কুলাউড়া সীমান্তের গহীন বনে প্রেমিকের আত্মহত্যা : রাতভর লাশ পাহারায় প্রেমিকা

মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার ভারত সীমান্তবর্তী এওলাছড়া পানপুঞ্জির গহীন জঙ্গল থেকে শনিবার (২৬ ডিসেম্বর) দুপুরে শিপন মালাকার (১৭) নামের এক তরুণের লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ।

শিপন মালাকার উপজেলার পৃথিমপাশা ইউনিয়নের গণকিয়া গ্রামের সিন্ধু মালাকারের ছেলে।

জানা গেছে, একই ইউনিয়নের কানিকিয়ারি গ্রামের মুসলিম ধর্মের মাহমুদ আলীর মেয়ে এনি আক্তারের (১৩) সাথে প্রেমের সর্ম্পক গড়ে ওঠে হিন্দু ধর্মের শিপনের। গত দুই বছরে তাদের সর্ম্পক রূপ নেয় গভীর থেকে গভীরে। গত শুক্রবার (২৫ ডিসেম্বর) এনি পরিবারের সাথে রাগারাগি করে প্রেমিকের হাত ধরে ঘর ছাড়ে।

পরিকল্পনা ছিলো পাহাড়ি এলাকা দিয়ে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে পালাবেন তারা। কিন্তু গহীন জঙ্গলে ঘটলো পরিকল্পনার ছন্দপতন। গহীন অরণ্যে হাঁটতে গিয়ে পা পিছলে টিলার নিচে পড়ে অজ্ঞান হয়ে যান প্রেমিকা। ভোরে যখন জ্ঞান ফেরে, তখন তিনি ওপরে উঠে শিপনের লাশ গাছের সাথে ঝুলতে দেখেন।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সিএনজি চালক শিপন মালাকার সাথে স্থানীয় আলী আমজদ স্কুল এন্ড কলেজের অষ্টম শ্রেণীর ছাত্রী এনি আক্তারের দুই বছর ধরে প্রেমের সর্ম্পক ছিল। বিষয়টি উভয় পরিবার মেনে না নেওয়াতে শুক্রবার পালানোর সিদ্ধান্ত নেয় তারা। বিকেলে শিপন এনিকে তার বাড়িতে নিয়ে যায়।

সন্ধ্যার দিকে তারা দুজনে ভারতে পলায়নের উদ্দেশ্যে সীমান্তবর্তী এওলাছড়া পুঞ্জির গহীনে চলে যায়। সেখানে তারা অনেক সময় অবস্থান করে।

ঘটনাস্থলে লাশ পাহারারত কিশোরী এনি আক্তার বলেন, শুক্রবার বিকেলে শিপন আমাকে বাড়ি থেকে নিয়ে যায়। এরপর রাতে এওলাছড়া পানপুঞ্জির গহীন জঙ্গলে অবস্থান করি। একপর্যায়ে রাত প্রায় ২টায় শিপনের কাছ থেকে পাহাড়ের নিচে আমি ছিটকে পড়ে যাই। তখন থেকে প্রায় তিন ঘন্টা আমি অজ্ঞান ছিলাম। ভোরে শিপনকে অনেক খোঁজাখুঁজি করি। সকালে তার পরনের গেঞ্জি দিয়ে গাছের ডালে ফাঁস লাগিয়ে অবস্থায় দেখতে পাই। এসময় ঘটনাস্থলে নিজে লাশ পাহারা দেই। আমাদের প্রেমের সম্পর্ক দুই বছরের। সকালে তার আমার অভিবাবকদের জানালে তারা পুলিশকে খবর দেয়। পরে পুলিশ ঘনাস্থল থেকে লাশ উদ্ধার করে।

খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে যান পৃথিমপাশা ইউপি চেয়ারম্যান নবাব আলী বাকর খান, কর্মধা ইউপি চেয়ারম্যান এমএ রহমান আতিক, স্থানীয় ইউপি সদস্য সিলভেস্টার পাঠান, হাজী মাকসুদ আলী, আব্দুল মনাফ প্রমুখ।

পৃথিমপাশা ইউপি চেয়ারম্যান নবাব আলী বাকর খান ও কর্মধা ইউপি চেয়ারম্যান এম এ রহমান আতিক বলেন, প্রেমঘটিত মনোমালিন্যের কারণে প্রেমিক শিপন গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আমরা ছুটে যাই এবং পুলিশকে খবর দিই।

কুলাউড়া থানার অফিসার ইনচার্জ বিনয় ভূষন রায় জানান, ঘটনাস্থল থেকে লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এসময় লাশের পাশে পাহারারত অবস্থায় এনি আক্তার নামের এক কিশোরীকে পাওয়া যায়। কিশোরীকে তার পরিবারের জিম্মায় দেওয়া হয়েছে। নিহতের মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করা হয়।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (কুলাউড়া সার্কেল) সাদেক কাওসার দস্তগীর বলেন, নিহতের মৃত্যুর সঠিক কারণ তদন্ত ছাড়া বলা যাচ্ছে না। নিহতের লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে এবং লাশের সঙ্গে পাওয়া কিশোরীকে থানায় এনে জিজ্ঞাসাবাদ করে প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।