ছে ইয়াবা ব্যবসায়। দিনের পর দিন সিলেটে ইয়াবার বিস্তার লাভ করছে। নেশার বড়ি ইয়াবা পাচারের নতুন পথ হয়ে উঠেছে সিলেট সীমান্ত। ভারতের মিজোরাম রাজ্য থেকে আসাম ও মেঘালয় হয়ে সীমান্ত দিয়ে ইয়াবা ঢুকছে সিলেটের বিভিন্ন এলাকায়। এ ছাড়া জেলার জকিগঞ্জ ও বাল্লা সীমান্তের ওপারে (ভারতের অংশে) গড়ে উঠেছে ইয়াবা তৈরির ছোট ছোট কারখানা। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও পুলিশ সদর দপ্তর সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
সীমান্ত পার হয়ে সিলেট নগরীর বিভিন্ন স্থানে পৌছে যায় মাদকের চালান। ইয়াবার বড় পাইকারি বাজার সিলেটের কাষ্টঘর এলাকা। সেখান থেকে ইয়াবা কিনে নিয়ে বিভিন্ন স্থানে খুচরা বিক্রি করা হয়। নগরজুড়ে ইয়াবা ব্যবসা এক প্রকট আকার লাভ করেছে। একের পর পর পুলিশি অভিযানও চলছে তাদের বিরুদ্ধে। গ্রেফতার হচ্ছে বিশাল বিশাল ইয়াবার চালান। গত একদিনেই গোয়েন্দা জালে ধরা পড়েছে ৩ ইয়াবা ব্যবসায়ী।
গত বুধবার (২৮/০৪/২০২১) দুপুরে সিলেট মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক মোঃ আনোয়ারুল হোসাইনের নেতৃত্বে এসআই (নিঃ) মাহাবুর আলম মন্ডল, সঙ্গীয় এএসআই (নিঃ) ইব্রাহিম আল সুমন, কনস্টেবল আব্দুল কাদির, মাসুদুর রহমান, ইকবাল হোসেন, জালাল উদ্দিন ও দীপু সিংহ একটি অভিযান চালায়।অভিযানকালে বন্দর বাজারস্থ সিলেট কেন্দ্রীয় পোষ্ট অফিসের সামনে থেকে ১৮ পিস ইয়াবাসহ এক মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারকৃত শাকিল মিয়া বয়সে তরুণ। ১৯ বছর বয়সেই সে এখন মাদক ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েছে। তার বাড়ি হবিগঞ্জের বানিয়াচং থানার মরমকমপুর ইউনিয়নের পাতাইড়া গ্রামে। তার পিতার নাম আছমত আলী। পুলিশ জানায়, সে পেশাগত মাদক ব্যবসায়ী এবং সে সিলেট শহরের কাষ্টঘর এলাকা হতে ইয়াবা ট্যাবলেট (মাদক) সংগ্রহ করে ঘটনাস্থল এলাকা সহ আশপাশ এলাকার মাদক সেবীদের কাছে খুচরা দরে বিক্রি করে। তার বিরুদ্ধে হবিগঞ্জ থানায় এক নন এফআইআর রয়েছে।
এর কিছুক্ষণ পর অর্থাৎ বিকেলে সিলেট মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক এসএম মিজানুর রহমানের নেতৃত্বে এসআই (নিঃ) মোঃ আব্দুস সালাম, বিশ্বজিত রায়, গিয়াস উদ্দিন, কনস্টেবল মনোরঞ্জন চক্রবর্তী, হুমায়ুন কবির, আবুল কালাম ও উত্তম রায় মহাজনপট্টিতে অভিযানে নামে। সেখান থেকে বাদশা মিয়া নামে এক জনকে আটক করা হয়। যার বাড়ি চাঁদপুরের হাইমচর থানার নীলকমল গ্রামে। পিতার নাম আনোয়ার হোসেন। তার বয়স ৩২ বছর। সে বর্তমানে সিলেটের দক্ষিণ সুরমায় বসবাস করছে। গ্রেফতারকালে তার কাছ থেকে ১৫ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট জব্দ করা হয়। পুলিশ জানায়, সে একজন পেশাগত মাদক ব্যবসায়ী। সেও নগরীর কাষ্টঘর এলাকা থেকে ইয়াবা ট্যাবলেট সংগ্রহ করে ঘটনাস্থল এলাকাসহ আশপাশ এলাকার মাদক সেবীদের নিকট খুচরা দরে বিক্রি করে।
ওইদিন রাতে সিলেট মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক মোঃ আমিনুল ইসলামের নেতৃত্বে এসআই (নিঃ) শামীম উদ্দিন, ইমদাদুল হক, প্রদীপ কুমার সিংহ, কনস্টেবল জীবন মিয়া, আব্দুল্লাহ আল মামুন, আবু সুফিয়ান ও নজরুল ইসলাম আরেকটি অভিযান চালান। সোবহানীঘাট এলাকায় অভিযান চালিয়ে তারা ১৮পিস ইয়াবা ট্যাবলেটসহ আল আমিন নামে এক মাদক ব্যবসায়ীকে আটক করেন। ৩০ বছর বয়সের আল আমিন রাজবাড়ি জেলার বালিয়াকান্দি থানার জাবরকল গ্রামের মৃত আবুল কালামের পুত্র। বর্তমানে সে নগরীর ক্বীন ব্রীজ এলাকায় ভাসমান অবস্থায় বসবাস করছে। পুলিশ জানিয়েছে, সেও পেশায় একজন মাদক ব্যবসায়ী। এবং সে কাষ্টঘর এলাকা থেকে ইয়াবা ট্যাবলেট পাইকারী দরে কিনে। তারপর সেগুলো নগরীর বিভিন্ন এলাকার মাদক সেবীদের কাছে খুচরা দরে বিক্রি করে।
সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের এডিসি বিএম আশরাফ এসব অভিযানের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, গ্রেফতারকৃত ৩ আসামীর বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা রুজুর বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন। মাদকের বিরুদ্ধে পুলিশের অবস্থান জিরো টলারেন্স। তিনি বলেন, ইয়াবা ব্যবসায়ীদের ধরতে আমাদের অভিযান চলবে।
সূত্র জানায়, সিলেটের জকিগঞ্জ উপজেলায় ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত রয়েছে। সীমান্ত এলাকার দৈর্ঘ্য প্রায় ৫৪ কিলোমিটার। জকিগঞ্জ সীমান্তের উল্টো দিকে ভারতের করিমগঞ্জ ও শিলচর এলাকা। দুই দেশের সীমান্তের মধ্যে একটি ছোট নদী আছে। ইয়াবা ব্যবসায়ীরা ওপার থেকে পলিথিন ব্যাগে ইয়াবা ভরে রশির সাহায্যে নদীতে ফেলে দেয়। এপার থেকে কারবারিরা সেটা তুলে নেয়। এভাবেই চলে ইয়াবা পাচার। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র বলছে, ভারতের করিমগঞ্জের আবদুল্লাহপুরে ইয়াবার কারখানা রয়েছে। সীমান্ত পেরিয়ে সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ছে এই ইয়াবা। ধ্বংস হচ্ছে তরুণ সমাজ। নেশার টাকার জন্য আপনজনকেও খুন করতে ইতস্তত হচ্ছে না তারা।