আজকের সিলেট
নান্দনিক আসন গড়ার ইশতেহার দিলেন আ’লীগ প্রার্থী হাবিব
নান্দনিক সিলেট -৩ আসন গঠনের প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করে নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করলেন আওয়ামী লীগ প্রার্থী হাবিবুর রহমান হাবিব। রোববার (১৮ জুলাই) সিলেটের একটি হোটেলের কনফারেন্স রুমে সাংবাদিকদের সামনে তিনি এই ইশতেহার ঘোষণা করেন। জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট নাসির উদ্দিন খানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল।
ইশতেহার ঘোষণার শুরুতেই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে দলীয় প্রধান বাংলাদেশের সফল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। একই সাথে জাতীয় চারনেতা ও মহান মুক্তিযুদ্ধে প্রাণ উৎসর্গকারীসহ সকল শহীদানের প্রতিও জানান গভীর কৃতজ্ঞতা।
নিজ আসনের ভোটারদের উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, বলার অপেক্ষা রাখে না যে উন্নয়ন রাজনীতির এই সময়ে এই উপ-নির্বাচনটি এখন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাই উপ-নির্বাচনকে সামনে রেখে এই আসন নিয়ে আমার দীর্ঘদিনের লালিত স্বপ্নের একটি রূপরেখা তৈরি করেছি। মহান রাব্বুল আলামিনের অশেষ রহমত এবং আমার প্রতি আপনাদের আস্থা ও সহযোগীতা থাকলে আমি সর্বশক্তি ব্যয় করে নান্দনিক সিলেট-৩ আসন উপহার দিতে বদ্ধপরিকর।
তিনি বলেন, ক্ষনস্থায়ী জীবনকে ভোগে নয় বরং ত্যাগ এবং সেবায় নিয়োগ করে কেবলই অমরত্ব লাভ করা সম্ভব। তাই প্রবাস জীবনে থেকে বারবার ফিরে এসেছি আপনাদের কাছে, মাঠির টানে, নাড়ির টানে। সম্পুর্ণ মোহমুক্ত থেকে কাজ করেছি শেকড়ের টানে। সেই তাগিদ থেকেই মূলত নির্বাচনে আমার অংশ গ্রহণ। আর এ যাত্রায় আপনাদের অকৃত্রিম ভালোবাসাই আমার সম্পদ, আমার পূঁজি, আমার সফলতার অবলম্বন। এই অবলম্বন আমি ধরে রাখতে চাই আমৃত্যু।
হাবিবুর রহমান হাবিব বলেন, গণতান্ত্রিক সরকার ব্যবস্থায় জনগণই সকল ক্ষমতার উৎস। তিনি আগামী ২৮ জুলাই সিলেট-৩ আসনের উপ-নির্বাচনে দল-মতের উর্দ্বে উঠে উন্নয়নের স্বার্থে নৌকা প্রতীকের বিজয় নিশ্চিত করার আহবান জানান। তিনি বলেন, সকল ভোটার কিন্তু রাজনীতি করে না। আবার সবাই আওয়ামী লীগকেই সমর্থন করবে-এমনটিও নয়। তবে, এলাকার উন্নয়নের স্বার্থে সকলেই থাকবে অভিন্ন। উন্নয়ন অভিন্ন নীতিতে দলীয় সংকীর্ণতাকে পরিহার করেই সম্ভব প্রভুত উন্নয়ন। তিনি নির্বাচিত হলে নিজ আসনের উন্নয়নে এই নীতি অবলম্বন করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন।
সভায় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর সুক্তিযোদ্ধা মাসুক উদ্দিন, সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এড.নাসির উদ্দিন খান, মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক জাকির হোসেন, মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আসাদ উদ্দিন,জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কবির উদ্দিন, মহানগর আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কাউন্সিলার আজাদুর রহমান আজাদ, বিধান কুমার সাহা, মহানগর আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ডা.আরমান আহমদ শিপলু,জেলা আওয়ামী লীগের কৃষি ও সমবায় বিষয়ক সম্পাদক ফারুক আহমদ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক এড. ছালেহ আহমদ হীরা,উপ দপ্তর সম্পাদক মজির উদ্দিন,উপ প্রচার সম্পাদক মতিউর রহমান মতি, জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য বদরুল ইসলাম জাহাঙ্গীর,এর আর সেলিম, মহানগর আওয়ামী লীগের সদস্য তাহমিন আহমদ,রাহাত তরফদার, জুমাদিন আহমদ, মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক দেবাংশু দাস মিঠু, জেলা তাঁতীলীগের সভাপতি আলমগীর হোসেন, বালাগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোস্তাকুর রহমান মফুর, সাধারণ সম্পাদক আনহার মিয়া,দক্ষিণ সুরমা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মু্ক্তিযোদ্ধা সাইফুল আলম, সাধারণ সম্পাদক এড. শামীম আহমদ, ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শওকত আলী, সাধারণ সম্পাদক আব্দুল বাসিত টুটুল তিন উপজেলার ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকবৃন্দ।
