আজকের সিলেট

সুরমার তীর মুক্ত হচ্ছে প্রভাবশালীদের কবল থেকে

আজকের সিলেট প্রতিবেদক: সাত সমুদ্র তের নদীর দূরত্ব হলেও টেমস আর সুরমা পাড়ের মানুষের সম্পর্ক যেন একই সুতোয় বাঁধা। টেমসপাড়ের মানুষের হাসি-কান্না যেমন সুরমাপাড়ে ঢেউ তুলে, তেমনি সুরমাপাড়ের সুখ-দুঃখে ছুটে আসেন সেখানকার প্রবাসীরা। আর নির্বাচনী উৎসব হলে তো কথাই নেই; দলবেঁধে প্রবাসীরা ছুটে আসেন সুরমাপাড়ের সিলেটে।

তবে সিলেটের সুরমা নদীর তীর যুগের পর যুগ দখল ছিল প্রভাবশালীদের। স্বাধীনতা পরবর্তী সময় থেকে রাজনৈতিক বিভিন্ন দলীয় সরকার, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ও সামরিক শাসনামল অতিক্রান্ত হয়েছে। কিন্তু সুরমা তীরের প্রভাবশালী দখলদারদের সরানো সম্ভব হয়নি।

প্রভাবশালী মহল বিশেষ সিলেট নগর সংলগ্ন সুরমা নদীর তীর দখল করে গড়ে তোলেন দোকান ও হাটবাজার। দেশ স্বাধীনের পর টাউন কমিটিকে বিলুপ্ত করে নামকরণ হয় পৌরসভা। বিলুপ্ত পৌরসভার প্রথম চেয়ারম্যান হন রায় বাহাদুর দুলাল চন্দ্র দেব। আর ২০০২ সালের ২৮ জুলাই পৌরসভা থেকে সিটি করপোরেশন (সিসিক) উন্নীত হয় সিলেট।

এরপর নগর আধুনিকায়নে সিসিকের কয়েক দফা উদ্যোগ ভেস্তে যায়। চারদলীয় জোট সরকারের সময় সার্কিট হাউসের সামনে থেকে কোতোয়ালি থানা পেরিয়ে আটকে যায় সুরমার তীরের সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ। এরই মধ্যে সিসিকের গদি হাত বদল হয়েছে কয়েকবার। কিন্তু কাজিরবাজার সড়ক সংলগ্ন সুরমার তীরের দখল উচ্ছেদ সম্ভব হয়নি। দখলদার প্রভাবশালীরা বহাল থেকেই গেছেন।

সম্প্রতি জেলা প্রশাসনের এক সভায় কাজিরবাজার সুরমার তীর দখলের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এরপর ৭ জুলাই থেকে জেলা প্রশাসন, সিলেট সিটি করপোরেশন ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের যৌথ অভিযান চালায় দখল উচ্ছেদে।

দু’দিনের টানা অভিযানে এই অভিযানে নগরীর ক্বিন ব্রিজ থেকে সেলফি ব্রিজ খ্যাত কাজিরবাজার সেতু পর্যন্ত ৬৩টি বিভিন্ন দালান, পাকা, আধা পাকা, সেমি পাকা দোকান বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়।

জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট খৃস্টফার হিমেল রিছিল সাংবাদিকদের বলেন, অবৈধ দখলদারদের জায়গা খালি করতে নোটিশ দেওয়ার পাশাপাশি তিনদিন আগে মাইকিংও করা হয়েছে। এতে দখলদাররা সাড়া না দেওয়ায় অবৈধ স্থাপনাগুলি গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, নদীর তীরে কোনো অবৈধ স্থাপনা থাকবে না। দখলমুক্ত না হওয়া পর্যন্ত উচ্ছেদ অভিযান চলবে।

সোমবার (৮ জুলাই) দিনভর অভিযানে সিলেটের কাজিরবাজার জাহাঙ্গীরের আস্তানা খ্যাত ভবন, সুরমার তীরে গড়ে তোলা দু’তলা শৌচাগার, কাজিরবাজার মাছ বাজারের একাংশের ৩০টি দোকান গুঁড়িয়ে দেয় প্রশাসন। অভিযানে নেতৃত্ব দেন জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট খৃস্টফার হিমেল রিছিল।

এর আগে রোববার (৭ জুলাই) কাজিরবাজার খেয়াঘাট এলাকায় ৩৩টি অবৈধ স্থাপনা গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। এছাড়া শেখঘাট এলাকায় সুরমার তীর দখল করে তৈরি করা বেশ কয়েকটি কলোনি উচ্ছেদ করা হয় অভিযানে।

আরও সংবাদ

Close