আজকের সিলেট

টাকা না পেয়ে ফাঁড়িতে হত্যার অভিযোগ : ‘গণপিটুনি’র আলামত মিলেনি

রায়হান আহমদের মৃত্যু ‘গণপিটুনিতে’ হয়েছে পুলিশ দাবি করলেও সিসিটিভি ফুটেজে গণপিটুনির ফুটেজ নেই। আর কাস্টঘর এলাকার ব্যবসায়ী ও স্থানীয়রাও গণপিটুনির কোন ঘটনা দেখেননি বলে জানিয়েছেন।

সোমবার (১২ অক্টোবর) দুপুরে সরেজমিনে কাস্টঘর এলাকায় গিয়ে বিভিন্ন মানুষের সাথে কথা বলে এসব তথ্য পাওয়া।

এসময় নগরীর ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম মুনিম বলেন, পুলিশের ভাষ্য অনুযায়ী ‘গণপিটুনির’ যে স্থান ও সময়ের কথা বলা হয়েছে ওই স্থানে থাকা দুটি সিসিটিভি ক্যামেরার ফুজেটের চিত্র আমরা দেখেছি। সেদিন রাত ১০ টা থেকে সকাল ৭ টা পর্যন্ত এই ফুজেটে গণপিটুনির কোনো ঘটনা দেখা যায়নি।

তিনি আরও বলেন, এই সময়ে ক্যামেরায় ধারণ করা ফুজেটে গণপিটুনির কোন আলামতও পাওয়া যায়নি। এছাড়া আমি স্থানীয় অনেকের সাথে কথা বলেছি, কেউই গণপিটুনির বিষয়টি জানেন না।

এর আগে রোববার (১১ অক্টোবর) ভোরে পুলিশের নির্যাতনে রায়হান উদ্দিন (৩৩) নামে এক যুবক নিহত হওয়ার অভিযোগ তুলেছেন তার স্বজনরা। নিহত ওই যুবক সিলেটের আখালিয়ার নেহারিপাড়ার মৃত রফিকুল ইসলামের ছেলে।

পুলিশের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, ছিনতাইকালে গণপিটুনিতে মারা গেছেন রায়হান। তবে নিহতের পরিবারের সদস্যদের অভিযোগ, পুলিশ ধরে নিয়ে নির্যাতন করে রায়হানকে হত্যা করেছে। পরিবারের অভিযোগে ভিত্তিতে তদন্ত কমিটি গঠিন করেছে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ।

রায়হানের মা সালমা বেগম ও চাচা হাবিবুলল্লাহ জানান, রায়হান নগরীর রিকাবীবাজারে স্টেডিয়াম মার্কেটে ডা. আবদুল গফ্‌ফারের চেম্বারে চাকরি করতেন। রায়হান বিবাহিত ও এক সন্তানের জনক।

গত শনিবার রাতে কর্মস্থল থেকে রায়হানের বাসায় ফিরতে দেরি হওয়ায় রাত ১০টার দিকে তার স্ত্রী মোবাইল ফোনে কল দিয়ে বন্ধ পান। পরে ভোর রাত ৪টার দিকে অপরিচিত নম্বর থেকে রায়হান তার মায়ের মোবাইল ফোনে কল দিয়ে জানায়, তাকে বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে ধরে নেওয়া হয়েছে এবং ১০ হাজার টাকা দিলে ছেড়ে দেবে বলে পুলিশ জানিয়েছে।

এরপর রায়হানের মা তার চাচা হাবিবুল্লাহকে ৫ হাজার টাকা দিয়ে ফজরের নামাজের পরপরই বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে পাঠান। এ সময় সাদা পোশাকে ফাঁড়িতে অবস্থানরত এক পুলিশ সদস্য হাবিবুল্লাহকে বলেন, ‘১০ হাজার টাকা নিয়ে আসার কথা, আপনি ৫ হাজার এনেছেন কেন, এখন চলে যান, রায়হান ঘুমাচ্ছে।

এছাড়া রায়হানকে যে কর্মকর্তা ধরে এনেছেন তিনিও এখন ফাঁড়িতে নেই। সকাল ৯টার দিকে আসবেন।’ তার কথামতো হাবিবুল্লাহ সকাল ৯টার সময় আবার ফাঁড়িতে যান। এ সময় ফাঁড়িতে অবস্থানরত পুলিশ সদস্যরা জানান, রায়হান অসুস্থ হওয়ায় তাকে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে। তখন হাবিবুল্লাহ দ্রুত ওসমানী হাসপাতালে গিয়ে খোঁজ নিয়ে মর্গে রায়হানের লাশ পান। ময়নাতদন্ত শেষে রোববার বিকেল ৪টার দিকে পরিবারের কাছে মৃতদেহ হস্তান্তর করা হয়।

আরও সংবাদ

Close