আজকের সিলেট
নগরীতে বসছে আইপি ক্যামেরা : ফ্রি ওয়াইফাই ৬২ পয়েন্টে
সিলেট নগরীতে বসছে আইপি ক্যামেরা। নগর পুলিশের কোতোয়ালি মডেল থানার দ্বিতীয় তলার এ নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকেই এসব ক্যামেরা নিয়ন্ত্রণ করা হবে। ইতোমধ্যে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত নিয়ন্ত্রণ কক্ষও চালু হয়েছে। ডিজিটাল সিটি প্রকল্পের আওতায় এসব ক্যামেরা বসানো হয়েছে।
বৃহস্পতিবার বিকেলে সিলেট জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের সাথে ‘আইপি ক্যামেরা বেজড সার্ভিলেন্স সিস্টেম’ নিয়ে চুক্তি স্বাক্ষর হয়। মেট্রোপলিটন পুলিশের পক্ষে উপ-কমিশনার (ডিসি) কামরুল আমিন ও ডিজিটাল সিলেট সিটি প্রকল্পের পক্ষে প্রকল্প পরিচালক মোহাম্মদ মহিদুর রহমান খান চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন।
অনুষ্ঠানে সিলেট নগরীর ৬২টি পয়েন্টে ফ্রি-ওয়াইফাই সেবা প্রদানে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের সাথে আরেকটি চুক্তি স্বাক্ষর হয়। এতে সিসিকের পক্ষে সচিব বদরুল হক স্বাক্ষর করেন। অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রনালয়ের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘জাতীয় অর্থনীতিতে সিলেটিদের অবদান অনেক বেশি। সিলেট পর্যটন সম্ভাবনার একটি স্থান। প্রকৃতির সৌন্দর্য্যের নগরী সিলেটকে বিশ্বের সামনে তুলে ধরার জন্য ‘ডিজিটাল সিলেট সিটি’ প্রকল্পটি নেওয়া হয়েছে।’ এর মাধ্যমেই সিলেটই দেশের প্রথম ডিজিটাল সিটি হিসেবে গড়ে তোলার কাজ শুরু হয়েছে বলেও জানান তিনি।
পরে তিনি কোতোয়ালী মডেল থানার দ্বিতীয় তলায় স্থাপিত আইপি ক্যামেরার নিয়ন্ত্রণ কক্ষ পরিদর্শন করেন। মেট্রোপলিটন পুলিশের সদর দপ্তরের ভবন নির্মাণ হলে পরবর্তীতে এ নিয়ন্ত্রণ কক্ষটি সেখানে স্থানান্তর করা হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
নতুন বসানো ক্যামেরাগুলোতে রয়েছে নাইটভিশন ডিভাইস এবং ফেস ডিটেকশন সিস্টেম। ফলে সহজেই অপরাধী চিহ্নিতও করা যাবে। এছাড়া ঠেকানো যাবে অপ্রীতিকর পরিস্থিতিও। নগরীতে অপরাধ ঠেকাতে অত্যাধুনিক এসব আইপি ক্যামেরা বেশ ভূমিকা রাখবে বলে মনে করছেন পুলিশ কর্মকর্তারা।
২৭টি ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত সিলেট সিটির আয়তন ২৬ দশমিক ৫০ বর্গকিলোমিটার। এর মোট জনসংখ্যা প্রায় ৫ লাখ। এর বাহিরে সদর উপজেলাসহ বিভিন্ন উপজেলা থেকে জনসাধারণ প্রতিদিন নানা কাজে নগরীতে আসেন। জনসাধারণের নিরাপত্তাসহ চুরি, ছিনতাই এবং অপরাধ কর্মকা- প্রতিরোধে ২০১৪ সালের শেষের দিকে নগরীতে বসানো হয় অর্ধশতাধিক ক্লোজ সার্কিট (সিসি) ক্যামেরা। শুরুর দিকে কিছুদিন সবকটিই সচল ছিল; তবে বর্তমানে সচল রয়েছে ৩৯টি।
কিন্তু সিসি ক্যামেরাগুলো নিম্মমানের হওয়াতে ভিডিও ধারণ হলেও চেহারা চিহ্নিত করা সম্ভব হতো না। ফলে সেগুলো কার্যত অচল অবস্থায়ই পড়ে ছিল। এ কারণে অপরাধীদের চিহ্নিত করতে বেশ বেগ পেতে হতো পুলিশকে।
ডিজিটাল সিলেট সিটি প্রকল্পের আওতায় নগরীতে ১১০টি আইপি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে। এর মধ্যে ৯০টি ক্যামেরা ব্যবহার করা হচ্ছে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে । আর নগরীর প্রবেশদ্বারগুলোতে বসানো হচ্ছে দুই ধরণের ফিচার সম্বলিত ২০টি আইপি ক্যামেরা। এসব ক্যামেরার নিয়ন্ত্রণ করা হবে কোতোয়ালী মডেল থানার দ্বিতীয় তলায় স্থাপিত নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে। এতে ব্যয় হচ্ছে প্রায় ২ কোটি টাকা। এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল।
প্রকল্প সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ‘প্রথমবারের মতো বাংলাদেশে অত্যাধুনিক এ আইপি ক্যামেরা নিয়ে আসা হয়েছে; যা পরীক্ষামূলকভাবে সিলেটে ব্যবহার করা হচ্ছে। দুই ধরণের ফিচার থাকা এসব আইপি ক্যামেরার মাধ্যমে নজরদারি করা হবে সিলেট নগরীর প্রবেশ ও বাহিরে যাওয়া মানুষজন এবং যানবাহনের ওপর। ফেসিয়াল রিকগনেশন (এফআর) বা ফেস ডিটেকশন ক্যামেরা হওয়ায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে এসব ক্যামেরা থেকে পাওয়া চেহারার ছবির মধ্য দিয়ে সনাক্ত করা যাবে। এসময় চিহ্নিত অপরাধী ক্যামেরায় ধরা পড়লে অ্যালার্ম বাজবে এবং নিয়ন্ত্রণ কক্ষে বার্তাও যাবে; ফলে ধরা পড়বে অপরাধী। একই সাথে নগরীতে প্রবেশ করা যানবাহনকে অটো নাম্বর প্লেট রিকগনেশন (এএনপিআর) ক্যামেরার মাধ্যমে নজরদারি করা যাবে।’
সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (মিডিয়া) মো. জেদান আল মুসা বলেন,‘নগরীর নিরাপত্তা জোরদারে পুলিশ সব সময় তৎপর রয়েছে। সিটি করপোরেশনের লাগানো কিছু ক্যামেরা বর্তমানে চালু আছে। নতুন করে আরও ১১০টি অত্যাধুনিক ক্যামেরা বসানো হয়েছে; নাইটভিশন ডিভাইস এবং ফেস ডিটেকশন সিস্টেম থাকায় এগুলো অপরাধী শনাক্ত করতে বেশ ভূমিকা রাখবে। এতে সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত হবে।