মৌলভীবাজারসারা বাংলাসুনামগঞ্জহবিগঞ্জ
শিক্ষার্থীদের জন্য ৫ টাকায় ভোজ
গায়ে স্কুল ড্রেস আর পকেটে পাঁচটি টাকা থাকলেই দুপুরে ডালভাত খাওয়া যায়। শুধু স্কুলশিক্ষার্থীদের জন্য দুপুরে ভাত খাওয়ার এই ‘প্যাকেজ’ চালু করেছেন রাজশাহীর আড়ানীর একজন হোটেল ব্যবসায়ী। তিন বছর ধরে তিনি পাঁচ টাকায় শিক্ষার্থীদের দুপুরের খাবার খাওয়াচ্ছেন।
এই হোটেল ব্যবসায়ীর নাম বিপ্লব সরকার (৩৫)। বাড়ি রাজশাহীর বাঘা উপজেলার আড়ানী পূর্বপাড়া মহল্লায়। আড়ানী বাজারের তালতলায় বড়াল নদের ধারে বিপ্লব সরকারের হোটেল। নাম ‘অন্নপূর্ণা হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্ট’। আড়ানী মনোমোহিনী সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এই হোটেলে পাঁচ টাকায় দুপুরের খাবার সেরে নেয়।
গায়ে স্কুল ড্রেস আর পকেটে পাঁচটি টাকা থাকলেই দুপুরে ডালভাত খাওয়া যায়। শুধু স্কুলশিক্ষার্থীদের জন্য দুপুরে ভাত খাওয়ার এই ‘প্যাকেজ’ চালু করেছেন রাজশাহীর আড়ানীর একজন হোটেল ব্যবসায়ী। তিন বছর ধরে তিনি পাঁচ টাকায় শিক্ষার্থীদের দুপুরের খাবার খাওয়াচ্ছেন।
এই হোটেল ব্যবসায়ীর নাম বিপ্লব সরকার (৩৫)। বাড়ি রাজশাহীর বাঘা উপজেলার আড়ানী পূর্বপাড়া মহল্লায়। আড়ানী বাজারের তালতলায় বড়াল নদের ধারে বিপ্লব সরকারের হোটেল। নাম ‘অন্নপূর্ণা হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্ট’। আড়ানী মনোমোহিনী সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এই হোটেলে পাঁচ টাকায় দুপুরের খাবার সেরে নেয়।
বিপ্লব সরকারের বাবা শ্যামল সরকারই মূলত এই হোটেলের মালিক। তাঁর বাবা বিকেলে বসেন। এর আগ পর্যন্ত বিপ্লব সরকারকে দায়িত্ব পালন করতে হয়। গত বৃহস্পতিবার ওই হোটেলে গিয়ে বিপ্লব সরকারকে চিনতে একটি দেরি হলো। ধারণা ছিল, মালিক হওয়ায় তাঁর কাজ টেবিলে বসে কেবল খাওয়ার বিল আদায় করা। কিন্তু মালিকের টেবিল ফাঁকা। হোটেলের সবাই কাজ করছেন। কে বিপ্লব সরকার জানতে চাইলে একজনের প্লেটে ভাত ঢেলে দিতে দিতে নিজের পরিচয় দিলেন তিনি। কথা বলতে চাইলে নিজের খাবারের প্লেটটা হাতে নিয়ে এসে বললেন, ‘দাদা, খেতে খেতে কথা বলি।’
পাঁচ টাকার প্যাকেজের কথা তুলতেই এক গাল হেসে বললেন, গ্রামের অধিকাংশ বাচ্চাই বাড়ি থেকে টিফিন নিয়ে আসে না। অনেকের বেশি টাকা দিয়ে হোটেলে দুপুরের খাবার কিনে খাওয়ার মতো সামর্থ্যও নেই। তারা স্কুলে এসে টিফিনের সময় আশপাশের দোকান থেকে মুখরোচক কিছু একটা কিনে খায়। এগুলো স্বাস্থ্যের জন্যও ক্ষতিকর। অথচ দুপুরে এক প্লেট ভাত খেতে পারলে তাদের শরীরটা ভালো থাকে। এই চিন্তা থেকেই বাবার অগোচরে পাঁচ বছর আগেই তিনি এই প্যাকেজ চালু করেন। তখন থেকেই বাচ্চারা খেতে আসতে শুরু করে। তবে তাঁর বাবা দুই বছর পর বিষয়টি জানতে পারেন। তবে তিনি এতে বাধা দেননি।
বিপ্লব সরকার বলেন, বাচ্চাদের তিনি কয়েকটি শর্তে খেতে দেন। তার প্যাকেজ খেতে হলে অবশ্যই স্কুল ড্রেস পরে আসতে হবে। আর খাবার আগে বা পরে বাইরের দোকানে অন্য কোনো মুখরোচক খাবার খাওয়া যাবে না। তিনি বলেন, তিনি দেখেছেন বেশির ভাগ বাচ্চাই এক প্লেটের বেশি ভাত খেতে পারে না। তিনি ভাতের সঙ্গে সবজি আর ডাল দিয়ে একটি প্যাকেজ তৈরি করেছেন। খাবার সময় তিনি খেয়াল করেন, কোনো বাচ্চা যেন সবজি নষ্ট না করে। শরীরের জন্য সবজির বড় প্রয়োজন। তিনি তাদের সবজি খেতে বাধ্য করেন। টমেটোর মৌসুমে টমেটোর সালাদ খেতে বাধ্য করেন। এই প্যাকেজ তিনি পাঁচ টাকায় দেন। তবে পাশাপাশি খেতে বসে কোনো বাচ্চা যদি বেশি টাকা দিয়ে মুরগির মাংস খেতে চায়। তাহলে তিনি পাশের বাচ্চাটাকেও ছোট এক টুকরা মুরগির মাংস ও একটু ঝোল দেন। যাতে তার মন খারাপ না হয়।
বিপ্লব সরকার বলেন, তিনি মনের আনন্দে এটা করছেন। সেবার মানসিকতা থেকে করছেন। কারণ, তাঁর এসএসসি পরীক্ষাটা দেওয়া হয়নি। লেখাপড়া না করে কী ভুল করেছেন এখন তিনি বুঝতে পারেন। এ জন্য যে বাচ্চারা লেখাপড়া শিখছে, তারা যেন শারীরিকভাবে সুস্থ থাকতে পারে, তার জন্য তিনি তাঁর সাধ্যের মধ্যে যতটুকু পারছেন, সহযোগিতা করছেন।
আড়ানী মনোমোহিনী সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সঞ্জয় কুমার এই পাঁচ টাকার প্যাকেজ সম্পর্কে বলেন, তিনি তাঁর স্কুলের শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে শোনার পরে একদিন দেখতে গিয়েছিলেন। তিনি দেখে অবাক হয়েছেন।