আন্তর্জাতিকইসলামশীর্ষ খবর
ত্যাগের মহিমায় উদ্ভাসিত হোক কোরবানি
![](https://azkersylhet.com/storage/2019/10/EID-1-1.jpg)
কুরবানী মানে ত্যাগ। মুসলিম জাতির সামর্থ্যবান ব্যক্তিবর্গ মহান আল্লাহকে খুশি করার জন্য একটি পশু আল্লাহর রাহে কোরবান করেন। যার সূচনা করেছিলেন মুসলিম জাতির পিতা হযরত ইব্রাহিম আলাইহিসাল্লাম তাঁর প্রিয় পুত্রকে কোরবানি করার পরীক্ষার মাধ্যমে। এই কোরবানির মাধ্যমে, সকলে লোভ হিংসা এবং মনের পশুত্বকে কোরবানি করার শিক্ষা আমরা পেয়ে থাকি। আর এই শিক্ষাটি যদি আমাদের বাস্তব জীবনে প্রতিফলিত না হয় তবে কোরবানির লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্য ব্যাহত হবে।
বছর ঘুরে আবারও এসেছে ত্যাগের মহিমায় ভাস্বর পবিত্র ঈদুল আজহা। ১০ জিলহজ এ পবিত্র ঈদুল আজহা অনুষ্ঠিত হলেও পরের দুই দিন অর্থাৎ ১১ ও ১২ জিলহজেও পশু কোরবানি করার বিধান রয়েছে। কোরবানির ইতিহাস সুপ্রাচীন।
প্রায় চার হাজার বছর আগে হজরত ইব্রাহিম (আ.) স্বপ্নে তার সবচেয়ে প্রিয় বস্তু কোরবানি করার জন্য মহান আল্লাহতাআলার নির্দেশ পেয়েছিলেন। হজরত ইব্রাহিম (আ.)-এর জীবনে সবচেয়ে প্রিয় ছিলেন তার পুত্র হজরত ইসমাইল (আ.)। আল্লাহর সন্তুষ্টি বিধানের জন্য তিনি তার প্রিয়তম পুত্রকেই কোরবানি করার প্রস্তুতি নেন।
তিনি পুত্রকে মহান আল্লাহর নির্দেশের কথা জানান এবং পুত্র সানন্দে নিজের জীবন উৎসর্গ করতে সম্মত হন। পরম করুণাময়ের অপার কুদরতে হজরত ইসমাইল (আ.)-এর পরিবর্তে একটি দুম্বা কোরবানি হয়ে যায়।
এ ঘটনার অন্তর্নিহিত বাণী স্রষ্টার প্রতি পরিপূর্ণ আনুগত্য ও ত্যাগ স্বীকারের মধ্যেই ঈদুল আজহার এই আনন্দময় নিহিত। তাই ঈদুল আজহা ত্যাগের মহিমায় ক্ষুদ্রতা ভুলে ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে মিলিত হওয়ার সুযোগ করে দেয়।
এবারের ঈদ এসেছে ভিন্ন প্রেক্ষাপটে। এমনিতেই করোনা ভাইরাসজনিত প্রাণঘাতী মহামারীর দাপটে বিপর্যস্ত মানুষ। এ ছাড়া বন্যার কারণে হাজার হাজার পরিবার পানিবন্দি। এমন পরিবেশে কোরবানি ও বাড়িতে যাতায়াতের ক্ষেত্রে খুব সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। নয়তো এর ফল যে কতটা ভয়াবহ হবে, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। নিজে সুস্থ থাকতে কাছের মানুষকে সুস্থ রাখতে কঠিনভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ঈদ উৎসব পালন করতে হবে। ইসলামে পরিচ্ছন্নতার গুরুত্ব অপরিসীম।
পশু কোরবানির পর সিটি করপোরেশনকে তৎপর থাকতে হবে। একই সঙ্গে নগরবাসীর প্রতি আমাদের অনুরোধ থাকবে, তারাও যেন পশু কোরবানি দেওয়ার ক্ষেত্রে পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখতে সচেষ্ট হন। প্রতিটি পাড়া-মহল্লার মানুষ নিজ নিজ দায়িত্বে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজে উদ্যোগী হলে সিটি করপোরেশন বা পৌরসভার কাজ অনেকটাই সহজ হতে পারে। ঈদের পবিত্রতা সব ক্ষেত্রেই বজায় রাখা প্রয়োজন। স্বাস্থ্যবিধি মেনে সবার ঈদযাত্রা স্বচ্ছন্দ ও নিরাপদ হোক।
আমাদের মনে রাখতে হবে ঈদের শিক্ষা হলো সাম্য, ভ্রাতৃত্ব ও একাত্মবোধের মাধ্যমে আনন্দ উপভোগ এবং পারস্পরিক সাহায্য-সহযোগিতার সম্প্রসারণ। আমরা আশা করব, দেশের এমন দুর্যোগে সমাজের বিত্তবানরা এগিয়ে আসবেন।
ঈদ আমাদের সামষ্টিক জীবনে যে মিলন ও শুভবোধচর্চার দৃষ্টান্ত স্থাপন করে, তা সঞ্চারিত হোক সবার প্রতিদিনের জীবনযাপনে। এ সংকট কেটে যাক। মঙ্গলময় হোক ভবিষ্যৎ।