শীর্ষ খবর
সিলেটজুড়ে তোলপাড়, কি ঘটেছিল তখন?
সিলেট নগরে সড়কে ভ্যান রাখার অপরাধে ভ্যান চালক এক যুবককে বেত্রাঘাতের অভিযোগ নিয়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভ্যান চালককে সিলেট সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর বেত্রাঘাতের বিষয়টি নিয়ে তুমুল আলোচনা-সমালোচনা চলছে।
আজ শনিবার দুপুরে জিন্দাবাজার-চৌহাট্টা সড়কের রেডক্রিসেন্ট সংলগ্ন এলাকায় এ ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা।
মেয়রের লাঠি হাতে একটি স্থিরচিত্র সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। এ নিয়ে সমালোচনা শুরু হয়েছে। তবে, অভিযোগ অস্বীকার করে মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বলেছেন, ‘এ সড়কে রিকশা ও ভ্যান চলাচলের অনুমতি নেই। তিনি ভ্যান চালককে ধমক দিতে গিয়ে লাঠি হাতে নিয়েছেন। তবে, আঘাত করেননি।’
নগরের চৌহাট্টা-জিন্দাবাজার সড়ক গত বছর সম্প্রসারণ ও আধুনিকায়ন করে সিলেট সিটি করপোরেশন। এরপর এই সড়ক দিয়ে রিকশা-ভ্যান চলাচল নিষিদ্ধ হয়। অবৈধ পার্কিং ও ফুটপাতে হকার বসা নিষেধ লিখে বিভিন্ন স্থানে সাইনবোর্ডও লাগানো হয়। বন্দরবাজার, চৌহাট্টা, জল্লারপাড় ও পূর্ব জিন্দাবাজারে এ ধরনের যান প্রবেশ ঠেকাতে নিরাপত্তাপ্রহরী নিয়োগ দেয় সিসিক। কিন্তু এসব নিষেধ অমান্য কওে, সড়কের ফুটপাত দখল করে আছেন হকাররা। সড়কের পাশে পার্কিং করে রাখা হয় গাড়িও। ফলে সড়কজুড়ে যানজট লেগে থাকে।
প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থিরচিত্র গ্রহণকারী ব্যক্তি, ছাত্র ইউনিয়ন সিলেট জেলা সংসদের সাবেক সভাপতি সপ্ত দাশ বলেন, ‘শনিবার বেলা ২টার দিকে চৌহাট্টার দিকে গাড়িতে করে যাচ্ছিলেন মেয়র আরিফ। এ সময় সড়কের পাশে একটি ভ্যান দাঁড় করিয়ে রাখা দেখতে পান তিনি। তখন মেয়র গাড়ি থামিয়ে ওই ভানচালককে ডেকে নিয়ে তার হাতে বেত্রাঘাত করেন।’ রুবেল আহমদ নামের ভ্যানচালকটি জানান, তিনি সিগারেট বিক্রয়কারী প্রতিষ্ঠান ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকোর ভ্যান চালান। শনিবার দুপুরে ভ্যান নিয়ে ওই এলাকায় গিয়েছিলেন। সড়কে ভ্যান রেখে দোকানে সিগারেট দিতে গিয়েছিলেন। তখন মেয়র এসে লাঠি দিয়ে আমার হাতে বাড়ি দেন এবং ভ্যান সরাতে বলেন।
এ বিষয়ে সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘সড়কটি যানজটমুক্ত রাখতে আমরা ব্যবসায়ীদের সঙ্গে একাধিকবার বৈঠক করেছি। যেহেতু ঈদের সময় মালামাল নিয়ে ঢুকতে হয়, তাই রাত ১২টা থেকে সকাল ১০টার মধ্যে প্রবেশের অনুমতি আছে। অনেকে আমাদের অনুরোধ রাখছেন না। যেখানে সেখানে গাড়ি পার্কিং করে মালামাল উঠানামা করছেন। বিষয়টি আমার নজরে এসেছে। ভ্যান চালককে ধমক দিয়েছি। আঘাত করিনি।’ যানজট নিরসনে সবার সহযোগিতা কামনা করেন আরিফ।
মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, উনি রাস্তায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছিলেন। আপনারা আগের ফুটেজ দেখলে বুঝতে পারবেন এখানে অনেক গাড়ি আটকা পড়েছিল। আপনারা জানেন সিটি কর্পোরেশন থেকে রাস্তাঘাটে যেখানে সেখানে গাড়ি পার্ক করতে বারবার নিষেধ করা হয়েছে।
মেয়র বলেন, ‘জিন্দাবাজারের সকল ব্যবসায়ীদের অনুরোধ করেছিলাম সকাল ১০টা থেকে রাত ১২ টা পর্যন্ত কোন মালামাল না আনতে। কারণ এ সময় মানুষ বেশি যাতায়াত করে। মালবাহী গাড়ি কিংবা ভ্যান গাড়ি যদি রাস্তার দু’পাশে থাকে তাহলে মানুষের হাটার জায়গা থাকবে না। এতে করে ঈদ শপিংয়ে আসা মানুষজন বিড়ম্বনায় পড়তে পারেন।’
তিনি বলেন, ‘ঘটনার সময় আমি সবাইকে সরিয়ে দিচ্ছিলাম। এ সময় ভ্যান গাড়ি পার্ক করে থাকা ছেলেটাকে আমি একটু ধমকের সুরে বললাম এই এখানে দাড়িয়েছ কেন?। এসময় ছেলেটি হাত কিছুটা উপরে তুলেছে। কিন্তু আমি তাকে বেত্রঘাত করিনি। আমি এতোটা বিবেকহীন হইনি।’
তিনি বলেন, আমি এসব তো সিলেটের মানুষের জন্য করছি। মানুষ ঈদ শপিং করতে গিয়ে যাতে বিড়ম্বনায় না পরেন সে জন্য আমি কাজ করে যাচ্ছি।
তিনি প্রশ্ন করেন, ‘শুধুমাত্র আংশিক ফুটেজ কেন দেখানো হলো? আমি যে বেত্রাঘাত করেছি বা হাতে বাড়ি দিয়েছি এ ধরনের কিছু তো দেখা যায়নি। তাহলে কেন এটা নিয়ে বিতর্ক হচ্ছে?’
তিনি বলেন, ‘এটা এক ধরনের সস্তা অপপ্রচার। আমি তো যানজট নিরসনের জন্য সিলেটবাসীর কষ্ট লাঘবের জন্যই কাজ করে যাচ্ছি।’