শীর্ষ খবর
সিলেটে স্ট্যান্ড উচ্ছেদ নিয়ে সংঘর্ষ : অর্ধশতাধিক গাড়ি ভাঙচুর
সিলেটে অবৈধভাবে গড়ে ওঠা মাইক্রোবাস ও প্রাইভেটকারের স্ট্যান্ড উচ্ছেদকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। ভাঙচুর করা হয়েছে অর্ধশতাধিক গাড়ি। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনতে ৬ রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছুড়ে।
আজ বুধবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে নগরীর চৌহাট্টা এলাকায় দফায় দফায় সংঘর্ষের এ ঘটনা ঘটে। এ সময় অর্ধশতাধিক গাড়ি ভাঙচুরসহ অন্তত ২০ জন আহত হয়েছেন।
দুপুরে অবৈধ স্ট্যান্ড উচ্ছেদে অভিযান চালায় সিলেন সিটি কর্পোরেশন। এসময় শ্রমিকরা তাদের উপর হামলা চালায়। একপর্যায়ে পরিবহন শ্রমিক, সিসিকের কর্মচারী ও পুলিশের মধ্যে সংঘর্ষ বেঁধে যায়। সংঘর্ষ থামাতে পুলিশ ১৬ রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছুড়ে। ঘটনাস্থলে মেয়রের দিকে বন্দুক নিয়ে তেড়ে যাওয়া ফয়সল আহমদ ফাহাদ (৩৮) নামে এক পরিবহন শ্রমিককে আগ্নেয়াস্ত্রসহ আটক করে পুলিশ।
এ ঘটনার জের ধরে সিলেট-ঢাকা মহাসড়ক ২ ঘণ্টা অবরোধ করে রাখে মাইক্রোবাস শ্রমিকরা। পরে ২টার দিকে দক্ষিণ সুরমার হুমায়ুন চত্বর ও চন্ডিপুলে সড়ক অবরোধ করে যানবাহন চলাচলে বাধা সৃষ্টি করে শ্রমিকরা। তবে বিকাল ৪টার দিকে প্রশাসন ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের হস্তক্ষেপে অবরোধ তুলে নেন শ্রমিকরা।
সংঘর্ষ চলাকালে চৌহাট্টা মোড় এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। এসময় সড়কের দুই পাশে শতশত যানবাহন আটকাপড়ে নগরজুড়ে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। ঘণ্টাখানেক পর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে সিলেট মহানগর পুলিশ।
এক সপ্তাহ আগে এই অবৈধ স্ট্যান্ড উচ্ছেদে যায় সিলেট সিটি করপোরেশন। মেয়রের নেতৃত্বে এই অভিযানে বাধা দেয় পরিবহন শ্রমিকরা। পরে তাদের তিনদিনের সময় বেঁধে দিয়ে এই সময়ের মধ্যে ফুটপাত ও সড়ক ছেড়ে দেওয়ার নির্দেশ দেন মেয়র।
সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, ‘বুধবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) সকালে চৌহাট্টা এলাকায় সড়কের উন্নয়ন কাজ করতে গেলে সিসিকের শ্রমিকদের বাধা দেয় পরিবহন শ্রমিকরা। এসময় সড়ক অবরোধ করে দিয়ে বিক্ষোভ শুরু করে পরিবহন শ্রমিকরা।’
খবর পেয়ে দুপুরে সিটি কাউন্সিলর, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নিয়ে উন্নয়ন কাজ পরিদর্শনে যান মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। এসময় মেয়রসহ সিসিকের কর্মকর্তারা সড়ক সম্প্রসারণের কাজ শুরু করতে চাইলে তারা বাধা দেন। এনিয়ে আলাপচারিতার একপর্যায়ে সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তাদের উপর হামলা চালায় পরিবহন শ্রমিকরা।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, পরিবহন শ্রমিকদের হামলার পর সিটি করপোরেশনের কর্মীরাও পাল্টা হামলা চালায়। একপর্যায়ে দুই পক্ষ সংঘর্ষে জড়িয়ে পরে। পরে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে চাইলে পুলিশের উপরও হামলা চালায় শ্রমিকরা। এসময় অর্ধশতাধিক গাড়ি ভাঙচুর করা হয়। এবং চৌহাট্টা-আম্বরখানা, চৌহাট্টা-রিকাবীবাজার, চৌহাট্টা-জিন্দাবাজার, চৌহাট্টা-মিরবক্সটুলা সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে পড়ে।
সিলেট সিটি করপোরেশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা আব্দুল আলিম শাহ বলেন, ‘মেয়র, কাউন্সিলর ও ম্যাজিস্ট্রেটদের সাথে আলাপচারিতার একপর্যায়ে পরিবহন শ্রমিকরা আচমকা হামলা চালায়। এসময় কাউন্সিলরসহ সিসিকের অন্তত ৮ জন আহত হয়েছেন।’
তিনি বলেন, ‘হামলার একপর্যায়ে বন্দুক নিয়ে একজন মেয়রের দিকে তেড়ে আসে। পুলিশ সাথে সাথে তাকে আটক করেছে। আমাদের আশঙ্কা মেয়রকে হত্যার উদ্দেশ্যই সে আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে এসেছিলো।’
সিলেট কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এসএম আবু ফরহাদ বলেন, ‘পুলিশ আধাঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। এসময় ১৬ রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছোঁড়া হয়। ঘটনাস্থল থেকে আগ্নেয়াস্ত্রসহ ফয়সল আহমদ ফাহাদ (৩৮) নামে এক ব্যক্তিকে আটক করা হয়েছে।’
ঘটনাস্থলে থাকা সিলেট মহানগর পুলিশের উপ কমিশনার (ট্রাফিক) ফয়সল মাহমুদ বলেন, ‘সরকারি সড়ক দখল করে যানবাহন রাখা হচ্ছে দীর্ঘদিন থেকে। কিন্তু সম্প্রতি সিসিকের উন্নয়ন কাজ শুরু হওয়ায় চৌহাট্টাস্থ এলাকার অবৈধ পরিবহন স্ট্যান্ড সরানোর জন্য বলা হলেও শ্রমিকরা যানবাহন না সরিয়ে বিভিন্ন দাবি জানিয়ে আন্দোলন শুরু করে।’