সারা বাংলা
এবার সেই ইউএনও-ওসিকে আসামী করে ২টি মামলার আবেদন
বরিশাল সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মুনিবুর রহমানের সরকারি বাসভবনে হামলা চালানো এবং পরবর্তীতে পুলিশের সঙ্গে ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের সংঘর্ষের ঘটনায় এবার আদালতে দুইটি মামলার আবেদন করেছেন বরিশাল সিটি কর্পোরেশন কর্মকর্তারা।
রোববার (২২ আগস্ট) বেলা ১১টার দিকে অতিরিক্ত চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. মাসুম বিল্লালর আদালতে মামলার দুটির আবেদন করেন বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের প্যানেল মেয়র-২ রফিকুল ইসলাম খোকন ও রাজস্ব কর্মকর্তা বাবুল হালদার।
বিষয়টি নিশ্চিত করে বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট তালুকদার মোহাম্মদ ইউনুস জানান, আমরা শতভাগ নিশ্চিত নালিশি আবেদন দুটি মামলা হিসেবে গ্রহন করবেন আদালত।
বরিশাল আইনজীবী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক কাইয়ুম খান কায়সার জানান, মামলার আবেদনের শুনানি চলমান রয়েছে। শুনানি শেষে বিচারক মাসুম বিল্লাহ রায় দেবেন বলে জানিয়েছেন।
আদালতে দেয়া ওই মামলার আবেদন দু’টিতে বরিশাল সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মুনিবুর রহমান, গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত কোতয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. নুরুল ইসলাম, ইউএনওর বাসভবনে দায়িত্বরত আনসার সদস্যসহ মোট ১০৯ জনকে আসামি করা হয়েছে।
প্যানেল মেয়র রফিকুল ইসলামের করা মামলার আবেদনে সদর উপজেলার ইউএনও মুনিবুর রহমান, কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি নুরুল ইসলাম, সিটি মেয়রসহ তার অনুসারীদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলার বাদী কোতোয়ালি থানার এসআই শাহজালাল মল্লিক ও ইউএনওর বাসভবনে দায়িত্বরত আনসার সদস্যদের বিবাদী করা হয়েছে।
সিটি করপোরেশনের রাজস্ব কর্মকর্তা বাবুল হালদারের করা মামলার আবেদনে ইউএনও মুনিবুর রহমান ও তার বাসভবনে দায়িত্বরত আনসার সদস্যদের বিবাদী করা হয়েছে।
মামলার আবেদন দুটিতে ইউএনও মুনিবুর রহমানের বিরুদ্ধে সিটি করপোরেশনের কাজে বাধাদান, বিনা উসকানিতে বিসিসির কর্মচারীদের ওপর গুলিবর্ষণের নির্দেশ দেয়া, হামলা, গুলিবর্ষণের মাধ্যমে একাধিক ব্যক্তির অঙ্গহানির অভিযোগ করা হয়েছে।
মামলার আবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহকে শত্রুপক্ষের দ্বারা প্রভাবান্বিত হয়ে ইউএনও মুনিবুর রহমান ও কোতয়ালী মডেল থানার ওসি নুরুল ইসলামসহ তাদের সহযোগীরা হত্যার উদ্যেশ্যে গুলি বর্ষণ করা, মারধর, ভাংচুর এবং একশ’ কোটি টাকার সম্পদের ক্ষতি করা হয়েছে।
অপরদিকে একইদিন ইউএনও মুনিবুর রহমান ও কোতয়ালীর এসআই শাহজালাল মল্লিকের দায়ের করা মামলায় গ্রেফতারকৃত ২১ জনের মধ্যে ১৮ জনের জামিন আবেদন করা হয়েছিল। তাদের জামিন না মঞ্জুর করেছেন আদালত।
প্রসঙ্গত, গত ১৮ আগস্ট দিবাগত রাত সাড়ে ১০টার দিকে উপজেলা পরিষদ চত্বরে লাগানো ব্যানার-ফেস্টুন অপসারণকে কেন্দ্র করে ইউএনওর বাসভবনে কয়েক দফা হামলার ঘটনা ঘটে। হামলাকারীদের রুখতে গিয়ে আনসার সদস্যদের রাবার বুলেট ছুড়তে হয়।
পরে সেখানকার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে মধ্যরাত পর্যন্ত পুলিশের সাথে জেলা-মহানগর ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও আওয়ামী লীগের কয়েক শতাধিক নেতাকর্মীর দফায় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এতে গুলিবিদ্ধসহ আহত হয়েছেন কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি মো. নুরুল ইসলাম, ইউএনওর নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা আনসার সদস্য ফারুক হোসেন ও নাসির উদ্দিনসহ ছাত্রলীগ-যুবলীগের অর্ধশত নেতাকর্মী।
এসব ঘটনায় উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশের পক্ষ থেকে পৃথক দুটি মামলা করা হয়। দুটিতেই বরিশাল সিটি মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহকে প্রধান আসামি করা হয়। এছাড়া বিসিসির কয়েকজন কাউন্সিলর, আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের বিভিন্ন পর্যায়ের শতাধিক নেতাকর্মীর নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা মোট ৬০২ জনকে আসামি করা হয়েছে। যার মধ্যে ইতোমধ্যে ২২ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।