শীর্ষ খবর
কোন দিকে বাংলাদেশের করোনা পরিস্থিতি
করোনাভাইরাসের তান্ডবে বিপর্যস্থ পুরো বিশ্ব। ক্রমেই পরিস্থিতিতির অবনতি হচ্ছে। বাংলাদেশে সম্প্রতি করোনা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলেও দ্বিতীয় ঢেউয়ের ভয় পেয়ে বসেছে। কেননা আর কিছুদিন পরেই শীত পড়বে, আর শীত প্রধানদেশগুলো করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের কবলে পড়েছে ইতোমধ্যে। তাই বাংলাদেশের করোনা পরিস্থিতি কোন দিকে? আমাদের দেশও কি করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের কবলে পড়বে? এ নিয়ে এখনই সঠিক পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন।
সরকারি ওয়েবসাইট ‘কোভিড নাইন্টিন ট্রেকার’ এর তথ্য মতে সম্প্রতি বাংলাদেশে করোনায় দৈনিক শনাক্তের হার ক্রমহ্রাসমান। মৃত্যুর সংখ্যাও কমছে। যদিও ইতোমধ্যে মৃত্যুর সংখ্যা ৫ হাজার ছাড়িয়েছে। পাশাপাশি সুস্থতার হার ক্রমেই বাড়ছে। বিষয়টি আশার আলো জাগালেও ভয় তৈরী হয়েছে দ্বিতীয় ঢেউ নিয়ে। যেহেতু শীতের সময় অ্যাজমা, নিউমোনিয়া, ইনফ্লুয়েঞ্জার প্রাদুর্ভাব বেড়ে যায় তাই সবাইকে এ বিষয়ে সচেতন হতে হবে। এছাড়া দেশে হঠাৎ করে জ্বরের প্রকোপ দেখা দিয়েছে। ঘরে ঘরে জ্বরে আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া যাচ্ছে। সাধারণত আবহাওয়ার পরিবর্তনের কারনে বাংলাদেশে এ সময়টাতে জ্বরের প্রকোপ এমনিতেই বৃদ্ধি পায়। বিষয়টি তেমন ভয়ের কিছু না হলেও এবারের জ্বরের মাত্রাটা অন্যবারের চাইতে বেশি। বিগত বছরগুলোতে দেখা গেছে- ভাইরাস জ্বর ৪-৫ দিনে সেরে গেলেও এবারে রোগীকে বিছানায় ফেলে রাখছে ১০-১২ দিন। জ্বরে আক্রান্ত কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে এমনটাই জানা গেছে।
গত দু-তিন সপ্তাহ থেকে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে শিশু থেকে বৃদ্ধ- সকল বয়সের মানুষই পড়ছেন এ জ্বরের কবলে।
এদিকে, ভাইরাসজনিত এ জ্বর অনেকের ভেতরে দেখা দিয়েছে করোনা আতঙ্ক। তবে এতে আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন স্বাস্থ্যবিশেষজ্ঞরা।
চিকিৎসকরা বলছেন, তাপমাত্রার উঠা-নামা, হঠাৎ গরম ও হঠাৎ ঠান্ডা লাগা এবং সর্বোপরি সিজনাল (ঋতু পরিবর্তনজনিত) কারণে এ রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। এই জ্বর হলে শীত শীত ভাব, মাথা ব্যথা, শরীরে ও গিরায় ব্যথা, খাওয়ায় অরুচি, ক্লান্তি, দুর্বলতা, নাক দিয়ে পানি পড়া, চোখ দিয়ে পানি পড়া, চোখ লাল হওয়া, চুলকানি, কাশি, অস্থিরতা ও ঘুম কম হতে পারে।
অপরদিকে, বিশেষজ্ঞদের মতে আসন্ন শীতে বাংলাদেশে করোনার দ্বিতীয় তরঙ্গ দেখা দিতে পারে। তাই এখন থেকেই সাবধানতা অবলম্বন করে চলতে হবে। বাধ্যতামূলকভাবে মাস্ক পরিধান করতে হবে। সামাজিক দূরত্ব মেনে চলতে হবে।
সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী ভাইরাসটিতে মৃতের সংখ্যা ৫০০৭ জন। দেশে মোট শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ৩ লাখ ৫২ হাজার ১৭৮ জন। এ পর্যন্ত মোট নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে ১৮ লাখ ৪৮ হাজার ৪৮৭টি। আর মোট সুস্থ রোগীর সংখ্যা দাঁড়াল দুই লাখ ৬০ হাজার ৭৯০ জন। দেশে করোনা আক্রান্তদের মধ্যে ৭৪ দশমিক ১ ভাগ মানুষ সুস্থ হয়েছেন। মৃত্যু হয়েছে ১ দশমিক ৪ ভাগ মানুষের। আর চিকিৎসাধীন অবস্থায় আছেন ২৪ দশমিক ৫ ভাগ মানুষ।
পরিসংখ্যান বলছে গত জুলাই মাসের ২ তারিখ সর্বোচ্চ রোগী শনাক্ত হয়েছিল। ওই দিন ৪০১৯ জনের দেহে করোনার সংক্রমন শনাক্ত হয়। এর পর থেকেই ক্রমেই কমে আসছে শনাক্তের সংখ্যা। মাঝখানে পরীক্ষার সংখ্যা কমে যাওয়ায় করোনা শনাক্তের হার কমেছে বলে ধারণা করা হলেও কয়েকদিনের মধ্যে পরীক্ষার সংখ্যা বেড়ে যায়। তাতেও শনাক্তের হার কমতে থাকে। গত ২ মাস ধরে ক্রমহ্রাসমান এ হার অব্যাহত রয়েছে। যা দেশের মানুষের জন্য স্বস্থির বিষয় হয়ে দাড়ায়। ফলে সাধারণ মানুষ আগের মতো সামাজিক দূরত্ব বা মাস্ক পরিধান করার মতো বিষয়গুলো এড়িয়ে চলতে শুরু করে। বর্তমানে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার কোন লক্ষণই যেনো নেই। আর এ উদাসীনতাই ডেকে আনতে পারে দ্বিতীয় ঢেউ।
বিষয়টি আমলে নিয়ে সরকার ইতোমধ্যে প্রস্তুতি শুরু করেছে। করোনাভাইরাসের সেকেন্ড ওয়েভ মোকাবিলায় নিজ নিজ মন্ত্রণালয়কে কর্মপরিকল্পনা নির্ধারণের নির্দেশনা দিয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। এসব কর্মপরিকল্পনা নির্ধারণ করে তা আগামী ১৫ দিনের মধ্যে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠানোরও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম।
মঙ্গলবার (২২ সেপ্টেম্বর) সচিবালয়ে এ সংক্রান্ত আন্ত:মন্ত্রণালয় সভায় এসব নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সভা শেষে সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব।
সভায় বলা হয়েছে, অক্টোবর-নভেম্বরে শীতের প্রকোপ বাড়লে কোভিডের সংক্রমণ আবার বাড়তে পারে। সেটি হবে কোভিডের সেকেন্ড ওয়েভ। কোভিডের সেকেন্ড ওয়েভ মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রীরও নির্দেশনা রয়েছে। অতীতের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে এবং তা থেকে শিক্ষা নিয়ে কোভিডের সেকেন্ড ওয়েব মোকাবিলার জন্য প্রস্তুত থাকতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। সেই নির্দেশনা বাস্তবায়নেই আগে থেকেই প্রস্তুতি গ্রহণের কথা বলা হয়েছে। তাই মন্ত্রণালয়গুলো নিজ নিজ কর্মপরিকল্পনা তৈরি করবে এবং তা মন্ত্রিপরিষদ বিভাগকে জানাবে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ পরবর্তীতে সেগুলোকে সমন্বয় করে চূড়ান্ত পরিকল্পনা করবে।