ইশতেহারে হাবিবুর রহমান হাবিব সিলেট-৩ আসনের তিনটি উপজেলার প্রধান সমস্যা চিহ্নিত করে তা পর্যায়ক্রমে সমাধান করার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন। এর মধ্যে দক্ষিণ সুরমা উপজেলার উন্নয়ন কার্যক্রমগুলোর মধ্যে রয়েছে সুরমা নদীর উপর পৃথক স্থানে দুটি ব্রিজ নির্মাণ,লালাবাজারের ব্রিজ ও মসজিদ,কামালবাজার বাসিয়া নদীর উপর সেতু নির্মাণ,মোগলাবাজার ইউপির খালোমুখ বাজারে সেতু,দক্ষিণ সুরমার অংশে সুরমা নদীর তীরে দৃষ্টিনন্দন ওয়াকওয়ে ও দক্ষিণ সুরমার আবদুস সামাদ আজাদ চত্বর (চন্ডিপুল) হতে রেল গেইট পর্যন্ত (আমার নির্বাচনী এলাকার আওতাধীন) রাস্তার দু’পাশে বক্স ড্রেন ও পথচারী চলাচলের জন্য ফুটপাত নির্মাণ।
কর্মপরিকল্পনায় ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলার উন্নয়ন কার্যক্রমের মধ্যে রয়েছে ফেঞ্চুগঞ্জে জুড়ি নদীর উপর ব্রিজ নির্মাণ ও কুশিয়ারা নদীর তীরে (ফেঞ্চুগঞ্জ অংশে) দৃষ্টিনন্দন ওয়াকওয়ে নির্মাণ, কটালপুর ব্রিজ (আমিরগঞ্জ হতে উত্তরপাড়া) নির্মাণ, ফেঞ্চুগঞ্জকে পৌরসভায় উন্নীত করণ, মৎস্যজীবীদের জীবনমান উন্নয়নে বিশেষ প্রকল্প গ্রহণ।
বালাগঞ্জ উপজেলায় উন্নয়ন কার্যক্রমের মধ্যে রয়েছে বালাগঞ্জে একটি কৃষি শিল্প ও বালাগঞ্জে একটি কৃষি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র গড়ে তোলা,বালাগঞ্জে বড়ভাগা নদীর উপর ব্রিজ নির্মাণ, দেওয়ানবাজার-সুলতানপুর-খন্দকারবাজার রাস্তায় উজান বড়ভাঙ্গা সেতু নির্মাণ করার মাধ্যমে যোগাযোগ ব্যবস্থা আরো সহজতর করণ, কুশিয়ারা নদীর উপর দৃষ্টিনন্দন ব্রিজ নির্মান করে মৌলভীবাজার রাজনগরের সাথে যোগাযোগ স্থাপন,বালাগঞ্জ বাজার সংস্কার করে ড্রেনেজ ব্যবস্থা, পূর্ব-পৈলনপুর ইউনিয়নের সাথে বালাগঞ্জ উপজেলা সদরে যোগাযোগ নিশ্চিত করনে কুশিয়ারা ডাইকের বন্ধ হওয়া কাজ চালু করা ও বালাগঞ্জ সরকারি কলেজে অনার্স কোর্স চালু করার জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ।
তাছাড়া, ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের পাশে একটি ইপিজেড প্রতিষ্টা,ক্রীড়ামুখী এবং ভালো মানের খেলোয়ার তৈরির লক্ষে তিন উপজেলায় স্টেডিয়াম নির্মাণ, শিশুদের বিনোদন ব্যবস্থা নিশ্চিতের পাশাপাশি বয়স্কদের জন্য পার্ক স্থাপন, তিনটি উপজেলায় সাংস্কৃতিক কেন্দ্র গড়ে তোলা, প্রতি ইউনিয়নে সম্ভব না হলেও উপজেলায় একটি করে পাবলিক লাইব্রেরি,প্রতি উপজেলায় একটি করে কেন্দ্রীয় ঈদগাহ ,তিন উপজেলায় কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান,সিলেট-৩ আসনের আওতাধীন বিভিন্ন খাল ও নদী খনন করে সেচ প্রকল্প, কুশিয়ারা ও সুরমা নদীর ভাঙ্গণ রোধে বিশেষ করে বালাগঞ্জের পূর্ব পৈলনপুর ও পশ্চিম গৌরীপুর বালাগঞ্জ সদর, দক্ষিন সুরমার কুচাই ও মোল্লারগাঁও ইউনিয়ন, উত্তর ফেঞ্চুগঞ্জ মাইজগাঁও, উত্তর কুশিয়ারা ইউনিয়নের নদীর তীর সুরক্ষা কল্পে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ, তিন উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে মসজিদ ও মাদরাসাগুলোর উন্নয়ন কার্যক্রম, মন্দির নির্মাণ ও সংস্কার কার্যক্রমসহ হিন্দু সম্প্রদায়ের জন্য সার্বজনীন শ্মশান নির্মাণ,উপজেলার প্রয়োজনীয় স্কুল কলেজ গুলোতে একাডেমিক ভবন ও সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করার উদ্যোগ গ্রহণ।
পরিশেষে তিনি বলেন, নান্দনিক সিলেট-৩ আসন গড়ে তোলার লক্ষেই পরিচালিত হবে আমার সকল কার্যক্রম। আমার রাজনীতি হবে কল্যাণের। আমার রাজনীতি হবে সম্প্রীতির। আমার রাজনীতি হবে মানুষের জীবন মান উন্নয়নের।